Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 10:29 pm

মজুরি আন্দোলনে নিহতদের ন্যায়বিচার ও ক্ষতিপূরণ দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক : মজুরি আন্দোলনে প্রাণ হারানো চার শ্রমিকের জন্য ন্যায়বিচার ও ক্ষতিপূরণ দাবিতে মিছিল ও সমাবেশ আয়োজন করে বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি। একই সঙ্গে ‘গ্রেড বৈষম্য, ছাঁটাই ও টার্গেটের চাপ’ বন্ধ এবং অবিলম্বে সব শ্রমিক ও নেতৃত্বের বিরূদ্ধে ‘মিথ্যা মামলা’ প্রত্যাহারের দাবিও তুলে ধরেন সংগঠনের নেতারা।

গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের আয়োজিত মিছিল ও সমাবেশে এসব দাবি জানান সংগঠনের নেতারা। বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে ওই মিছিল ও সমাবেশ আয়োজন করা হয়।

সমাবেশে সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার বলেন, সরকার ঘোষিত নতুন মজুরি পোশাক শ্রমিকরা চলতি জানুয়ারি থেকে পেতে শুরু করছে। প্রাপ্তির শুরুতেই শ্রমকিরা আরকে দফা সংকট এবং বঞ্চনার শিকার হয়েছে। একেতো ৫ বছর পর মজুরি কাক্সিক্ষত হারে বাড়েনি। শ্রমিকরা ২৫ হাজার দাবি করলেও নির্ধারিত হয়েছে ১২ হাজার ৫০০ টাকা। যাতে এই বাজারে চলা কঠিন। ইতোমধ্যে নির্ধারিত মজুরিও বিভিন্ন কারখানায় কার্যকর হয়নি। সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে যোগ হয়েছে গ্রেড ভেদে শ্রমিকদের ঠকানোর ব্যবস্থা।

তিনি বলেন, গ্রেড কমানোর কথা বলে মালিকরা চতুর্থ গ্রেডে যে হারে মজুরি বাড়িয়েছে সেই সমানহারে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় গ্রেডে বৃদ্ধি না করে ইচ্ছা মতো মজুরি দিচ্ছে। ফলে জ্যেষ্ঠ ও দক্ষ শ্রমিকরা বঞ্চিত হচ্ছে। কয়েক বছর ধরে কাজ করা শ্রমিকদের গ্রেডে এমনিতেই ইনক্রিমেন্টের কারণে বৃদ্ধি পায় মজুরি। কিন্তু ঘোষিত মজুরির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়েনি মজুরি। নেতারা অবিলম্বে সকল গ্রেডে জ্যেষ্ঠতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে সমান হারে সব গ্রেডে মজুরি বৃদ্ধির নিশ্চিত করার দাবি জানান।

তিনি আরও বলেন, মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করার কারণে শ্রমিক গ্রেপ্তার মামলা-নির্যাতনেই মালিকরা থেমে থাকেনি। শুরু হয়েছে বিভিন্ন কারখানায় ছাঁটাই, টার্গেটের ভয়াবহ চাপ এবং বিনা ওভারটাইমে খাটানো বা ‘ফাও’ খাটানো। মজুরি বৃদ্ধির সঙ্গে কাজের চাপ বৃদ্ধিতে অমানবিক অবস্থা তৈরি করা হয়েছে। এস ময় টার্গেটের চাপ বৃদ্ধি, ছাঁটাই নির্যাতন বন্ধ করে ভয় মুক্ত সুষ্ঠু কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বাবুল হোসেন বলেন, ‘গ্রেপ্তার হওয়া সব নেতা ও শ্রমিকদের ওপর চাপানো মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। একই সঙ্গে জামিনে মুক্ত হওয়া সব শ্রমিককে কারখানায় কাজে বহাল করতে হবে। তাদের পাওনা এবং ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।’

এ সময় অন্যান্য নেতারা আরও বলেন, মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনে মোট চারজন প্রাণ হারিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচারের বদলে ধামাচাপার চেষ্টা হয়েছে। নিহত পরিবারকে সামান্য কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে তাদের মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। দারিদ্র্যের কারণে এই শ্রমিকদের পরিবারের কেউ কেউ মামলা করার সুযোগ পায়নি। এ সময় তারা অবিলম্বে মজুরি আন্দোলনে প্রাণ হারানো শ্রমিকের জন্য ন্যায়বিচার ও ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।

এ সময় সংগঠনের সহসভাপ্রধান অঞ্জন দাস, সাংগঠনিক সম্পাদক প্রবীর সাহা, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জিয়াদুল ইসলাম, সহ-প্রচার সম্পাদক হযরত বিল্লাল শেখ, কেন্দ্রীয় নেতা ও রানা প্লাজা শাখার নেতা রুপালি আক্তার, নারীবিষয়ক সম্পাদক শাহীদা আক্তার ও আঞ্চলিক নেতারা বক্তব্য দেন।