মধুমতির ভাঙনের কবলে টুঙ্গিপাড়ার জুটমিল

দুলাল বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গওহরডাঙ্গা গ্রামে মধুমতি নদীর তীব্র ভাঙনে ঝুঁকিতে পড়েছে উপজেলার একমাত্র পাটকল (জুটমিল)। পাটকল কর্তৃপক্ষ নদীভাঙন ঠেকাতে খোয়া, ইট ও বস্তা ফেলছে। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না। নদীর স্রোতে প্রতিনিয়তই ভাঙছে মধুমতির পাড়। বর্তমানে পাটকলের ভবন থেকে মাত্র দু-তিন ফুট দূরে অবস্থান করছে নদীভাঙন। তাই যেকোনো মুহূর্তে উপজেলার একমাত্র পাটকলটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে। এতে পাটকলে কর্মরত ৩০০ শ্রমিকের বেকার হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

পাটকল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালে উপজেলার গওহরডাঙ্গা গ্রামে নদীর পাড় থেকে ৫০ ফুট দূরে ‘টুঙ্গিপাড়া জুটমিল’ চালু করেন ইবাদত খলিফা। এটা উপজেলার একমাত্র পাটকল। এখানে স্থানীয় ও দেশের বিভিন্ন স্থানের ২০০ নারী ও ১০০ পুরুষসহ মোট ৩০০ শ্রমিক কাজ করেন। কিন্তু প্রতিনিয়ত একটু একটু করে নদীর পাড় ভাঙতে থাকায় বর্তমানে মাত্র দু-তিন ফুট দূরে অবস্থান করছে নদী। পাটকলটি বাঁচাতে কর্তৃপক্ষ লাখ লাখ টাকার খোয়া ও ইট ফেলছে। এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড কিছু বস্তা ফেললেও নদীর ভাঙন ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই কাজ হারানোর ভয়ে শ্রমিকেরা আতঙ্কে দিন পার করছেন। নদীগর্ভে পাটকলটি বিলীন হয়ে গেলে কাজ হারিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়বেন শ্রমিকরা। তাই সরকারের প্রতি ভাঙন ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানান শ্রমিকরা।

পাটকলের নারী শ্রমিক রেহানা আক্তার বলেন, আমরা গরিব মানুষ। মিলে কাজ করি বলে খাওয়া জোটে। মিল বন্ধ হয়ে গেলে মরা ছাড়া গতি থাকবে না।

মরিয়াম বেগম, আফি খানমসহ কয়েকজন নারী শ্রমিক বলেন, আমরা এখানে যারা কাজ করছি, অনেকের স্বামী তাদের ছেড়ে চলে গেছে, আবার কয়েকজনের স্বামী মারা গেছে। স্বামী হারিয়ে ছেলেমেয়েদের মুখের খাবার জোগাড় করতে মিলে কয়েক বছর ধরে কাজ করছি। আমাদের বেতনের ওপর পরিবার নির্ভরশীল। নদীভাঙনের কারণে মিল যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে পরিবার নিয়ে মরা ছাড়া আর কোনো গতি থাকবে না। তাই সরকারের প্রতি আমাদের দাবি, যেন দ্রæত ভাঙন ঠেকানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

পাটকলের ষাটোর্ধ্ব বয়সী শ্রমিক মান্নান শেখ বলেন, পাটকলের শুরু থেকেই আমার পরিবারের তিনজন এখানে কাজকর্ম করে খাই। ভাঙনের কারণে পাটকল বন্ধ হয়ে গেলে ছেলেমেয়ে না খেয়ে মরবে। সরকারের কাছে একটাই দাবিÑভাঙন ঠেকাতে হবে। মিল বাঁচলে আমরা বাঁচব।

টুঙ্গিপাড়া জুটমিলের মালিক ইবাদত খলিফার ভাই নজির খলিফা বলেন, জুটমিল প্রতিষ্ঠার সময়ে ভাঙন ছিল না। কয়েক বছর আগে নদীর ওপারে ভাঙন ঠেকাতে বøক ও বালির বস্তা দেয়ায় নদীর স্রোত এপারে আছড়ে পড়ে। তখন থেকেই ভাঙন শুরু হয়েছে। জুটমিল বাঁচাতে আমরা চেষ্টা করলেও পাড় ভেঙেই চলেছে। সরকার যদি ভাঙন ঠেকাতে পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে জুটমিলটি বাঁচানো সম্ভব হবে না। এতে ৩০০ শ্রমিক তাদের পরিবার নিয়ে চরম বিপাকে পড়বেন।

এ বিষয়ে টুঙ্গিপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী রাশেদুল ইসলাম বলেন, উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ভাঙনের কবলে পড়েছে। ভাঙনকবলিত এলাকাগুলোর সার্ভে কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে দ্রæত ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০