মন্দায় ইউরো জোন, জ্বালানি ও সুদহার বাড়তে পারে

শেয়ার বিজ ডেস্ক: সামান্য মন্দার কবলে পড়েছে ইউরো জোন। তবে পুুরো ইউরোপের অর্থনীতি মন্দার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। খবর সিএনএন ও দ্য গার্ডিয়ান।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ২৮টি সদস্য দেশের মধ্যে ২০টিকে নিয়ে গঠিত হয় ইউরো জোন বা ইউরো অঞ্চল। এসব দেশ তাদের প্রচলিত একক মুদ্রা হিসেবে ইউরো ব্যবহার করে। ইইউর বাকি ৯টি সদস্যরাষ্ট্র তাদের নিজস্ব জাতীয় মুদ্রা ব্যবহার করে।

প্রকাশিত পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ইউরো জোনে আগের প্রান্তিকের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে জিডিপি কমেছে শূন্য দশমিক এক শতাংশ। তাছাড়া ২০২২ সালের চতুর্থ প্রান্তিকেও মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কমে শূন্য দশমিক এক শতাংশ।

সংজ্ঞা অনুযায়ী পরপর দুই প্রান্তিকে যদি কোনো অর্থনীতি সংকুচিত হয় তাহলে তাকে মন্দা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সে হিসেবে ইউরোজোন মন্দায় পড়েছে।

এদিকে গত বছর শূন্য দশমিক দুই শতাংশ কমার পর চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে পুরো

ইউরোপীয় ইউনিয়নের জিডিপি বেড়েছে শূন্য দশমিক এক শতাংশ। তার মানে, পুরো অঞ্চলটি মন্দা এড়াতে পেরেছে।

ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের প্রধান ইউরোপবিষয়ক অর্থনীতিবিদ অ্যান্ড্রু কেনিংহাম বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও ক্রমবর্ধমান সুদের হারের সংমিশ্রণে ভোক্তাদের ব্যয়ে মারাত্মকভাবে প্রভাব ফেলেছে।

চলতি বছরে বাকি সময় অর্থনীতি আরও বেশি সংকুচিত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এদিকে চলতি বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের জন্য বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি আউটলুক বাড়িয়েছে বিশ্বব্যাংক। তবে সুদের উচ্চ হারসহ নানা কারণে পূর্বাভাসের চেয়ে কমবে আগামী বছরের অর্থাৎ ২০২৪ সালের বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি।

চলতি বছরে ইউরো জোনের অর্থনীতি মন্দায় পড়বে এমন আশঙ্কার কথা জানিয়ে আসছিল বৈশ্বিক সংস্থাগুলো। তবে গত জানুয়ারিতে কিন্তু সেই হতাশায় কিছুটা আশার আলো দেখান ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (ইসিবি) প্রধান ক্রিস্টিন লাগার্দে। তিনি বলেছিলেন, প্রাথমিক যে আশঙ্কা করা হয়েছিল তার চেয়ে ২০২৩ সালে ভালো করবে ইউরো জোনের অর্থনীতি।

আশা করছি মন্দা এড়িয়ে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারবে এ অঞ্চল।

তিনি আরও বলেছিলেন, গত কয়েক সপ্তাহ যাবৎ আমরা যেসব খবর পাচ্ছি তা অনেক বেশি ইতিবাচক। এখন অনেকেই বলছেন, বড় ধরনের মন্দায় নয় বরং ২০টি দেশের এ ক্লাব কিছুটা অর্থনৈতিক সংকোচনে যেতে পারে। এমনকি সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক দেশ জার্মানি মন্দা এড়াতে পারবে।

চলতি বছরের শুরুতে ইসিবির প্রত্যাশা ছিল, ২০২৩ সালে ইউরো জোনের অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি আসবে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ। তাই বিশ্লেষকরা বলেছিলেন, আমরা বলছি না এটি একটি চমৎকার বছর, কিন্তু এটি আমরা যা ভয় করেছি তার চেয়ে অনেক ভালো। মূলত ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইউরোপে জ্বালানির দাম ব্যাপকভাবে বাড়লেও বছরের শুরুতে তা কমতে শুরু করে। এছাড়া শীতের তীব্রতা কম থাকায় গ্যাস ঘাটতির ভয়ও কাটিয়ে ওঠে দেশগুলো। বিশেষ করে জ্বালানির দাম কমায় ইউরো জোনে মূল্যস্ফীতি কমতে শুরু করে। ২০২২ সালের অক্টোবরে এ অঞ্চলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১০ দশমিক ৬ শতাংশ হয়েছিল।

এর আগে কভিড-১৯ মহামারির কারণে ইউরো অঞ্চলের দেশগুলো ডাবল-ডিপ রিসেশন, অর্থাৎ দুই দফা অর্থনৈতিক মন্দার কবলে পড়ে। একটি মন্দা কাটিয়ে অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি শুরু হওয়ার অল্প কিছুদিনের মধ্যে আবার মন্দায় পড়াকে ডাবল-ডিপ রিসেশন বলা হয়। ইউরো জোনেও প্রথম দফার মন্দা কাটানোর পর আবার ২০২০ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর ও ২০২১ সালের জানুয়ারি-মার্চে টানা মন্দায় পড়ে। দুই দফা মন্দায় ভোগার পর ইউরো জোন ২০২১ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এপ্রিল-জুনে অর্থনীতিতে দুই শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। সেই সুবাদে এসব দেশের মন্দামুক্ত হওয়া নিশ্চিত হয়। তথ্যউপাত্ত অনুযায়ী আলোচ্য প্রান্তিকে ইউরো জোন তথা ইউরো অঞ্চলের সব দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন নিশ্চিত হয়।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০