মনোপলি ঠেকাতে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান গঠনের আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাজারে যাতে এককভাবে কেউ কর্তৃত্ব করতে না পারে সেদিকে সরকার দৃষ্টি রাখবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের (সিসিবি) এক সেমিনারে এ কথা বলেন তিনি। এ সময় মনোপলি ঠেকিয়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে (এসএমই) টিকিয়ে রেখে প্রতিযোগিতার সুষম পরিবেশ সৃষ্টির জন্য শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন বক্তারা।

গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এ সেমিনার আয়োজন করে সিসিবি। ‘ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রতিযোগিতা নিশ্চিতকরণ: বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশ উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। সেই সময় আমরা প্রতিযোগিতার বিষয়ে এখানে কথা বলছি। প্রতিযোগিতা কমিশন গঠন করা হয়েছে। এখন একে যুগোপযোগী করতে কমিশনের চেয়ারপারসন ও সদস্যদের কাজ করতে হবে। ব্যবসায় মনোপলি যাতে না হয়। বাজারে যাতে এককভাবে কেউ কর্তৃত্ব করতে না পারে সেদিকে আমরা দৃষ্টি রাখব।’

প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন মো. ইকবাল খান চৌধুরীরর সভাপতিত্বে সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বাণিজ্য সচিব শুভাশিস বসু, প্রতিযোগিতা কমিশনের সদস্য এটিএম মুর্তজা রেজা চৌধুরী, মো. আবুল হোসেন মিঞা প্রমুখ। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবায়েত উল ইসলাম। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ, উন্নয়ন সমন্বয়ের এমিরেটস ফেলো ড. এনামুল হক, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. ফয়সাল আহমেদ বক্তব্য রাখেন।

কমিশনের চেয়ারপারসন মো. ইকবাল খান চৌধুরী বলেন, ‘পণ্যের দাম নির্ধারণ আমাদের কাজ নয়। তবে প্রতিযোগিতাবিরোধী তৎপরতা রোধ করা এবং সুষম প্রতিযোগিতার পরিবেশ নিশ্চিত করার কাজ আমরা করব। এজন্য প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো গঠনের কাজ চলছে। কমিশনের নিজস্ব দক্ষ জনবল ছাড়া এ কাজ করা সম্ভব নয়। এছাড়া প্রতিযোগিতা আইনে কমিশনের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন আছে কি না, তা নিয়ে আলোচনা করতে হবে।’

এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, ব্যবসায় সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ভূমিকা নিতে হবে কমিশনকে।

মূল প্রবন্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিস অনুষদের ডিন শিবলী রুবায়েত উল ইসলাম বলেন, সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ, ক্ষমতাধর কোম্পানির বাজার নিয়ন্ত্রণ এবং অপব্যবহার ও মার্জারের মাধ্যমে ছোট কোম্পানিকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বাজার দখল, সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত কাজে বড় ধরনের অনিয়ম নিয়ে বিভিন্ন দেশের কমিশন কাজ করছে। বাংলাদেশেও প্রতিযোগিতার পরিবেশ নিয়ে কাজ করতে হবে।

বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘প্রাণ-আরএফএল মুড়ি-চানাচুর থেকে শুরু করে গাড়ি পর্যন্ত সবই তৈরি করছে। অর্থনীতির হিসাবে বড় বিনিয়োগের কারণে পণ্যমূল্য কম হয়। অর্থাৎ তারা যেহেতু জায়ান্ট কোম্পানি, তাদের পণ্যের মূল্য কম হবে, ভোক্তারা কম মূল্যে পাবে। এটা একটা দিক। অন্যদিকে ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান বিপুল কর্মসংস্থান করে। এখন আমাদের একই খাতে বড় প্রতিষ্ঠান আর ছোট প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কার পক্ষ নেব তা ভাবতে হবে। বড়টাকে সুযোগ দেব, নাকি ছোটদের সুরক্ষা দেবÑএ দুয়ের মধ্যে সমন্বয় করতে হবে।

এজন্য বড়কে নিয়ন্ত্রণের চেয়ে ছোটকে প্রণোদনা দিয়ে সক্ষম করার বিষয়ে মত দেন তিনি। প্রতিযোগিতা কমিশনকে খাতভিত্তিক গবেষণার পরামর্শও দেন তিনি। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রায়ই বিপরীতমুখী ভূমিকা নিই। কৃষকের পক্ষে সেমিনার হলে বলি ধানের দাম বাড়িয়ে কৃষকের আয় বৃদ্ধি করুন। আবার দারিদ্র্য নিয়ে সেমিনার হলে বলি চালের দাম কমাতে হবে। এ অবস্থার অবসান হতে হবে।’

উন্নয়ন সমন্বয়ের এমিরেটস ফেলো ড. এনামুল হক বলেন, কমিশনকে বাজারের কাঠামো ঠিক করা, গবেষণা করা এবং অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা রাখতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. ফয়সাল আহমেদ বলেন, রেগুলেটরি কমিশনগুলোই চাপের মধ্যে কাজ করে এ বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে। প্রতিযোগিতা কমিশনের কাজ করতে হবে ২০৪১ সালের দিকে লক্ষ রেখে। দেশের উন্নয়নের স্বার্থেই উৎপাদন বাড়াতে হবে আর উৎপাদনশীলতা আসবে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থা থেকেই।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০