শেয়ার বিজ ডেস্ক: আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে থাকায় জনপ্রিয়তা হারাতে শুরু করছেন যুক্তরাষ্ট্র, চীন-জাপানের রাষ্ট্রপ্রধানরা। তেলের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য ওপেক প্লাস কে চাপ প্রয়োগও করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। কিন্তু বাইডেনের ডাকে সাড়া দেয়নি ওপেকও। এ অবস্থায় জ্বালানির দাম কমাতে ‘স্ট্র্যাটেজিক পেট্রোলিয়াম রিজার্ভ’ (এসপিআর) তহবিল থেকে কয়েক মিলিয়ন ব্যারেল তেল বাজারে ছাড়ার ঘোষণা দেন বাইডেন। আর তাতে একাত্ব প্রকাশ করেন চীন, ভারত, জাপান, যুক্তরাজ্য ও দক্ষিণ কোরিয়া। মঙ্গলবার হোয়াইট হাউস থেকে বাইডেন এ ঘোষণার পর বুধবার আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমতে শুরু করেছে। খবর: রয়টার্স, বিবিসি, গার্ডিয়ান।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন এক ঘোষণায় জানান, জ্বালানি তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমেরিকা কৌশলগত মজুত তহবিল থেকে ৫০ মিলিয়ন (৫ কোটি) ব্যারেল তেল বিশ্ববাজারে ছাড়বে। ভারতও নিজেদের মজুত থেকে ৫০ লাখ ব্যারেল ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সম্প্রতি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় রোষানলে পড়েন জো বাইডেন। এতে জনপ্রিয়তাও হ্রাস পায় বাইডেনের। ফলে আগামী বছর মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে মজুত থেকে কয়েক মিলিয়ন ব্যারেল তেল ছাড়ার পরিকল্পনা করেন বাইডেন। প্রসঙ্গত, গত সেপ্টেম্বরে তেলের দাম সাত বছরের মধ্যে রেকর্ড বৃদ্ধি পায়।
এদিকে হোয়াইট হাউসে বাইডেন বলেন, আপনারা বিশ্বাসও করতে পারবেনা যে, তেলের দাম দ্রুতই কমে যাবে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে কয়েকটি দেশ সম্মত হয়েছে যে, তাদের রিজার্ভ থেকে বাজারে তেল ছেড়ে দেবে।
এর আগে গত মাসে তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংগঠন ওপেক ও ওপেক প্লাসের সভায় তেল উৎপাদর বাড়ানোর জন্য বাইডেন অনুরোধ করেন। কিন্তু তাতে তারা সাড়া দেয়নি। ফলে ওপেকভুক্ত দেশগুলোকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বাইডেন নতুন এ সিদ্ধান্ত নেন। রফতানিকারকরা উৎপাদন বাড়ালে বিশ্ববাজারে তেলের দাম কিছুটা কমত বলে প্রত্যাশা ছিল।
কয়েকদিন আগে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ৮৬ ডলারে পৌঁছেছিল। পরে তা কমে ৭৯ ডলারে এলেও মঙ্গলবার ফের তা ৮২ ডলারে উঠে যায়। মঙ্গলবার বিশ্ববাজারে অতিরিক্ত তেল ছাড়ার ঘোষণার পর গতকাল কমে তা ৭৮.৪১ ডলারে নেমে আসে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম আরও কমে আসবে।
উল্লেখ্য, মার্কিন প্রশাসন এর আগে তিনবার এসপিআর থেকে তেল বিক্রির অনুমোদন দিয়েছিল। প্রথমবার ১৯৯১ সালে উপসাগীয় যুদ্ধের সময়, এরপর ২০০৫ সালে হ্যারিকেন ক্যাটরিনার পর এবং সবশেষ ২০১১ সালে ওপেক সদস্য লিবিয়ায় যুদ্ধ চলার সময় এসপিআর থেকে তেল নেয়া হয়েছিল। তবে এবারই প্রথম বিশ্বের বৃহত্তম তেল ভোক্তাদের সঙ্গে সমন্বিতভাবে এসপিআর ব্যবহারের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
রয়টার্সের তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্র আগামী কয়েক মাসে তিন কোটি ২০ লাখ ব্যারেল তেল বিভিন্ন কোম্পানিকে ধার দেবে। একই সঙ্গে কংগ্রেসের অনুমোদন দেয়া এক কোটি ৮০ লাখ ব্যারেল তেল বিক্রি চলবে।
মার্কিন মিত্রদের মধ্যে ভারত জানিয়েছে, তারা এসপিআর থেকে ৫০ লাখ ব্যারেল তেল বাজারে ছাড়বে। যুক্তরাজ্য ঘোষণা দিয়েছে, তারা স্বেচ্ছায় ১৫ লাখ ব্যারেল বাজারে ছাড়ছে।
দক্ষিণ কোরিয়া জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য মিত্রদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পর তাদের এসপিআর ব্যবহারের পরিমাণ ও দিনক্ষণ জানিয়ে দেয়া হবে।
জাপান তাদের ৪২ লাখ ব্যারেল মজুত তেল ব্যবহারের অনুমতি দেবে। আর চীন সবার আগেই মজুত তেল বাজারে ছাড়ার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে।
বিশ্বের শীর্ষ কয়েকটি তেল ভোক্তা দেশ একসঙ্গে এসপিআর ব্যবহারে রাজি হওয়ায় বিশ্ববাজারে তেলের দাম আরও কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।