উন্নত ও উন্নয়নশীল যেকোনো দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে রপ্তানির বড় ভূমিকা রয়েছে। কভিডকালে রপ্তানি কিছুটা কমলেও এ ক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে নেই। প্রতিবছরই বাড়ছে আমাদের রপ্তানি। প্রতিবছর রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও অনেক খাতেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয় না। রপ্তানিপণ্য বহুমুখীকরণ, নতুন বাজার সৃষ্টি ও রপ্তানি বাধা দূরীকরণের মাধ্যমে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা গেলে আমাদের রপ্তানি আয় বাড়বে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ঢাকা চেম্বার এখন সপ্তাহব্যাপী ‘বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সামিট’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্মেলন করছে। সম্মেলনের তৃতীয় দিন বৃহস্পতিবার আলোচিত বিষয় ছিল ‘মধ্যপ্রাচ্য ও বাংলাদেশের মধ্যকার অর্থনৈতিক সহযোগিতা’। এখানে আলোচকরা বলেন, আমাদের দেশে উৎপাদিত তৈরি পোশাক খাতের পণ্য বহুমুখীকরণের অভাব, অদক্ষ মানবসম্পদ, হালাল পণ্য রপ্তানিতে প্রয়োজনীয় সার্টিফিকেট ও টেস্টিং ল্যাবরেটরির অনুপস্থিতি এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে এফটিএ ও পিটিএ না থাকায় ওই অঞ্চলের দেশগুলোয় বাংলাদেশি পণ্য প্রত্যাশিত হারে রপ্তানি করা যাচ্ছে না।
গতকাল শেয়ার বিজে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, আমাদের মোট রপ্তানির মাত্র তিন শতাংশ মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক। প্রবাসী-আয়ের (রেমিট্যান্স) ৫৫ শতাংশ আসে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে এবং বাংলাদেশে প্রায় ১২ কোটি ৩০ লাখ ডলারের বিনিয়োগ করেছে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
জিডিপিতে বড় অবদান রাখলেও আমাদের রপ্তানি সীমাবদ্ধ কয়েকটি পণ্য ও দেশের মধ্যে। সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমে পণ্য ও বাজার বাড়াতে হবে। মধ্যপ্রাচ্য ও আরব রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক ভালো। সেটি আমরা কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) ও অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) সম্পাদন করলে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়বে। আমাদের ওষুধ, গৃহস্থালিতে ব্যবহার্য ইলেকট্রনিক সামগ্রী, তথ্য-প্রযুক্তি প্রভৃতি খাতে বিনিয়োগ অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। ইউএই, সৌদি আরবসহ ওই অঞ্চলের উদ্যোক্তাদের আগ্রহী করতে তুলতে পারলে এসব খাতে বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়বে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো প্রতিবছর ৫৩০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক খাতের পণ্য আমদানি করলেও সেখানে আমাদের হিস্যা অতি নগণ্য, মাত্র ২২ কোটি ডলার। মধ্যপ্রাচ্যের বাজার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে আমাদের উদ্যোক্তাদের। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় শাকসবজির প্রচুর চাহিদা থাকায় ওই দেশগুলো বাংলাদেশ থেকে উন্নত বীজ আমদানি করছে এবং বাংলাদেশে উৎপাদিত কেমিক্যালমুক্ত নিরাপদ শাকসবজির প্রচুর চাহিদা রয়েছে। সেখানকার বাজারে আমাদের উৎপাদিত শাকসবজি রপ্তানি করা সম্ভব হলে কৃষি খাতে আমূল পরিবর্তন সাধিত হবে।
রপ্তানি পণ্যে মধ্যপ্রাচ্যের ব্যবসায়ীদের আগ্রহী করতে তুলতে ওই অঞ্চলের দেশগুলোয় আমাদের দূতাবাস ও মিশনগুলোকে কাজে লাগানো যেতে পারে। বাণিজ্য বাধা দূরীকরণে ব্যবস্থা নিতে হবে। অনেক সময় পণ্য রপ্তানির বড় অসুবিধা হলো, সেগুলো ল্যাবে পরীক্ষা করতে বেশি সময় লাগে। দীর্ঘসূত্রতায় অনেকে আগ্রহ হারান। রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান যাতে দ্রুত সেবা নিতে পারে, সে উদ্যোগ নিতে হবে। রপ্তানিকারকরা আর কী সমস্যার মুখোমুখি হন, তা চিহ্নিত করে দ্রুততম সমাধান করতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় হালাল পণ্যের ব্যবহার বেশি। সেটি বিবেচনায় রেখে পণ্য রপ্তানিতে প্রয়োজনীয় সনদ ও টেস্টিং ল্যাবরেটরি সুবিধা নিশ্চিত করলে আমাদের রপ্তানিকারক কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের আমদানিকারক উভয়েই উপকৃত হবেন।