শেয়ার বিজ ডেস্ক; আজ ভয়াল ২৫ মার্চ। জাতীয় গণহত্যা দিবস। গত বছর থেকে ‘জাতীয় গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসা দিনটি উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী দিয়েছেন।
জাতীয়ভাবে আজ রাতে সারা দেশে এক মিনিটের জন্য (গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় স্থাপনা-কেপিআই ও জরুরি স্থাপনা ব্যতীত) প্রতীকী নিষ্প্রদীপ মহড়া (ব্ল্যাক আউট) পালিত হবে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক পত্রে বলা হয়েছে, ২৫ মার্চ রাত ৯টা থেকে ৯টা ১ মিনিট সারা দেশে এই প্রতীকী নিষ্প্রদীপ মহড়া কর্মসূচি পালিত হবে। এছাড়া জাতীয়ভাবে গণহত্যা দিবস পালনের অংশ হিসেবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় আজ সকাল ১০টায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘রক্তাক্ত ২৫ মার্চ গণহত্যার ইতিহাস’ শীর্ষক শিরোনামে আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।
২৫ মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’ পালন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আজ বিকাল ৪টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। এতে সভাপতিত্ব করবেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির যৌথ উদ্যোগে ‘গণহত্যা দিবস’ পালন করা হবে। এ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতি চিরন্তন চত্বরে আয়োজন করা হয়েছে নানা অনুষ্ঠানের।
অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছেÑআজ সন্ধ্যা ৭টায় স্মৃতি চিরন্তনে মোমবাতি প্রজ্বালন, ডকুমেন্টারি প্রদর্শন ও আলোচনা সভা। এছাড়া বাদ জোহর মসজিদুল জামিয়ায় ২৫ মার্চের রাতে নিহতদের স্মরণে বিশেষ মোনাজাত এবং বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে অনুষ্ঠিত হবে প্রার্থনা সভা। রাত ৯টা থেকে ৯টা ১ মিনিট পর্যন্ত ২৫ মার্চ কালরাত স্মরণে জরুরি স্থাপনা ছাড়া সব জায়গায় ব্লাক আউট কর্মসূচি পালন করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলও এ উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছেÑকালরাতে নিহত শহীদদের স্মরণে জগন্নাথ হল পরিবারের পক্ষ থেকে হল প্রাঙ্গণে স্মরণ অনুষ্ঠান। স্মরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছেÑবিকাল ৪টা ১ মিনিটে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, সন্ধ্যা ৬টা ১ মিনিটে শহীদদের স্মরণে স্থাপনা শিল্পের প্রদর্শন (ইনস্টলেশন আর্ট), দেশাত্মবোধক গান ও কবিতা আবৃত্তি, নাটক (কালরাত্রি), রাত ৯ টা ১ মিনিটে ব্ল্যাকআউট এবং গণসমাধিতে মোমবাতি প্রজ্বালন ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন প্রভৃতি।
রোকেয়া হলের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে কালরাতে রোকেয়া হলের অভ্যন্তরে যেসব নারী ও কর্মচারী পাকিস্তানি সামারিক বাহিনী কর্তৃক নির্যাতিত ও নিপীড়িত হয়েছিলেন, তাদের স্মরণে প্রথমবারের মতো রাত ৮টায় রোকেয়া হল পরিবার এক স্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) আজ সন্ধ্যা ৬টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচির আয়োজন করেছে। দলের সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুসহ অন্য নেতারা এতে যোগ দেবেন। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল যৌথভাবে গণহত্যা দিবস স্মরণে আজ সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে পুরানা পল্টনের মুক্তিভবন থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তন পর্যন্ত আলোর মিছিলের আয়োজন করেছে।
গত বছরের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস পালনের প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হওয়ার পর থেকেই দিনটি জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
১৯৭১ সালের এইদিনে বাঙালি জাতির জীবনে এক বিভীষিকাময় রাত নেমে আসে। মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কাপুরুষের মতো তাদের পূর্বপরিকল্পিত অপারেশন সার্চলাইটের নীলনকশা অনুযায়ী আন্দোলনরত বাঙালিদের কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়ার ঘৃণ্য লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
রাষ্ট্রপতির বাণী
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ২৫ মার্চের গণহত্যা শুধু বাংলাদেশেরই নয়, বিশ্বমানবতার ইতিহাসেও একটি কালো অধ্যায়। ২৫ মার্চ কালরাতে নিহত সব শহিদকে তিনি সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করেন। এছাড়া তিনি কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন জাতীয় চার নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক-সমর্থকসহ সব স্তরের জনগণকে, যাদের অসামান্য অবদান ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে জাতি স্বাধীনতা অর্জন করেছে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও চেতনাকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে একটি অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অভিযাত্রায় অংশ নিতে তিনি দল-মত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রীর বাণী
গণহত্যা দিবস উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালন প্রকৃতার্থে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহিদের আত্মাহুতির প্রতি জাতির চিরন্তন শ্রদ্ধার স্মারক এবং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নারকীয় হত্যাকাণ্ডের সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধা জানান এবং জাতীয় চার নেতাকে স্মরণ করেন। এছাড়া তিনি শ্রদ্ধা জানান মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহিদ এবং দুই লাখ নির্যাতিত মা-বোনকে। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদ পরিবারের সদস্যদের প্রতি তিনি সমবেদনা জানান। সেইসঙ্গে সব শহিদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি গণহত্যা দিবস উপলক্ষে গৃহীত সব কর্মসূচির সাফল্য কামনা করেন।