মো. রজব আলী, দিনাজপুর: দিনাজপুরের মধ্যপাড়া পাথর খনিতে প্রতিদিন গড়ে পাঁচ লাখ টন পাথর উৎপাদন হচ্ছে। কিন্তু বিক্রি হচ্ছে অনেক কম হারে। ফলে প্রতিদিনই বাড়ছে অবিক্রীত পাথরের মজুত। সময়মতো পাথর বিক্রি না হলে পাথর রাখার জায়গা থাকবে না খনির ইয়াডগুলোতে। ফলে বন্ধ করতে হবে পাথরের উৎপাদন।
এদিকে মধ্যপাড়া পাথর খনিতে প্রতিদিন অবিক্রীত পাথরের মজুত বৃদ্ধি পেলেও, সেই পাথর না কিনে, পাথর ব্যবসায়ীরা বিদেশ থেকে পাথর আমদানি করে সরকারি-বেসরকারি কাজে সরবরাহ করছে। এতে করে বৈদেশিক মুদ্রার অপচয়ের পাশাপাশি লোকসানে পড়তে হচ্ছে দেশের একমাত্র উৎপাদনশীল পাথর খনিটি।
মধ্যপাড়া গ্রানাইড মাইনিং কোম্পানির কর্মকর্তারা পাথর বিক্রিতে ভাটপাড়ার কারণ হিসেবে, সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাপনাকে দুষছেন। তারা বলছেন, পাথর আমদানিকারকরা প্রতি ট্রাকে ৩০ টনের বেশি পাথর অতিরিক্তভাবে বহন করলেও, মধ্যপাড়া খনিটি সরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়ায়, ট্রাকে ১৬ থেকে ২০ টনের বেশি পাথর বহন করার অনুমতি নেই। অপরদিকে আমদানিকৃত পাথর অতিরিক্ত বহন করলেও, সড়ক ব্যবস্থাপনা বিভাগ তাদের বিরুদ্ধেও কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে না। এতে আমদানিকৃত পাথর বিক্রি হলেও, মধ্যপাড়া খনিতে পাথর বিক্রি কমে যায়। এ কারণে দিন দিন বাড়ছে অবিক্রীত পাথরের মজুত।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খনির সদর দফতরের প্রধান ফটকের ধার থেকে খনিটির পেছন দিক পর্যন্ত প্রতিটি ইয়াডে পাথরের পাহাড়ে পরিণত হয়েছে। সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে খনিটিতে তিন লাখ টনের অধিক পাথর মজুত রয়েছে। এছাড়া প্রতিদিন গড়ে পাঁচ হাজার টন পাথর খনি থেকে উৎপাদন হচ্ছে। খনি কর্তৃপক্ষ বলছেন, পাথরের মজুত আর কিছুদিন বাড়লে, খনি থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ করতে হবে, কারণ খনি ইয়াডগুলো এখন পাথরে ভর্তি, পাথর রাখার জায়গা নাই।
জানা গেছে, ২০১৩ সালে বেলারুশভিত্তিক জার্মানিয়া ট্রাস্ট কনসোডিয়ামের (জিটিসি) সঙ্গে খনিটির উৎপাদন রক্ষণাবেক্ষণের চুক্তি করে। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসি। বর্তমানে প্রতিদিন খনিটি থেকে পাথর উত্তোলন হচ্ছে সাড়ে পাঁচ হাজার টন। খনিটির পাথর উত্তোলনের দায়িত্বে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসি থাকলেও, পাথর বিক্রি করে প্রেট্রোবাংলার নিয়ন্ত্রণাধীন খনি কর্তৃপক্ষ মধ্যপাড়া গ্রানাইড মাইনিং কোম্পানি লি.। প্রতিদিন গড়ে পাঁচ হাজার টন পাথর উত্তোলন হওয়ায় খনিটি লোকসানের হাত থেকে লাভের দিকে যাওয়ার কথা কিন্তু সময়মতো পাথর বিক্রি না হওয়ায়, সেই লাভ ঘরে উঠছে না।
জানা গেছে, মধ্যপাড়া পাথর খনির সন্নিকটে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন সাত থেকে ১০ হাজার মেট্রিক টন পাথর আমদানি করা হয়। এছাড়া বুড়মারী, বেনাপোল, তামাবিল স্থলবন্দর দিয়েও প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পাথর আমদানি করা হচ্ছে। পাথর ব্যবসায়ীরা বলছেন মধ্যপাড়া পাথর খনি কর্তৃপক্ষ সরকারি নিয়মের বাহিরে ট্রাকে পাথর বহন করার অনুমতি দেয় না।
মধ্যপাড়া গ্রানাইড মাইনিং কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক আবু তালহা ফরাজি বলেন, সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ মধ্যপাড়ার পাথর বহনের জন্য অতিরিক্ত পাথর বহন করার অনুমতি দেয় না। আবার আমদানিকৃত পাথর অতিরিক্ত বহন করা বন্ধও করে না। যার ফলে মধ্যপাড়া পাথর খনিতে পাথর বিক্রিতে ভাটা পড়েছে। মধ্যপাড়া খনি কর্তৃপক্ষ বৈদেশিক মুদ্রা রক্ষার পাশাপাশি দেশিও খনিটিকে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে তৈরি করতে, সরকারি-বেসরকারি মেঘা প্রকল্পে দেশি মধ্যপাড়া খনির পাথর ব্যবহার করার আহ্বান জানান।
মধ্যপাড়া পাথর খনি বাড়ছে অবিক্রীত পাথরের মজুত
