মনোনয়নপত্র সংগ্রহে বাধা পাতানো নির্বাচনের দিকে হাঁটছে রিহ্যাব!

হামিদুর রহমান: রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও নতুন নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র দেয়া হচ্ছে না। রিহ্যাব সদস্যরা কয়েক দফা অফিসে গিয়েও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে পারছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। চলতি মাসের ২ থেকে ৭ অক্টোবরের মধ্যে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের তারিখ থাকলেও গতকাল পর্যন্ত কেউ তা সংগ্রহ করতে পারেননি।

সাধারণ সদস্যদের অভিযোগ, বর্তমান কমিটি মনোনয়নপত্র সংগ্রহের তারিখ পেরিয়ে গেলেও মনোনয়ন দিচ্ছে না। তারা ভোটবিহীন নির্বাচনের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও তারা এখনও অফিস দখল করে রেখেছে।

২০১৪ সাল থেকে ক্ষমতায় তারা। আবার ক্ষমতায় আসতে চাচ্ছে বর্তমান কমিটি। তবে ভোটে নয়, জোর করে। সাধারণ সদস্যদের অভিযোগ, রিহ্যাবকে ব্যক্তিগত অফিস বানিয়েছে বর্তমান কমিটি।

জানতে চাইলে রিহ্যাবের বর্তমান সভাপতি আলমগীর সামছুল আলামিন শেয়ার বিজকে বলেন, ‘কিছু বিতর্কিত প্রার্থী আছে যারা মনোনয়নপত্র গ্রহণ করে নির্বাচনকে বিতর্কিত করার পাঁয়তারা করছে। যে কারণে তাদের মনোনয়নের জন্য আমরা একটু সময় নিচ্ছি, কেননা এখানে যারা দায়িত্বশীল তারা কেউ চায় না বিতর্কিতদের মনোনয়ন দেয়া হোক। দেশে সব খাত এখন উন্নয়ন চলছে। বর্তমানে রিহ্যাব দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন। সরকারের সঙ্গে যাদের সুসম্পর্ক আছে, যারা সরকারের কাছ থেকে এ খাতের উন্নয়নে সুযোগ-সুবিধা নিতে পারবেন, উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবেন তাদেরই মনোনয়ন দেয়া হবে। বিএনপি বা জামায়াতের কেউ এলে তো তাকে মনোনয়ন দেয়া হবে না। ডেভেলপার কোম্পানিগুলোর উন্নয়নে বাধা দিতে, সর্বোপরি এ খাতের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে কিছু লোক মনোনয়নপত্রের নামে হট্টগোল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সার্বিক বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে বৈঠক আছে। ওই বৈঠকেই এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে।’

মনোনয়নপত্র সংগ্রহের জন্য কয়েক দফা চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন অনেকে। মনোনয়নপত্র সংগ্রহের জন্য বেশ কয়েকজন সদস্য গত সোমবার (৪ অক্টোবর) রিহ্যাবের অফিসে গেলে বর্তমান কমিটির কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে তাদের বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে কলাবাগান থানার এডিসি এসে তাদের থামানোর চেষ্টা করেন বলে জানা গেছে।

মনোনয়নপত্র সংগ্রহে ব্যর্থ ঐশী প্রোপার্টিজের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমরা ২ থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র কিনতে রিহ্যাবের নির্বাচন কমিশন অফিসে গিয়েও তাদের কাউকে পাইনি। অফিস বন্ধ, ফোন করেও পাওয়া যাচ্ছে না। গত সোমবার রিহ্যাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওহিদুজ্জামান, সাবেক ডিরেক্টর শামীম রেজাসহ আমরা প্রায় ৫০ জন সদস্য রিহ্যাবে গিয়েছিলাম। কিন্তু বর্তমান কমিটির হস্তক্ষেপে আমাদের মনোনয়নপত্র দেয়া হয়নি। একপর্যায়ে আমাদের সঙ্গে বর্তমান কমিটির তর্কবিতর্ক হলে সেখানে কলাবাগান থানার এডিসি এসে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। আমাদের কেন মনোনয়নপত্র দেয়া হবে না তার জন্য সময় দেয়া হলেও এখনও সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলছে না। ২০১৪ সাল থেকে বর্তমানে ক্ষমতায় তারা। নিজেরা আবার ক্ষমতায় আসতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহে বাধা দিচ্ছে। রিহ্যাবটাকে তারা ব্যক্তিগত সংগঠন বানিয়েছে।’

মনোনয়নপত্র সংগ্রহে ব্যর্থ আরেক সদস্য ল্যান্ডমার্ক কনস্ট্রাকশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালনক মো. আলিম উল্লাহ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘নমিনেশন নেয়ার অধিকার সবার আছে। অথচ আমাদের নমিনেশন দিচ্ছে না। নির্বাচন কমিশনারকে ফোন করেছি। তারা বলেন, নমিনেশন দেয়ার ক্ষমতা তাদের নেই, এগুলো তাদের কাজ না। তারা শুধু নির্বাচন দেখেন। অফিসে গেলেও তাদের পাওয়া যায় না, কমিশন অফিস রুম বন্ধ। এদিকে নমিনেশন গ্রহণের তারিখ পেরিয়ে যাচ্ছে। অথচ তারা নমিনেশন দিচ্ছে না। বর্তমান পর্ষদ ভোটারবিহীন একটি নির্বাচনের চেষ্টা করছে। বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হলে এখনও তারা অফিস দখল করে বসে আছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত ২ অক্টোবর আমি আমার লোক রিহ্যাবের অফিসে পাঠালে তারা আমার লোকের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়ে, লেটার ছিঁড়ে ফেলে, হাতাহাতি পর্যন্ত করে। পরে বাধ্য হয়ে ওইদিন কলাবাগান থানায় ডিজি করেছি।’

এদিকে বিষয়গুলো নিয়ে গতকাল বুধবার প্রেস ক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলন করে রিহ্যাব। এতে জানানো হয়, গত ২১ আগস্ট নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি (নির্র্বচন নোটিশ ন: ২০২১/১৫) এবং উক্ত বিজ্ঞপ্তির সংযোজনী-১-এর মাধ্যমে একটি নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। সে মোতাবেক নির্বাচন বোর্ড কর্তৃক ২০ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক ভোটার তালিকা এবং ৩০ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। নির্বাচনী তফসিল অনুযায়ী ২ অক্টোবর থেকে আজ ৭ অক্টোবরের মধ্যে পরিচালক পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও দাখিলের সময় থাকলেও এখন পর্যন্ত কোনো সদস্য রিহ্যাব অফিসে গিয়ে মনোনয়ন সংগ্রহ করতে পারেননি। গত ২ অক্টোবর আমাদের একজন সদস্য প্রতিনিধির মাধ্যমে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে গেলে রিহ্যাবে অবস্থানরত কিছু রিহ্যাব পরিচালনা পর্ষদ সদস্য তার মনোনয়নপত্র সংগ্রহের আবেদনপত্র ছিঁড়ে ফেলেন।

সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, পরবর্তীকালে ৪ অক্টোবর আমরা বেশ কয়েকজন সাধারণ সদস্য রিহ্যাব অফিসে যাই। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করি। কিন্তু নির্বাচন বোর্ডের কোনো সদস্য না আসায় মনোনয়নপত্র গ্রহণে ব্যর্থ হই। ওই সময় রিহ্যাব পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ও বহিরাগত কিছু লোক আমাদের মনোনয়নপত্র গ্রহণে বাধা দেয় ও অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করব যেন রিহ্যাব নির্বাচন বোর্ড তাদের হঠকারী অবস্থান থেকে সরে এসে দ্রুততম সময়ের মধ্যে মনোনয়নপ্রার্থীদের মনোনয়নপত্র সংগ্রহে সার্বিক সহযোগিতার পাশাপাশি একটি অবাধ, স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন পরিচালনার মাধ্যমে রিহ্যাবের সুনাম ও ভাবমূর্তি অক্ষুন্ন রাখে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০