পোশাক খাতের ন্যূনতম মজুরি নিয়ে চলমান শ্রমিক অসন্তোষের মধ্যে কোথাও সহিংসতার আশঙ্কা দেখা দিলে কারখানা বন্ধ করে দেয়ার কথা বলেছেন তৈরি পোশাক শিল্পমালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে সাংবাদিকদের এ কথা জানান সংগঠনের সভাপতি। তিনি বলেছেন, সরকার নভেম্বরের মধ্যে নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা করবে। ডিসেম্বর থেকে তা বাস্তবায়ন করা হবে। তবে সহিংসতা হলে কারখানা বন্ধ করে দেয়া হবে।
গাজীপুরে কয়েকটি শিল্পকারখানায় শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করছেন কয়েক দিন ধরে। এ নিয়ে গতকাল বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে এক জরুরি সভায় বসেন তৈরি পোশাক কারখানার মালিকেরা। সেখানে তারা শ্রম আইনের ১৩(১) ধারা বাস্তবায়নের কথা জানান। তারা বলছেন, পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা বিশৃঙ্খলায় অংশ নিয়ে কাজ বন্ধ রাখলে কিংবা বিশৃঙ্খলার কারণে কারখানা বন্ধ রাখলে আইন অনুযায়ী ‘কাজ নেই, মজুরি নেই’ নিয়ম চালু করবেন তারা। এই মধ্যে কয়েকটি কারখানায় তা কার্যকর করা শুরু হয়েছে।
সভায় বিজিএমইএ সভাপতি বলেছেন, ‘শ্রম আইন অনুসারে এখন পর্যন্ত শ্রমিকদের মজুরি ও বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) হচ্ছে। নতুন মজুরি নির্ধারিত হলে সেটিও মানা হবে। আগামী ১ ডিসেম্বর থেকেই নতুন কাঠামোয় মজুরি দেয়া হবে। ফলে সেই সময়ের আগেই এ ধরনের আন্দোলন, সহিংসতা ও ভাঙচুর অগ্রহণযোগ্য। এগুলো মেনে নেয়া যায় না।
স্বীকার করতে হবে পোশাক খাতের অর্জনকে কিছুটা ম্লান করেছে মজুরি নিয়ে মালিক-শ্রমিকদের মতপার্থক্য। মজুরি নিয়ে অনড় অবস্থানের কারণে সমালোচিত হয়েছে মালিকপক্ষ। মজুরির সঙ্গে নিয়মিতভাবে মূল্যস্ফীতি সমন্বয় করতে চান জানিয়ে মালিকরা বলে আসছেনÑবাস্তবতা বিবেচনা না করে পোশাক শ্রমিকরা বেশি দাবি করছেন। যেহেতু চলতি মাসেই মজুরি নির্ধারণ করা হবে এবং তা আগামী মাস থেকেই কার্যকর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন শিল্পমালিকরা, তাই আন্দোলন না করে ধৈর্য ধারণ করাই শ্রেয়।
আমরা বিশ্বাস করি, সরকার নিত্যপণ্যের বাজারদর, মূল্যস্ফীতি ও সংশ্লিষ্ট সব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে নতুন মজুরিকাঠামো নির্ধারণ করবে। গেজেট প্রকাশের পরই নতুন বেতন কার্যকর হবে এবং ন্যূনতম মজুরি নিয়ে বিরোধের অবসান ঘটবে। দেশের পোশাক খাতে এর প্রভাব পড়বে বলেই প্রত্যাশা। মালিকপক্ষ যথাসময়ে ন্যায্য বেতন, ভাতা প্রভৃতি পরিশোধের পাশাপাশি সুষ্ঠু কর্মপরিবেশ, বিশুদ্ধ পানিসহ শ্রম আইনে বর্ণিত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করবে বলেও প্রত্যাশা। শ্রমিকরাও দায়িত্ব পালনে যত্নবান থাকবেন আশা করি। শ্রম আইন অনুযায়ী পাঁচ বছর অন্তর মজুরিকাঠামো পর্যালোচনার বিধান রয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারকেও যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। বর্তমানে মজুরি কাঠামো অনুযায়ী চাকরিতে প্রবেশকালে মাত্র আট হাজার টাকা বেতন দেয়া হয়। এ বেতন দিয়ে কোনো কর্মীর পক্ষেই জীবনযাপন করা সম্ভব নয়। নতুন মজুরি কাঠামোয় তা যেন যৌক্তিক হয়, সরকারকেও তা বিবেচনা করতে হবে। রপ্তানির মাধ্যমে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার বড় অংশই আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। এটি এগিয়ে নিতে হলে মালিক-শ্রমিকের সুসম্পর্ক থাকা অতি গুরুত্বপূর্ণ। দেশের স্বার্থেই সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ খাতকে এগিয়ে নেয়ার দায়িত্ব আমাদের সবার।