সাইদ সবুজ, চট্টগ্রাম: গাজীপুরের আমদানিকারক মতিন স্পিনিং মিল্স লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি ফ্রান্স থেকে চার লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার মূল্যের ব্র্যান্ড নিউ প্যানেল বোর্ড আমদানির ঘোষণা দেয়। সে মোতাবেক ব্যাংকক নামক একটি জাহাজে করে পণ্যগুলো চট্টগ্রাম বন্দরে এলেও চালানটি লক করে চট্টগ্রাম কাস্টম কর্তৃপক্ষ। পরে শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করে দেখা যায়, আমদানিকারক ঘোষিত পণ্যের বিপরীতে অন্য পণ্য নিয়ে এসেছে, যাতে এক কোটি ৩৫ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস সূত্রে জানা যায়, মতিন স্পিনিং মিল্স লিমিটেড নামের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানটি ফ্রান্স থেকে ৭২ হাজার ২২৮ কেজি ওজনের ব্র্যান্ড নিউ প্যানেল বোর্ড আমদানির ঘোষণা দেয়। পণ্যগুলো খালাসের জন্য ২৩ জুন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে বিল অব এন্ট্রি (বি/ই) দাখিল করে। কিন্তু চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কাছে গোপন সংবাদ থাকায় চালানটি অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে বি/ই লক করে অডিট ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্চ (এআইআর) শাখা। তারপর ১২ জুলাই শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করে দেখা যায়, আমদানিকারক ব্র্যান্ড নিউ প্যানেল বোর্ড ঘোষণায় প্যানেল ফ্রেম, সার্কিট ব্রেকার, রিলে, অন্যান্য সুইচ এবং প্যানেল বোর্ডের আনুষঙ্গিক দ্রব্য নিয়ে এসেছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের এআইআর শাখার কর্মকর্তারা জানান, আমদানিকারকের আমদানিকৃত পণ্যগুলো অবৈধ নয়, তবে ভুল এইচএস কোড উপস্থাপনের মধ্যেমে বৃহৎ অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকির চেষ্টা করেছে আমদানিকারক। তারা জানান, আমদানিকারকের ঘোষিত এইসকোর্ড (৮৫৩৭.১০.৯০) অর্থাৎ ব্র্যান্ড নিউ প্যানেল বোর্ড। এই এইচএস কোডের বিপরীতে সরকার রাজস্ব পায় মাত্র এক শতাংশ। অন্যদিকে তাদের আমদানিকৃত স্বয়ংক্রিয় সার্কিট ব্রেকার (৮৫৩৬.২০.০০) এই এইচএস কোডের বিপরীতে সরকার রাজস্ব পায় ১০ শতাংশ। এছাড়া প্যানেল ফ্রেম (৮৩৩৮.১০.০০) ও রিলে (৮৫৩৬.৪১.০০) এই এইচএস কোডের পণ্যগুলোয়ও ১০ শতাংশ করে শুল্ক পরিশোধ করতে হয়। তবে অন্যান্য সুইচ (৮৩৩৬.৫০.০০) ও প্যানেল বোর্ডের আনুষঙ্গিক (৮৫৩৬.৯০.০০) এই এইচএস কোডের বিপরীতে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক পরিশোধ করতে হয়।
এআইআর কর্মকর্তার আরও জানান, পণ্যচালানটি কায়িক পরীক্ষায় পাঁচটি এইচএস কোড পরিবর্তন করা হয়। এক্ষেত্রে ‘কাস্টমস আইন ১৯৬৯’-এর সেকশন-৩২-এর আওতায় অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, যা একই আইনের সেকশন-১৫৬(১)-এর টেবিলের ক্লস-১৪ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য। তাই আইন ও বিধি অনুযায়ী সঠিক এইচএস কোড ও যথাযথ শুল্কায়নযোগ্য মূল্যে শুল্কায়ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট সেকশনকে (সেকশন-৯-সি) অনুরোধ করা হয়েছিল।
এ বিষয়ে সেকশন-৯(স)-এর কর্মকর্তারা জানান, পণ্যচালানটিতে গোপন সংবাদ থাকায় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের এআইআর কর্তৃক বি/ই করা হয়। পরে সংশ্লিষ্ট সিঅ্যান্ডএফ প্রতিনিধির সহযোগিতায় এআইআর কর্মকর্তারা চালানটি শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করেন। পরীক্ষাকালে কোনো সম্পূর্ণ প্যানেল বোর্ড পাওয়া যায়নি। পরীক্ষাকালে সম্পূর্ণ বিযুক্ত/আলাদা অবস্থায় পাওয়া যায়। পণ্যগুলোর সমন্বয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট প্যানেল বোর্ড তৈরি হবে না, যা আলাদা আলাদ এইচএস কোডে শুল্কায়ন হবে। ফলে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এক কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যাংক গ্যারান্টি দিয়ে পণ্য ছাড় করতে বাধ্য হয়েছে।
চালানটি আমদানির জন্য এলসি করা হয়েছিল দি সিটি ব্যাংক লিমিটেড থেকে এবং চালানটি খালাসের জন্য সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট হিসেবে আমদানিকারকের পক্ষে কাজ করেছে চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠান দুলাল ব্রাদার্স লিমিটেড।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের মুখপাত্র উপ-কমিশনার (প্রিভেন্টিভ) সালাউদ্দিন রিজভী শেয়ার বিজকে বলেন, ‘চালানটি আমদানির বিপরীতে আমদানিকারক মিথ্যা ঘোষণায় আশ্রয় নিয়েছে। এতে সরকারের রাজস্ব হারানোর শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। তাই চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার আওতায় চালানটির সঠিক এইচএস কোড নির্ণয় করে শুল্কায়নের ব্যবস্থা করেছে। এতে সরকারের রাজস্ব সংরক্ষণ হয়েছে। তবে আমাদের দেশে ভালো আমদানিকারকের সঙ্গে কিছু দুষ্ট আমদানিকারক আছে। এসব দুষ্ট আমদানিকারকের জন্য ভালো আমদানিকারকরা সমস্যায় পড়ে। তাই ভালো আমদানিকারদের স্বার্থ রক্ষা এবং সরকারের রাজস্ব ফাঁকি রোধ করতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কাজ করে যাচ্ছে।’