Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 9:57 pm

মন্ত্রণালয়ের আপত্তিতে ব্যয় কমল ২২৯ কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পটি প্রায় তিন বছর ধরে ঝুলছে। সর্বশেষ এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে চার লেন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এজন্য গত সেপ্টেম্বরে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) চূড়ান্ত করা হয়। সে সময় প্রকল্পটির ব্যয় নিয়ে আপত্তি তোলে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি প্রকল্প ব্যয় ২২৯ কোটি টাকা কমানো হয়েছে।

তথ্যমতে, গত সেপ্টেম্বরে ঢাকা-সিলেট চার লেন নির্মাণ প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৭ হাজার ৩৯০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। তবে সংশোধিত হিসাবে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ১৬১ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।

প্রসঙ্গত, ঢাকা-সিলেট চার লেন প্রকল্পের ব্যয় নিয়ে শেয়ার বিজে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। গত ২৫ অক্টোবর সর্বশেষ প্রকল্পটির উচ্চ ব্যয় নিয়ে প্রতিবেদন করা হয়েছে। এতে বলা হয়, ২০১৭ সালে ঢাকা-সিলেট চার লেন নির্মাণে প্রাথমিকভাবে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯ হাজার ৫১০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।

যদিও চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির সঙ্গে দর কষাকষির সময় প্রকল্পটির ব্যয় দাঁড়ায় ১০ হাজার ৩৭০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। তবে জিটুজি ভিত্তিতে ঢাকা-সিলেট চার লেন নির্মাণে চায়না হারবার প্রস্তাব করেছিল ১৬ হাজার ৩৪৯ কোটি ২১ লাখ টাকা। পরে কয়েক দফা বৈঠকশেষে প্রায় ১৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকায় তা চূড়ান্ত করা হয়। তবে চায়না হারবারকে কালো তালিকাভুক্ত করার পর বিকল্প অর্থায়ন খোঁজা শুরু হয়।

গত বছর ঢাকা-সিলেট চার লেন নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করে এডিবি। এর পরিপ্রেক্ষিতে সংস্থাটির সঙ্গে আলোচনা শুরু করে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। সম্প্রতি প্রকল্পটি ব্যয় চূড়ান্ত করা হয়েছে ১৭ হাজার ১৬১ কোটি টাকা। এ হিসাবে ব্যয় বেড়ে গেছে প্রায় দুই হাজার ৬৬১ কোটি টাকা।

ব্যয় বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে ডিপিপিতে বলা হয়েছে, জিটুজি পদ্ধতিতে ২০১৭ সালে বাস্তবায়নের জন্য পূর্ত কাজের সব প্যাকেজের ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছিল প্রায় ১৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ছয় বছরে মেয়াদি পারফরম্যান্স বেইজড মেইনটেন্যান্স ও প্রাইস অ্যাডজাস্টমেন্ট অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রস্তাবিত প্রকল্পে প্রাক্কলিত ব্যয় দাঁড়িয়েছে ছয় বছরে মেয়াদি পারফরম্যান্স বেইজড মেইনটেন্যান্স ও প্রাইস অ্যাডজাস্টমেন্টসহ প্রায়

 ১৭ হাজার ১০০ কোটি টাকা। এর কারণ হলো- প্রথমত, জিটুজি পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পের পূর্ত কাজের ব্যয় প্রাক্কলন কর হয়েছিল সওজ রেট শিডিউল ২০১৫ অনুযায়ী। আর প্রস্তাবিত প্রকল্পে সওজ রেট শিডিউল ২০১৯-এর ভিত্তিতে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে।

দ্বিতীয়ত, জিটুজি পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের জন্য মূল মহাসড়কের উভয় পাশে তিন দশমিক ৬০ মিটারের সার্ভিস লেন রাখা হয়েছিল। আর প্রস্তাবিত প্রকল্পে সাড়ে পাঁচ মিটারের সার্ভিস লেন রাখা হয়েছে। তৃতীয়ত, অবকাঠামোগত কাজের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। চতুর্থত, মহাসড়কের স্থায়িত্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৬০/৭০ গ্রেডের বিটুমিনের পরিবর্তে উন্নত মানের পলিমার মডিফাইড বিটুমিন ব্যবহার করা হবে। পাশাপাশি প্রথাগত বেস টাইপ-১-এর পরিবর্তে ওয়েট মিক্সড ম্যাকাডাম অন্তর্ভুক্ত করে ডিজাইন করা হয়েছে।

তথ্যমতে, ঢাকা-সিলেট রুটে ২০৯ দশমিক ৩৩ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা ছাড়াও উভয় পাশে ধীরগতির যানবাহনের জন্য পৃথক সার্ভিস লেন নির্মাণ করা হবে। এছাড়া পুরো চার লেনের ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলো সরলীকরণ করা হবে, যাতে ৮০ কিলোমিটার গতিতে যান চলাচল করতে পারে। এছাড়া প্রকল্পটির আওতায় ৩২১টি কালভার্ট, ৭০টি ছোট-মাঝারি সেতু, পাঁচটি রেল ওভারপাস, চারটি ফ্লাইওভার, ১০টি আন্ডারপাস ও ৪২টি ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করা হবে। ১৩টি প্যাকেজে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।

প্রকল্পটি বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রাথমিকভাবে ঢাকা-সিলেট চার লেন নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। চীনের অর্থায়নের সময় তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা। আর এডিবির অর্থায়নে এ ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে কিলোমিটারপ্রতি ৮১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।

এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের একজন যুগ্ম সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চার লেনটি নির্মাণ ব্যয় আরও বাড়তে পারে। কারণ এডিবির অর্থায়নে ১৩টি প্যাকেজে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। এতগুলো প্যাকেজের আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান, মূল্যায়ন ও ঠিকাদার নিয়োগেই এক বছরের বেশি সময় পেরিয়ে যাবে। এরপর বাস্তবায়ন যত বিলম্বিত হবে দরপত্রের আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড অনুসারে (ফিডিক শর্তানুসারে) প্রকল্প ব্যয় তত বৃদ্ধি পাবে। তাই ঢাকা-সিলেট চার লেন নির্মাণব্যয় শেষ পর্যন্ত কত দাঁড়াবে তা বলা যাচ্ছে না।

উল্লেখ্য, ঢাকা-সিলেট চার লেন নির্মাণে এডিবির ঋণ দেওয়ার কথা ১৩ হাজার ৬১১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। বাকি তিন হাজার ৫৫০ কোটি ২৯ লাখ টাকা সরকারি তহবিল থেকে সরবরাহ করা হবে। তবে ঢাকা থেকে সিলেট হয়ে তামাবিল পর্যন্ত চার লেন নির্মাণে ৯৯০ দশমিক ২৭ একর জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। এজন্য সরকারি অর্থায়নে পৃথক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ফলে ঢাকা-সিলেট চার লেন নির্মাণে জমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও পরিষেবা সংযোগ লাইন স্থানান্তরে খুব বেশি অর্থ প্রয়োজন হবে না।