সমুদ্রের বুকে মাথা তুলে রাখা প্রবাল দ্বীপের সৌন্দর্য মুগ্ধ করে যে কোনো পর্যটককে। বিশ্বে আকর্ষণীয় কিছু দ্বীপ রয়েছে, যা ভ্রমণপিপাসুর আনন্দের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তবে কিছু কিছু দ্বীপ রয়েছে, যা পর্যটকদের আনন্দের বদলে অমঙ্গল ডেকে আনে। তাই এসব দ্বীপ থেকে দূরে থাকাই শ্রেয়। এমনি ভয়ংকর চার দ্বীপের কথা জেনে রাখতে পারেন।
পুতুলের দ্বীপ
মেক্সিকোর এ দ্বীপটির স্থানীয় নাম ‘লা ইলা ডি লাস মিনিকেস’। বাংলা অনুবাদ করলে দাঁড়ায় পুতুলের দ্বীপ। আক্ষরিক অর্থে এ দ্বীপের বাসিন্দারা বিভিন্ন আকারের পুতুল। পর্যটক তো দূরে থাক, অবসর কাটাতে স্থানীয়রাও আসতে চায় না এ দ্বীপে। কারণ দ্বীপটির গাছে গাছে ঝুলে থাকা ভুতুড়ে পুতুল মানুষকে নিরুৎসাহিত করে এ দ্বীপে যেতে। ঝুলে থাকা পুতুলগুলো দেখলেই গা ছমছম করে। এর পেছনে অবশ্য একটি করুন কাহিনী রয়েছে। অনেক বছর আগে ডন জুলিয়ান সান্টানা নামে একজন কেয়ারটেকার থাকতেন এ দ্বীপে। একদিন দ্বীপের পাশে ছোট্ট একটি মেয়েকে ভাসতে দেখেন তিনি। মেয়েটিকে বাঁচানোর চেষ্টায় কোনো ত্রুটি রাখেননি তিনি। কিন্তু মেয়েটি মারা যায়। মেয়েটির পাশেই একটি পুতুল ভাসতে দেখে সেটিকে স্মৃতি হিসেবে গাছে ঝুলিয়ে রাখেন তিনি। শিশুটির মৃত্যু তার মধ্যে এতটাই প্রভাব ফেলে যে এরপর থেকে প্রায়ই গাছের ডালে পুতুল ঝুলিয়ে রাখতেন তিনি। দ্বীপটির পাশেই ডুবে মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত করে যান এ কাজ। আর এখন স্থানীয় লোকজন গাছের ডালে পুতুল ঝুলিয়ে দিয়ে সে ধারাকে বজায় রাখার চেষ্টা করছে।
সাপের দ্বীপ
ব্রাজিলের উপকূলে প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে ছোট্ট একটি দ্বীপ ইলা ডা কিইমডে গ্রান্ডে। কিন্তু এ দ্বীপটি বেশি পরিচিত আইল্যান্ড অব স্নেক বা সাপের দ্বীপ নামে। সোনালি চোখা মাথাবিশিষ্ট পিট ভাইপার সাপ, যা খুবই বিষাক্ত। এটি শুধু এ দ্বীপেই রয়েছে। দ্বীপের প্রায় সব জায়গায় এদের দেখতে পাওয়া যায়। এরা সংখ্যায় এত বেশি যে প্রতি বর্গমিটারে একটি করে সাপ বাস করে। ধারণা করা হয় এ দ্বীপে প্রায় চার লাখেরও বেশি সাপ রয়েছে। বিষাক্ত সাপে ঠাসা এ দ্বীপে কোনো মানুষই যেতে আগ্রহী নয়। বিভিন্ন প্রজাতির সাপ ও সাপের ছোবল থেকে মানুষের মৃত্যু ঠেকাতে বর্তমানে এ দ্বীপটিতে জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ইসোলা দেলা গাইয়োলা
ছোট্ট একটি দ্বীপ, ছবির মতো একটি ভিলা। এ দ্বীপটির মালিক হতে পারা সৌভাগ্যের ব্যাপারই বটে। তবে সবার কাছে দ্বীপটি অভিশপ্ত। ১৯ শতকের শুরুর দিকে এ দ্বীপে বাস করতেন এক সন্ন্যাসী। একদিন এক অবস্থাসম্পন্ন জেলে এ দ্বীপটি কিনে ভিলা তৈরি করেন। ফলে ওই দ্বীপ থেকে বিতাড়িত হয়ে পড়ে ওই সন্ন্যাসী। দ্বীপের প্রথম মালিক লুইগি তার মাছের ব্যবসায় ক্ষতি সামলাতে না পেরে দ্বীপটি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন। এর পরের মালিক হ্যান্স ব্রাউন। তবে কিছুদিন পর কম্বলের মধ্যে মোড়ানো অবস্থায় তাকে মৃত পাওয়া যায়। তার মৃত্যুর কিছুদিনের মধ্যে স্ত্রীও সমুদ্রে ডুবে মারা যান। এর পরের মালিক এক ধনী জার্মান গাড়ি ব্যবসায়ী যিনি হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। আবার পরের মালিক এক ওষুধ ব্যবসায়ী যিনি পাগলা গারদে আত্মহত্যা করেন। এরপর আসেন জার্মান স্টিল ব্যবসায়ী ব্যারন কার্ল পল। তার ব্যবসাতেও নামে ধস। ভিলা ছাড়তে হয় তাকে। এভাবে পরপর কয়েকজন এ দ্বীপটি কিনতে থাকেন। সর্বশেষ দ্বীপটি কিনেন জিয়ান পাসকেল নামে এক ইন্স্যুরেন্স ব্যবসায়ী, যিনি দেউলিয়া হয়ে জেলে যেতে বাধ্য হন। এতসব ঘটনার পর স্থানীয়রা তো বটেই বাইরের মানুষও দ্বীপটি কিনতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। কেননা এ দ্বীপের মালিক যিনিই হচ্ছেন, কোনো না কোনোভাবে শেষ হয়ে যাচ্ছেন তিনি। তাই বর্তমানে এ দ্বীপটিতে মানুষের যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
রামরি দ্বীপ
রামরি দ্বীপ কুমিরের দ্বীপ। রামরি দ্বীপের জলাভূমিতে লোনাপানির কুমির ছিল সংখ্যায় অগুনতি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ভাগ্যাহত সৈনিকরা যেচে পড়ে যেন হাজির হলো ক্ষুধার্ত কুমিরের সামনে। ধারণা করা হচ্ছে, এক হাজার সেনার মধ্যে জলাভূমিটি পার হতে পেরেছিল মাত্র ২০ জন। বাকি সবাই কুমিরের পেটে গেছে। এরপর থেকে ওই দ্বীপ নিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করতে শুরু করে। যদিও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বেশিরভাগ কুমিরই এখন লোপ পেয়েছে।