নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বর্তমানে ইউরোপসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তীব্র দাবদাহ ও দাবানল সৃষ্টি হচ্ছে। কাজেই আমাদের সব ক্ষেত্রেই পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। চট্টগ্রামে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব আবাসিক স্থান ও শিল্প-কারখানা নির্মাণে বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা গ্রহণ করা যেতে পারে। প্রাকৃতিক আলো-বাতাসের সদ্ব্যবহার করে অনেক জ্বালানি সাশ্রয় করা সম্ভব। চট্টগ্রামে টেকসই বিল্ডিং ডিজাইন এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপনাবিষয়ক এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
গত বুধবার সন্ধ্যায় দি চিটাগং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (সিসিসিআই), প্র্যাক্সিস এবং আমব্রেলা পিএমসির যৌথ উদ্যোগে ‘পদ্ধতিগত টেকসই বিল্ডিং ডিজাইন এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপনা বিষয়ক’ এক সেমিনারে বক্তারা এ কথা বলেন। নগরীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন চিটাগং চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম, বিশেষ অতিথি ছিলেন চেম্বারের সহসভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর ও বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। সেমিনারে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন প্র্যাক্সিসের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান নির্বাহী স্থপতি নাজলী হোসেন, আমব্রেলা পিএমসির সিইও ইকবাল চৌধুরী এবং ট্রাইটেকের পরিচালক আবু আল মোতালিব। এ সময় অন্যদের মধ্যে চেম্বার পরিচালক একেএম আক্তার হোসেন, মো. অহীদ সিরাজ চৌধুরীসহ নির্মাণ খাতের বিভিন্ন নেতৃস্থানীয় প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথি চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল বলেন, ‘চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন জঙ্গল সলিমপুরে প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষুণœ রেখে নগরায়ণের পরিকল্পনা নিয়েছে। এ ধরনের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা না হলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আমাদের অস্তিত্ব হারিয়ে যাবে। বর্তমান সরকারের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রাগুলো ২০৩০ সালের মধ্যে অর্জন করতে হবে। পরিবেশবান্ধব স্থাপনা নির্মাণে সচেতনতা সৃষ্টির প্রয়োজন। হেলদি হোম ও হেলদি ইন্ডাস্ট্রি করার জন্য টেকসই প্রযুক্তি অত্যন্ত জরুরি, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজš§ উপকৃত হবে।’ বর্তমানে পরিবেশ সম্পর্কে মানুষের মানসিকতার ইতিবাচক পরিবর্তন হচ্ছে বলে মন্তব্য করে তিনি চীনের মহানগরগুলো থেকে ১ ঘণ্টা দূরত্বে গড়ে তোলা টেকসই শহরের উদাহরণ তুলে ধরেন।
সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, চট্টগ্রামের জন্য টেকসই স্থাপনা একটি নতুন ধারণা। প্রাকৃতিক ও ভৌগোলিকভাবে চট্টগ্রাম একটি সবুজ শহর। কাজেই চট্টগ্রামের স্থাপনাগুলোকে আরও বেশি টেকসই ও পরিবেশবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলা যায়। পরিকল্পিতভাবে পাহাড়গুলোকে ঘিরে পরিবেশবান্ধব আবাসিক এলাকা নির্মাণ করা যায়, যার মাধ্যমে চট্টগ্রামকে জ্বালানি সাশ্রয়ী সবুজ নগর হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। শিল্প খাতেও টেকসই প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে। লিড সার্টিফিকেশন (লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন) থাকলে সরকারও বিদেশি ক্রেতাদের কাছ থেকে অনেক সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় চট্টগ্রামকে আরও ‘গ্রিনার সিটি’ হিসেবে গড়ে তোলা যাবে বলে তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য অনেক দেশ টেকসই প্রযুক্তি ব্যবহার করলেও বাংলাদেশ এক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। কাজেই এ বিষয়ে আমাদের কাজ করা দরকার। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যয় সাশ্রয়ের বিষয়টি মাথায় রেখে জ্বালানি সাশ্রয়ী প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যায়। তবে এসব প্রকল্পে প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করে খরচ কমানো গেলে ‘সাসটেইনেবল কনসেপ্ট’ কার্যকর হবে। তিনি তৈরি পোশাকের বাইরেও অন্যান্য পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে আরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব বলে মনে করেন। অনুষ্ঠানে প্রশ্নোত্তর পর্বে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।