নিজস্ব প্রতিবেদক: রাশিয়ার আক্রমণের পর ইউক্রেনের যুদ্ধ পরিস্থিতি বাংলাদেশ এখনও ‘পর্যবেক্ষণ’ করছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আলোচনা হয়েছে যে আমরা অবজার্ভ করছি। ডেফিনিটলি আমরা তো যুদ্ধের পক্ষে কোনো কথা বলিনি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল মন্ত্রিসভার এই নিয়মিত বৈঠকে হয়। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সভায় যোগ দেন সরকারপ্রধান।
পরে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে এসে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা বলা হয়েছে যে, পরারাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা সবাইকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, এটা একটু অবজার্ভ করার জন্য, আরও দু-এক দিন। পোল্যান্ড ও রোমানিয়ায় আমাদের যারা রাষ্ট্রদূত রয়েছেন, তারা অলরেডি ওয়াচ করছেন যে কী হচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশিদের কী অবস্থা, তারা আপডেট দিচ্ছেন। সব জিনিসই তারা অবজার্ভ করছেন, আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে।’
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীন হওয়া ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগ দিতে চায়, যা নিয়ে রাশিয়ার ঘোর আপত্তি। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্ররা ইউক্রেনকে সমর্থন দিচ্ছে, এ নিয়ে উত্তেজনা চলছিল সাড়ে তিন মাস ধরে। এরই মধ্যে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে টেলিভিশনে ঘোষণা দিয়ে ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু করেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। এর জবাবে রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে চলেছে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের পশ্চিমা মিত্ররা।
সামগ্রিক পরিস্থিতিতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা। রাশিয়ার সহযোগিতা নিয়েই পাবনার রূপপুরে নির্মিত হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের নিষেধাজ্ঞার কারণে ওই প্রকল্প কোনো জটিলতায় পড়বে কি না, সে প্রশ্নও আসছে।
এ বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য এখনও আসেনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বলেছিলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। আশা করছি কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’ আর বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেছিলেন, ‘মহামারিতে ক্ষত-বিক্ষত বিশ্ব ভয়ংকর যুদ্ধ দেখতে আগ্রহী নয়। বাংলাদেশও উদ্ভূত পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি চায় এবং সেটি হতে পারে জাতিসংঘ চার্টারের আলোকে।’
তার আগের দিন ঢাকায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমও পরিস্থিতি ‘পর্যবেক্ষণ’ করার কথা বলেছিলেন। তিনি বলেন, ‘লার্জলি আমাদের পজিশন হলো, নন-ইন্টারফেয়ারেন্স এবং বিশ্বে যখন এই পরিস্থিতি তৈরি হয়, দুটি পক্ষ তৈরি হয়ে যায়, তখন দুই পক্ষ এসে শুধু বাংলাদেশ নয়, সব দেশের কাছে তাদের অবস্থানগুলো স্পষ্ট করবেন। বিশেষ করে যে দেশগুলো অপেক্ষাকৃত নিরপেক্ষ পজিশন মেইনটেইন করে, তারই ধারাবাহিকতায় তারা কথা বলেছে, নাথিং রং। আমাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছি পহেলা ফেব্রুয়ারির স্টেটমেন্টের আলোকে।’
ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়ার সৈন্য সমাবেশ নিয়ে পশ্চিমাদের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে গত ১ ফেব্রুয়ারি এক বিবৃতিতে ‘আলোচনার ভিত্তিতে’ সমস্যার সমাধান করতে সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল বাংলাদেশ।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যে কোনো রিজিয়নে, বাংলাদেশ বিশ্বাস করে যে, শান্তি ও স্থিতিশীলতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সেটা কেবল ওই অঞ্চলের জনগণের জন্যই নয়।’
২৪ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধ শুরুর পর বাংলাদেশ সরকারের আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ইউক্রেনে সম্প্রতি সংঘাত বাড়ার ঘটনায় বাংলাদেশ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এই ধরনের সংঘাত পুরো অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে চরমভাবে প্রভাবিত করতে পারে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এ কারণে আমরা সব পক্ষকে সর্বোচ্চ মাত্রার সংযম, দ্বন্দ্ব নিরসন এবং সংকট সমাধানে কূটনীতি ও সংলাপের পথ ফেরার প্রচেষ্টা নেয়ার আহ্বান জানাই।’