প্রতিনিধি, বান্দরবান: খাগড়াছড়ি-রাঙামাটির অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কোনো প্রভাব পড়েনি বান্দরবান জেলায়। সমপ্রীতির এ জেলায় পর্যটকদের ভ্রমণে সরকারের লিখিত কোনো নিষেধাজ্ঞাও নেই। সীমিত পরিসরে বান্দরবান সদরসহ আশপাশের দর্শণীয় পর্যটন ম্পটগুলোও খোলা রয়েছে আগেরমত। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মৌখিকভাবে পর্যটকদের ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে বলে শোনেছি গণমাধ্যমে। কিন্তু লিখিত কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি দাবী পর্যটন ব্যবসায়ীদের।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বান্দরবান জেলা হোটেল ওনার্স এসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক মো: জসিম উদ্দিন বলেন, পর্যটকদের ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করার গুঞ্জন শোনে আমরা পর্যটন ব্যবসায়ী সমন্বয় পরিষদের প্রতিনিধিরা জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করেছি। বিভিন্ন দাবী দাওয়া’সহ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার বরাবরে একটা স্মারকলিপিও দিয়েছি। জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন কোনো ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়নি। পর্যটকদের ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করা হয়েছিল, কিন্তু ভ্রমণকারী পর্যটকদের ভ্রমণে বাঁধা দেয়া হচ্ছেনা। পর্যটকরা মঙ্গলবারও নীলগিরি সড়কে ভ্রমণ করতে দেখাগেছে।
এদিকে পাহাড়ে অস্থিরতা’সহ নানা কারণে দফায় দফায় ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার প্রভাবে বান্দরবানে ধস নেমেছে পর্যটন শিল্পে। দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির বিরুপ প্রভাব পড়েছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট সবধরনের ব্যবসা বাণিজ্যে। এতে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বান্দরবান জেলায় পর্যটন শিল্পে বিনিয়োগকারীরা। ইতিমধ্যে ব্যাংক ঋণ নিয়ে গড়ে তোলা বেশকয়েকটি আবাসিক হোটেল, রিসোর্ট ও রেষ্টুরেন্ট বন্ধ করে দিয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি খ্যাত বান্দরবান জেলা একটা সময়ে সারাবছরই পর্যটকে মুখরিত থাকত। কিন্তু ২০২০ থেকে ২১ সাল পর্যন্ত কোভিড১৯ ক্ষতির পরই ২০২২ সালের মাঝামাঝি থেকে পাহাড়ে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সংঘাত অস্থিরতায় নিরাপত্তা বিবোচনায় ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার প্রভাবে সেই চিরচেনা পর্যটকে ভরপুর দৃশ্যটা যেন বদলে যায়।
এরপর ২০২৩ সালে বন্যা ও ২০২৪ সালে রাজনৈতিক অস্থিরতায় দীর্ঘ মেয়াদি লোকসানে পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
বান্দরবানের ইকোসেন্স ও হলিডে ইন রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকির হোসেন ও বান্দরবান জেলা রেষ্টুরেন্ট মালিক সমিতির সহ-সভাপতি রফিকুল আলম বলেন, জেলার রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলায় পর্যটকদের ভ্রমণে দফায় দফায় নিষেধাজ্ঞা চলছে ২০২২ সাল থেকেই। মধ্যেখানে থানচি খুলে দেয়া হলেও রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলায় অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা চলমান রয়েছে আজও।
একের পর এক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় অনেকটায় পর্যটক শূন্য বলা চলে পুরোটা বান্দরবান। ব্যাংক ঋণ নিয়ে গড়ে তোলা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো টিকিয়ে রাখাটাই হলো বর্তমানে ব্যবসায়ীদের বড় চ্যালেঞ্জ। ইতিমধ্যে বেশকটি আবাসিক হোটেল ও রেষ্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে গেছে।
এদিকে দূর্গম অঞ্চলগুলোতে পর্যটকদের ভ্রমণে বিধিনিষেধ থাকলেও বান্দরবানের অন্যতম পর্যটন স্পট নীলাচল, মেঘলা, চিম্বুক, নীলগিরি, প্রান্তিকলেক, শৈলপ্রপাত, রুপালী ঝর্না, বৌদ্ধ ট্যাম্পল, রামজাদী দর্শণীয় স্থানগুলো ভ্রমণ উন্মুক্ত ছিলো পর্যটকদের জন্য। এতে স্থানীয় পর্যটন সংশ্লিষ্টরা খেয়ে না খেয়ে টানাপোড়েনের মাধ্যমে কোনোরকম ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা রেখেছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই আজ ৮ অক্টোবর থেকে আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত অনিবার্য কারণবশত বান্দরবান জেলায় পর্যটকদের ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন। এটি নিয়ে নতুন করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে পর্যটক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে।
অপরদিকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় উৎসব ও বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের প্রবারণা উৎসব’কে বান্দরবানে আবাসিক হোটেল ও পরিবহনে অগ্রীম বুকিং দেয়া পর্যটকরা ভোগান্তিতে পড়েছে। অনেকে বুকিং বাতিল করায় হোটেল রেষ্টুরেন্ট ও পরিবহন মালিক শ্রমিকরা পড়েছে চরম বিপাকে। জেলায় রয়েছে দুশতাধিক আবাসিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট ও গেষ্টহাউজ, শতাধিক রেষ্টুরেন্ট এবং চার শতাধিকের বেশি ট্যুরিস্ট গাড়ী। এগুলোর সঙ্গে দশ হাজারের বেশি শ্রমিক জড়িত রয়েছে। পর্যটন শিল্প রক্ষায় সীমিত পরিসরে পর্যটন ভ্রমণ খুলে দেয়ার দাবী সংশ্লিষ্টদের।
বান্দরবান পর্যটন ব্যবসায়ী সমন্বয় পরিষদের আহবায়ক ও ট্যুরিস্ট পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মো: নাছিরুল আলম বলেন, পর্যটন শিল্প হচ্ছে পার্বত্য জনপদের মূল অর্থনৈতিক চাকা। দীর্ঘ কয়েকবছর ধরে দেশের অস্থিতিশীল নানা পরিস্থিতির কারণে পর্যটন শিল্প বর্তমানে ধংসের দারপ্রান্তে দাড়িয়েছে। দেশ নতুন করে স্বাধীন হবার পর ঘুরে দাড়ানোর স্বপ্ন দেখছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। বছরের অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত হলো পর্যটনের ভরা মৌসুম। কিন্তু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা না করেই ভ্রমণ থেকে পর্যটকদের বিরত থাকার মৌখিক অনুরোধ করাটা দু:খ জনক। বিষয়টি পর্যটন ব্যবসায়ী সমন্বয় পরিষদ জেলা প্রশাসক ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে দেখা করেছেন। তারা আমাদের জানিয়েছেন পর্যটকদের ভ্রমণে লিখিত কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই বান্দরবান জেলায়।
এ প্রসঙ্গে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন জানান, অনিবার্য কারণবশত আগামী ৮ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত পর্যটকদের বান্দরবান পার্বত্য জেলায় ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। লিখিত কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়নি। এই সিদ্ধান্ত তিন পার্বত্য জেলায় একসঙ্গে দেয়া হয়েছে।