Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 2:07 pm

মধ্যপ্রাচ্যে বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি

শেয়ার বিজ ডেস্ক: বিশ্বে অন্য যেকোনো অঞ্চলের তুলনায় মধ্যপ্রাচ্যে বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি। জাতিসংঘের ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর ওয়েস্টার্ন এশিয়ার (ইএসসিডব্লিউএ) প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য। খবর: ইউরোপিয়ান টাইমস।

গত শুক্রবার এক প্রতিবেদনে জাতিসংঘের এ কমিশন আরও জানিয়েছে, যুদ্ধবিগ্রহ, হানাহানি ও মন্দার কারণে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে। এর প্রভাব পড়েছে চাকরির বাজারে। বিশ্বের বড় একটি অংশ বেকার জীবনযাপন করছে। এর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি।

বেকারত্ব নিয়ে একটি জরিপ চালায় সংস্থাটি। এতে দেখা গেছে, মধ্যপ্রাচ্যের ১২ শতাংশ মানুষ বেকার। তবে এ অঞ্চলে চলতি বছরে বেকারত্বের হার ১১ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে আসার ব্যাপারে আশাবাদী কমিশন।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেকার লেবাননে। দেশটির ২৯ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ কর্মহীন। জরিপের ফলে বলা হয়েছে, মূল্যস্ফীতি ও ডলারের বিপরীতে মুদ্রার মান কমে যাওয়ায় লেবাননে বেকার মানুষের সংখ্যা আরও বাড়বে।

জাতিসংঘের ওই সংস্থাটির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এছাড়া আরব অঞ্চলে দারিদ্র্যের সংখ্যাও বাড়ছে। এখানকার ১৩ কোটি মানুষ দারিদ্র্যে জর্জর। এ সংখ্যা আগামী ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাড়তে থাকবে এবং ওই বছর এ অঞ্চলের পুরো জনসংখ্যার ৩৪ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমায় বসবাস করবে। এর বাইরে রয়েছে লিবিয়া এবং জিসিসিভুক্ত দেশগুলো।

তবে মধ্যপ্রাচ্যের জন্য ভালো খবরও রয়েছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, ২০২৩ সালে এ অঞ্চলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৪ শতাংশ বাড়বে। এছাড়া মূল্যস্ফীতি ১৪ শতাংশ থেকে ৮ শতাংশে এবং ২০২৪ সালে ৪ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসবে। বিশ্বব্যাপী জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশগুলোর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি হবে। তবে একই সময় এ অঞ্চলে নিত্যপণ্যের মূল্যও বাড়বে। আর্থসামাজিক চ্যালেঞ্জে পড়বে তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো। দেশগুলোর জ্বালানি খরচ বাড়বে, খাদ্যপণ্যের সরবরাহ কমে আসবে, পর্যটন ও আন্তর্জাতিক সহয়তা কমে আসবে।

বেকারত্ব নিয়ে চালানো জরিপের প্রধান গবেষক মোহাম্মদ মোম্মি জানিয়েছেন, জ্বালানি ও প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নির্ভরতা কমানো এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম অন্যান্য খাতে সম্প্রসারণ করা উচিত মধ্যপ্রাচ্যের। এজন্য এখনই সবচেয়ে ভালো সময়।

গত বছরে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) জানিয়েছিল, ২০১৬ সালে বৈশ্বিক চাকরির বাজারে বেকারত্বের হার বাড়ে। পরের বছর ২০১৭ সালে বৈশ্বিক বেকারত্বের হার দাঁড়ায় ৫ দশমিক ৬ শতাংশে। উন্নত দেশগুলোর অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো থাকায় ২০১৭ সালে ২৬ লাখ কর্মসংস্থান বেশি হয়েছে। এ কারণে ২০১৬ সালের তুলনায় বেকারত্বের হার কমেছে। ২০২২ সালে বিশ্বে বেকার মানুষের সংখ্যা ২০ কোটি ৭০ লাখে দাঁড়াবে বলে জানায় আইএলও। কভিড-১৯ মহামারি প্রাদুর্ভাবের আগে ২০১৯ সালের বেকারের সংখ্যার সঙ্গে আরও দুই কোটি ১০ লাখ বেকার যোগ হবে বলে এতে বলা হয়। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ধীরগতি ও করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্টের বিস্তারের কারণে বিশ্বে বেকারের সংখ্যা বাড়ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

গত কয়েক বছরে উদীয়মান ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর শ্রমবাজার উন্নত হয়েছে। তবে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির এ হার টিকে থাকবে না। শ্রমবাজারে চাকরি পাওয়ার সংখ্যা কমবে। নি¤œমানের চাকরির সংখ্যা বাড়ছে। এটা একটা আশঙ্কার বিষয়। বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৫০ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান নাজুক পর্যায়ের। অর্থাৎ তারা কম বেতনে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করেন। এসব চাকরিতে নিরাপত্তার বিষয়টি অবহেলিত। উন্নয়নশীল দেশগুলোয় প্রতি চারজনে তিনজন এ ধরনের চাকরিতে কর্মরত। তাই বিশ্ব অর্থনীতিতে আরও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। শ্রমিকের উন্নয়নেও কাজ করার কথা বলেছেন তারা।