বগুড়ায় সরষের বাম্পার ফলন পেয়েছে চাষিরা। জেলার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে গাছে গাছে সরষের ফুল দেখা গেছে। সরষের ফুল ফোটার পরে ক্ষেতের পাশের পরিত্যক্ত জমিতে বাক্স রেখে মৌমাছি চাষ করা হয়। সরষের ফুলে বসা মৌমাছি থেকে বিশেষ বাক্সের মাধ্যমে মধু সংগ্রহে নেমেছেন মধু সংগ্রহকারীরা। বলা যায়, তারা ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন। ইতোমধ্যে বগুড়ার কয়েকটি উপজেলায় সপ্তাহে ১০ মণ মধু সংগ্রহ করছেন তারা। প্রতি মণ মধু আট থেকে নয় হাজার টাকায় পাইকারি বাজারে বিক্রি করছেন।
সরষে ক্ষেতের পাশে এই মৌমাাছি চাষ ও মধু আহরণ করে বিক্রি করে আর্থিকভাবে দেড়
সহস্রাধিক বেকার যুবকরা স্বাবলম্বী হয়েছেন। এখানকার মধু ও মোম আহরণ শুরু করে হামদর্দসহ বিভিন্ন কোম্পানির কাছে বিক্রি করছেন তারা। ভ্রাম্যমাণ মৌমাছি চাষের ফলে এবারও সরষের ফলনভাবে হবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ। জেলার দুপচাঁচিয়া, আদমদিঘি, শিবগঞ্জ ও শেরপুর উপজেলায় সরষের ক্ষেতে ভ্রাম্যমাণভাবে মৌমাছি চাষ ও মধু আহরণ শুরু হয়েছে।
দুপচাঁচিয়া উপজেলায় তিষিগাড়ি মাঠে ভ্রাম্যমাণভাবে মৌমাছি চাষকারী সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার চান মিয়া জানান, পাঁচ থেকে ছয় বছর আগে তিনি দুপচাঁচিয়া উপজেলার একটি মাঠে প্রথম সরষে ক্ষেতের পাশে ভ্রাম্যমাণভাবে মৌমাছি চাষ ও মধু আহরণ শুরু করেন। তার দেখাদেখি স্থানীয় কিছু বেকার যুবক দুই থেকে তিন বছর ধরে নিজেদের গ্রামের মাঠে সরষের ক্ষেতে মৌমাছি চাষ শুরু করে। চান মিয়া আরও জানান, এ বছরেও সরষের ফুল ফোটার পরে বিভিন্ন মাঠে বিশেষ করে সরষে ক্ষেতের পাশের জমিতে বাক্স বসিয়ে মৌমাছি চাষ শুরু হয়েছে। সব কাঠের বাক্সে একটি রানি মৌমাছি আর বাকি সব পুরুষ মৌমাছি থাকে। মৌমাছিরা সরষের ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে এনে স্থাপিত কাঠের বাক্সের ভেতরে মৌচাকের সৃষ্টি করে। এ বাক্সগুলো প্রতি সপ্তাহে একবার খুলে মধু ও মোম আহরণ করা হয়। প্রতিটি বাক্স থেকে দেড় থেকে দুই কেজি মধু আহরণ করেন চাষিরা।
জেলার আদমদিডহ উপজেলায় মধু সংগ্রহকারীদের মধ্যে মৌমাছিচাষি রংপুর কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের এমএ পাস করা ছাত্র কুড়িগ্রাম উলিপুরের মেহেরুল ইসলাম জানান, তিনি শখের বসে ছাত্রজীবনে মৌচাষের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। এরপর দিনাজপুর বিসিক থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ব্যবসায়িকভাবে মৌচাষ করে আসছেন। বর্তমানে তার ইনসাফ মৌ খামারে ৬২টি বাক্স আছে। তিনি আরও জানান, যুগোপযোগী ১০টি মৌমাছির ফ্রেমে ধারণকৃত মেশিন দিয়ে মধু নিষ্কাশন করেন। মৌমাছির বংশবিস্তার, মধু সংগ্রহ ও ফ্রেম থেকে যে মোম পাওয়া যায় তার সবই বিক্রি করা যায়। ফলে মৌমাছি চাষ বেশ লাভজনক।
মধু সংগ্রহকারী রাজশাহী কলেজের প্রভাষক ফাইজার রহমান জানান, মৌচাষের প্রশিক্ষণ নিয়ে ব্যবসায়িকভাবে মধু সংগ্রহ করছেন। সরষের পাশাপাশি লিচু, কালো জিরা, আমের মুকুল, ধনিয়াসহ বিভিন্ন ফুল গাছের আশপাশে মৌমাছির বাক্স বসানো হয়। বেশি মধু সংগ্রহের আশায় অনেক মধুচাষি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে সুবিধাজনক স্থানে বাক্স বসায়। আবহাওয়া ভালো থাকলে সপ্তাহে সাত থেকে আট মণ মধু সংগ্রহ করতে পারবেন তারা। তিনি আরও জানান, সরকারিভাবে মৌচাষিদের সহযোগিতা করা হলে তারা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বগুড়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক মতিয়ার রহমান জানান, জেলার কয়েকটি উপজেলায় সরষের ক্ষেতের পাশে ভ্রাম্যমাণ মৌমাছি চাষ করা শুরু হয়েছে। এভাবে মৌমাছি চাষ করার ফলে সরষের ফলন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখানকার মধু ও মোম রাজধানীর অনেক প্রতিষ্ঠান কিনছে। এতে অনেক বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান হয়েছে। মৌমাছি চাষে উদ্বুদ্ধ করতে জেলার তিন শতাধিক যুবককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
আলমগীর হোসেন