মন্দার কারণে কনটেইনার হ্যান্ডলিং কমেছে ৪০% 

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: দেশে বেসরকারি খাতে গড়ে ওঠা ২১টি কনটেইনার ডিপোতে খালি, আমদানি ও রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার  রাখার সক্ষমতা আছে প্রায় ৯০ হাজার টিইইউএস। এর বিপরীতে বর্তমানে বেসরকারি ডিপোগুলোয় কনটেইনার আছে ৫০ হাজার টিইইউএস। অর্থাৎ সক্ষমতার ৬০ শতাংশ ব্যবহƒত হচ্ছে। ফলে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর আয় কমেছে; যা এ খাতের উদ্যোক্তাদের চিন্তার প্রধান।

বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো’স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা যায়, দেশে চলমান ডলার সংকটে আমদানি নিয়ন্ত্রণসহ নানা কারণে দেশের সব ধরনের এলসি খোলায় কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। ফলে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের গতি কমছে। এতে বেসরকারিভাবে গড়ে ওঠা ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোগুলোতে খালি, আমদানি ও রপ্তানিবাহী কনটেইনার হ্যান্ডলিং ৩০ শতাংশের বেশি কমেছে। বর্তমানে দেশে বেসরকারি খাতে গড়ে ওঠা ২১টি কনটেইনার ডিপোতে খালি, আমদানি ও রপ্তানিপণ্যবাহী কনটেইনার রাখার সক্ষমতা আছে প্রায় ৯০ হাজার টিইইউএস। এর বিপরীতে বর্তমানে বেসরকারি ডিপোগুলোতে কনটেইনার আছে ৫০ হাজার টিউইউএস। অর্থাৎ সক্ষমতার ৬০ ব্যবহƒত হচ্ছে। বাকি ৪০ শতাংশ ব্যবহƒত হচ্ছে না; যা এ খাতের উদ্যোক্তাদের চিন্তার প্রধান। কারণ এ খাতে আয় কমেছে।

আরও জানা যায়, ২০২৩ সালে দেশে বেসরকারি খাতে গড়ে ওঠা ২১টি কনটেইনার ডিপোতে খালি, আমদানি ও রপ্তানিবাহী মোট কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৮ লাখ ৭৭ হাজার (টুয়েন্টি ফুট ইকুয়েভেলেন্ট ইউনিট) বা একক কনটেইনার; যা ২০২২ সালে ছিল নয় লাখ ৪৬ হাজার ৭৮২ টিইইউএস। আর ২০২১ সালে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ ছিল দশ লাখ ২২ হাজার ২১২ টিইউই। অর্থাৎ দুই বছরের ব্যবধানে কমেছে এক লাখ ৪৫ হাজার ২১২ টিইইউএস। যদিও ২০২০ সালে মোট কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ৭৫ হাজার ২০৫ একক।

অপরদিকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের মূল জেটি, ঢাকার কমলাপুর কনটেইনার ডিপো ও কেরানীগঞ্জের পানগাঁও নৌ-টার্মিনালে আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহী ও খালি কনটেইনার পরিবহন হয়েছে ৩০ লাখ ৫০ হাজার। ২০২২ সালে পরিবহন হয় ৩১ লাখ ৩২ হাজার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে কমেছে প্রায় ৯১ হাজার কনটেইনার। আর ২০২০ সালের মোট কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল ২৮ লাখ ৩৯ হাজার ৯২৭ একক।

আমদানিকারক ও বন্দরব্যবহারকারীরা বলেন, ২০২২ সালের মাঝামাঝি থেকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও ডলার-সংকটে পণ্য আমদানি কমতে থাকে। আর ২০২৩ সাল পুরো বছরজুড়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণে আরও কড়াকড়ি অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই থেকে ডলার-সংকট চলমান। ফলে দেশে আমদানি ও রপ্তানির পরিামণ কমেছে। যার প্রতিফলন বন্দর ও বেসরকারি মালিকানাধীন গড়ে ওঠা আইসিডিগুলোয় কনটেইনার রাখার সক্ষমতার ৫০ শতাংশও ব্যবহার হচ্ছে না।

চট্টগ্রামের আইসিডিগুলো থেকে প্রতিদিন গড়ে আড়াই হাজার টিইইউএস কনটেইনার বন্দরে নিয়ে যাওয়া হতো। বর্তমানে তা দেড় হাজারে নেমে এসেছে। এতে আইসিডিতে কনটেইনার হ্যান্ডলিংসহ সার্বিক আয় কমছে। ফলে প্রতিটি অনেক আইসিডি এখন লোকসানের দিকে আছে।

এ বিষয়ে বিকডা সচিব রুহুল আমিন সিকদার শেয়ার বিজকে বলেন, বর্তমানে আমাদের ডিপোগুলোর সক্ষমতা ৯০ হাজার একক। এর মধ্যে আছে ৫৫ হাজার একক কনটেইনার। এর মধ্যে ৪৫ হাজার একক কনটেইনার খালি কনটেইনার। ফলে ডিপোগুলোর আয় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমেছে। আগে আমাদের মাসে ৭০ হাজার একক কনটেইনার রপ্তানি কনটেইনার হ্যান্ডলিং হতো, তা এখন হচ্ছে ৫৫ হাজারের মতো। আর আমদানি কনটেইনার হ্যান্ডলিং হতো ২৫ হাজার একক; যা এখন হচ্ছে ১৮ হাজার একক কনটেইনার। এতে কয়েকটি ভালো অবস্থানে থাকলে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান লোকসানে চলে গিয়েছে। তিনি আরও বলেন, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বব-অক্টোবর মাস থেকে রপ্তানি কনটেইনার কমে যায়। অপরদিকে ডলার সংকটের কারণে আমদানিও কমেছে। ফলে দেশের সার্বিক আমদানি ও রপ্তানি কমে যাওয়ার প্রভাবে আমাদের ডিপোগুলোর কনটেইনার হ্যান্ডলিং কমেছে। এতে অপূরণীয় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

চট্টগ্রাম বন্দরের ২৬ কিলোমিটারের মধ্যে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে গড়ে ওঠে ২১টি এই কনটেইনার ডিপো। এসব আইসিডি প্রতিষ্ঠানের ধারণক্ষমতা ৯০ হাজার একক কনটেইনার। বর্তমানে রপ্তানি পণ্যের ৯০ শতাংশ ডিপোর মাধ্যমে কনটেইনারে বোঝাই হয়। আর ৩৮ ধরনের আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ থেকে নামানোর পর ডিপোতে নিয়ে খালাস করতে হয়। এর পরিমাণ মোট আমদানির ২১ শতাংশ। অর্থাৎ রপ্তানিতে ৯০ শতাংশ এবং আমদানিতে ২১ শতাংশ পণ্যের কনটেইনার বেসরকারি ডিপোতে খালাস হয়।

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০