কুষ্টিয়া সদর উপজেলার মধুপুরের কলার হাটটি দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় কলা বেচাকেনার হাট হিসেবে পরিচিত। হাজার হাজার কলার ছড়িতে বিশাল এ হাটটি সয়লাব হয়ে যায়। ভোরের আলো ফুটতেই এখানে জড়ো হন আশেপাশের পাঁচ জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছোট-বড় কলা ব্যবসায়ী। ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগমে মুখর হয়ে ওঠে হাটটি। কাঁচা কলার গাঢ় সবুজ আভায় আচ্ছাদিত হয়ে যায় পুরো হাট। পাইকাররা কলা কিনে নিয়ে যান দেশের বিভিন্ন হাট-বাজারে।
২৫ বছর ধরেই এভাবে চলছে মধুপুরের এই কলার হাট। এখান থেকে আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা কলা কিনে দেশের অন্তত ৩০ জেলায় নিয়ে যান।
কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের সঙ্গেই মধুপুর এলাকাটি। কুষ্টিয়ার শেষ সীমানায় এর অবস্থান। পাশে ঝিনাইদহ। এ কারণে এ হাটে ঝিনাইদহের কলা বেশি আসে। তাছাড়া চুয়াডাঙ্গা, রাজবাড়ী ও মেহেরপুর থেকেও কলা আসে। এসব জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা প্রতিদিনই হাটে কলা নিয়ে হাজির হন।
হাটের ব্যবসায়ী ও কলাচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন ভোর ৫টা থেকে হাটে কলা উঠতে শুরু করে। কৃষক সরাসরি ক্ষেত থেকে সংগ্রহ করে হাটে নিয়ে আসেন কলা। আবার গ্রামের ছোট ব্যবসায়ীরা কলা কিনে নছিমন, করিমন কিংবা ভ্যানে করে হাটে কলা নিয়ে আসেন। সপ্তাহের সাত দিনই হাট বসে। দুপুর ২টার মধ্যে সব বেচাবিক্রি শেষ হয়ে যায়।
কলা ব্যবসায়ী শফিউর রহমান বলেন, হাটের পাশে শান্তিডাঙ্গা এলাকায় আমার বাড়ি। ৩৬ বছর ধরে কলার ব্যবসা করছি। আগে অন্য হাটে ব্যবসা করতাম। এখানে ২৫ বছর ধরে আছি। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলার কলা ব্যবসায়ীর সঙ্গে তার পরিচয় আছে। মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে কলা বিক্রি করেন। বিকাশের মাধ্যমে লেনদেন হয়।
কলাচাষি লিয়াকত আলী জানান, মূলত কলার উৎপাদন এপ্রিল থেকে জুলাই। বাকি সময়টায় তুলনামূলক কম হয়। তাছাড়া শীতকালে কলার উৎপাদন একেবারেই কমে আসে। তবুও কলার ব্যবসা সারা বছরই চলে। ফলে কলা বিক্রি করে ভালো দাম পাওয়ায় চাষি ও ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছেন। তিনি আরও জানান, এ অঞ্চলের কলার মান ভালো হওয়ায় বিভিন্ন স্থানে এর চাহিদা রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য দেশি ফলের তুলনায় কলা ?দামে সস্তা। তাই কলার চাহিদা সব সময় থাকে। কৃষক ও ব্যবসায়ীরা জানান, মধুপুর হাটে চাম্পা ও সবরি কলা বেশি পাওয়া যায়।
প্রতিদিন অন্তত ছোট-বড় ৩০ থেকে ৩৫ ট্রাক কলা ওঠে এ হাটে। ঝিনাইদহের শ্রীরামপুর থেকে এসেছিলেন কলাচাষি সেলিম রেজা। তিনি জানান, এ বছর চার বিঘা জমিতে কলা চাষ করেছি। প্রতি বিঘা জমিতে কলা চাষ করে খরচ বাদ দিয়ে ৫০ হাজার টাকা করে লাভ পেয়েছি। চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার মুন্সীগঞ্জ গ্রামের হাবিবুর রহমান বলেন, গ্রাম থেকে কলা কিনে নসিমনে করে হাটে আসেন। এ হাটের তত্ত্বাবধানকারীদের মধ্যে রয়েছেন কাজী আবদুস সাত্তার। তিনি শুরু থেকেই হাটের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন। হাটের পরিবহন খাতটির দেখভাল করেন। ব্যবসায়ীরা যেন নির্বিঘেœ বিভিন্ন জেলায় কলা সরবরাহ করতে পারেন, সে চেষ্টা করেন। কৃষক ও ব্যবসায়ীরা তার ওপর আস্থা রাখেন। তিনি বলেন, এ হাটে প্রচুর লেনদেন হয়। ছোট-বড় ট্রাকগুলো তিনি ঠিক করে দেন। একেকটি ট্রাকে অন্তত সাত-আটজন ব্যবসায়ীর কলা যায়। কলার ছড়ায় হাঁসুয়া দিয়ে কেটে বিশেষ ধরনের চিহ্ন দেওয়া হয়। এক ব্যবসায়ীর কলা অন্য ব্যবসায়ীর কলার সঙ্গে তাই মিশে যায় না।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সেলিম হোসেন বলেন, এ বছর কলার দাম পেয়ে কৃষক খুশি। মধুপুর হাটে কলা বিক্রি করে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা লাভের মুখ দেখছেন। আমরা মাঝেমধ্যে গিয়ে তদারকি করি। মাঠে গিয়েও কলার রোগ প্রতিরোধ নিয়ে কৃষককে পরামর্শ দিয়ে থাকি। এ অঞ্চলের কলার চাহিদা রয়েছে দেশজুড়ে।
কুদরতে খোদা সবুজ