মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি এখনও আশানুরূপ নয়: ঢাকা চেম্বারের সভাপতি

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশে উৎপাদিত তৈরি পোশাক খাতের বহুমুখীকরণের অভাব, অদক্ষ মানবসম্পদ, হালাল পণ্য রপ্তানিতে প্রয়োজনীয় সার্টিফিকেট ও টেস্টিং ল্যাবরেটরির অনুপস্থিতি এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে এফটিএ ও পিটিএ’র অভাবের কারণে সেখানকার দেশগুলোয় বাংলাদেশি পণ্য প্রত্যাশিত হারে রপ্তানি করা যাচ্ছে না বলে মত প্রকাশ করেছেন ‘মধ্যপ্রাচ্য ও বাংলাদেশের মধ্যকার অর্থনৈতিক সহযোগিতা’ শীর্ষক ওয়েবিনারের আলোচকরা।

উল্লেখ্য, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) যৌথভাবে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সামিট, ২০২১’ শীর্ষক সপ্তাহব্যাপী আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্মেলনের তৃতীয় দিন গতকাল বৃহস্পতিবার ‘মধ্যপ্রাচ্য ও বাংলাদেশের মধ্যকার অর্থনৈতিক সহযোগিতা’ শীর্ষক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়। ওয়েবিনারে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি-বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ আলী আলহোমদি যথাক্রমে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন।

ওয়েবিনারে স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বার সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, আমাদের মোট রপ্তানির মাত্র তিন শতাংশ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় রপ্তানি হয়ে থাকে এবং মোট আমদানি করা খনিজ পদার্থের ১৯ শতাংশ সেখানকার দেশগুলো থেকে আমদানি করা হয়। তিনি উল্লেখ করেন, আমাদের মোট রেমিট্যান্সের ৫৫ শতাংশ আসে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে এবং বাংলাদেশে প্রায় ১২ কোটি ৩০ লাখ ডলারের বিনিয়োগ করেছে সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত। রিজওয়ান রাহমান বলেন, বাংলাদেশে উৎপাদিত তৈরি পোশাক খাতের বহুমুখীকরণের অভাব, অদক্ষ মানবসম্পদ, হালাল পণ্য রপ্তানিতে প্রয়োজনীয় সার্টিফিকেট ও টেস্টিং ল্যাবরেটরির অনুপস্থিতি এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে এফটিএ ও পিটিএ না থাকায়  ওই দেশগুলোয় বাংলাদেশি পণ্য প্রত্যাশিত হারে রপ্তানি করা যাচ্ছে না। ঢাকা চেম্বার সভাপতি বলেন, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় উল্লেখ করা হয়েছে, জিডিপির প্রায় ৮৫ শতাংশ আসবে বেসরকারি খাত থেকে। তাই এ খাতের উন্নয়নে সরকারের সহযোগিতার পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগ একান্ত অপরিহার্য।

প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি-বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেন, আমাদের অর্থনীতি প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হয়ে শ্রমভিত্তিক শিল্প থেকে সেবা ও তথ্য-প্রযুক্তির দিকে ধাবিত হচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সরকারি ও বেসরকারি খাতের মধ্যকার সমন্বয় বেড়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন সামনের দিনগুলোয় এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের ওষুধ, এপিআই, গৃহস্থালিতে ব্যবহার্য ইলেকট্রনিক সামগ্রী, তথ্য-প্রযুক্তি প্রভৃতি খাতে বিনিয়োগ অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। তিনি যেকোনো দেশে বিনিয়োগের আগে সেখানকার বাজার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ধারণা নেয়ার জন্য উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান। মসিউর রহমান বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকার এরই মধ্যে গভীর সমুদ্রবন্দর, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণসহ অবকাঠামো খাতে বেশ কিছু মেগা প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এছাড়া দেশের সার্বিক অবকাঠামো ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

বাংলাদেশে নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ আলী আলহোমদি বলেন, বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত উৎকৃষ্ট স্থান। সেখানে বিনিয়োগের জন্য তিনি বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি জানান, দুদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য উন্নয়নে ‘বাংলাদেশ-ইউএই বিজনেস কাউন্সিল’ গঠনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

ওয়েবিনারে নির্ধারিত আলোচনায় ডিপি ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর শামীম উল হক, আরএসএ অ্যাডভাইজরি অ্যান্ড আরএসএ ক্যাপিটাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান কে মাহমুদ সাত্তার, লাল তীর সিড লিমিটেডের পরিচালক তাজওয়ার এম আউয়াল, প্লামি ফ্যাশনস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল হক এবং সাউদি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এক্সপোর্ট কোম্পানির সিইও সুলাইমান আল জেদাই প্রমুখ অংশ নেন।

প্লামি ফ্যাশনসের এমডি মো. ফজলুল হক বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো প্রতিবছর পাঁচ দশমিক তিন বিলিয়ন ডলারের বাজার তৈরি পোশাক খাতের পণ্য আমদানি করলেও সেখানে আমাদের উৎপাদিত তৈরি পোশাক রপ্তানির পরিমাণ মাত্র ২২৬ মিলিয়ন ডলার। তিনি বলেন, আমাদের উদ্যোক্তারা এখনও মধ্যপ্রাচ্যের বাজারের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারছেন না। সেজন্য যথাযথ পরিকল্পনার অভাবই দায়ী বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।

সাউদি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এক্সপোর্ট কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুলাইমান আল জেদাই বলেন, তার প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী এবং এখানকার উৎপাদিত পণ্য আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকায় রপ্তানি করা হবে। লাল তীর সিড লিমিটেডের পরিচালক তাজওয়ার এম আউয়াল বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় শাক-সবজির প্রচুর চাহিদা থাকায় ওই দেশগুলো বাংলাদেশ থেকে উন্নত জাতের বীজ আমদানি করছে এবং বাংলাদেশে উৎপাদিত কেমিক্যালমুক্ত নিরাপদ শাকসবজির প্রচুর চাহিদা রয়েছে। তিনি জানান, কাতার প্রতি বছর এক দশমিক পাঁচ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের শাকসবজি আমদানি করে এবং সেখানকার বাজারে বাংলাদেশে উৎপাদিত শাকসবজি রপ্তানি করা সম্ভব হলে আমাদের কৃষি খাতে আমূল পরিবর্তন সাধিত হবে। ডিপি ওয়ার্ল্ডের কান্ট্রি ডিরেক্টর শামীম উল হক বলেন, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নে স্থল, নদী ও সমুদ্রবন্দরগুলোর মধ্যকার যোগাযোগ অবকাঠামোর আরও উন্নয়ন করতে হবে, সেইসঙ্গে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০