Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 4:56 pm

মন্দার হাওয়া হাইপ্র্রোফাইল কোম্পানির শেয়ারের গায়ে

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: দীর্ঘদিন থেকে মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ করছে দেশের পুঁজিবাজারে। মন্দার কবল থেকে বাদ পড়েনি ছোট-বড় কোনো কোম্পানি। একযোগে কমছে মৌলভিত্তি বা দুর্বলÑসব ধরনের শেয়ার ও ইউনিট দর। মন্দার ছোবল থেকে রেহাই পায়নি হাইপ্রোফাইল কোম্পানি। পতনের ধাক্কা লেগে অন্যান্য কোম্পানির মতো এসব শেয়ারদরও নিম্নমুখী রয়েছে।

সাধারণত যেসব কোম্পানির আর্থিক ভিত্তি শক্ত ও শেয়ারহোল্ডাররা সন্তোষজনক লভ্যাংশ দিয়ে থাকেন, সেসব প্রতিষ্ঠানকে মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানি বলা হয়। এই দৌড়ে এগিয়ে রয়েছে বহুজাতিক কোম্পানিসহ দেশিও কিছু ভালোমানের কোম্পানি। এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করলে লাভ না হলেও লোকসান হওয়ার শঙ্কা অনেক কম। সে কারণে এ ধরনের কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে পরামর্শ দেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। কিন্তু পুঁজিবাজারের মন্দার হাওয়ায় বর্তমানে এই ধরনের কোম্পানিতেও উল্টো পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে।

কোম্পানিগুলোর লেনদেন চিত্র লক্ষ করলে দেখা যায়, পতনের জের ধরে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর শেয়ারদর বর্তমানে অনেকটাই কমে গেছে। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর অবস্থান করছে গত দুই বছরের সর্বনি¤œ অবস্থানে। প্রতিটি শেয়ার পাওয়া যাচ্ছে ৯৭০ টাকায়। দুই বছরের মধ্যে এ শেয়ার সর্বোচ্চ চার হাজার ৯০৪ টাকায় লেনদেন হয়।

একই অবস্থা বাজারের আলোচিত কোম্পানি গ্রামীণফোনের। তালিকাভুক্তির পর থেকে কোম্পানিটি বরাবরই সন্তোষজনক লভ্যাংশ দিয়ে আসছে। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে বাজার মন্দার প্রভাব পড়ে কোম্পানিটিতে। ফলে শেয়ারদর নামতে শুরু করে। পরে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) পাওনা নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে টানাপড়েন ও উচ্চ আদালতের দেওয়া রায়কে কেন্দ্র করে এই শেয়ারদর নিম্নমুখী হতে শুরু করে, বর্তমানে যা অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি শেয়ার পাওয়া যাচ্ছে ২৮৬ টাকায়। দুই বছর আগে ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি কোম্পানিটির শেয়ার সর্বোচ্চ ৫১০ টাকা ৭০ পয়সায় লেনদেন হয়।

মন্দার হাওয়া লেগেছে আরেক কোম্পানি বাটা শু’র গায়েও। এই প্রতিষ্ঠানটিও প্রতি বছর শেয়ারহোল্ডারদের ভালো লভ্যাংশ দিয়ে আসছে। এখনও শীর্ষ শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএসধারীর তালিকায় রয়েছে কোম্পানিটি। মন্দার কবলে পড়ে সম্প্রতি এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদরও অনেকটাই নেমে এসেছে। বর্তমানে এই বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার মিলছে ৬৯৬ টাকায়। দুই বছর আগেও শেয়ারটি এক হাজার ২৬৫ টাকায় লেনদেন হয়।

এদিকে মন্দার কারণে দুই হাজার ৯১৫ টাকা থেকে এক হাজার ৩৮০ টাকায় নেমে এসেছে বার্জার পেইন্টের শেয়ারদর। প্রতিষ্ঠানের লেনদেন চিত্র লক্ষ করলে দেখা যায়, গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে এই প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর নিম্নমুখী হতে শুরু করে। বর্তমানে যা দুই বছরের মধ্যে সবচেয়ে নিচে অবস্থান করছে।

বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টরা বলেন, এসব শেয়ারদর কোম্পানির মার্কেট ভ্যালুর চেয়ে অনেক কমে গেছে। এটা হয়েছে মূলত সার্বিক বাজার পরিস্থিতির জন্য। বাজার মন্দার কারণে এসব শেয়ারদর কমে গেছে। কিন্তু এটা দীর্ঘ সময় থাকবে না। কারণ এসব কোম্পানির আর্থিক অবস্থা ভালো। বাজার ঘুরে দাঁড়ালেই এসব শেয়ার আবার ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই।

এ প্রসঙ্গে ডিএসই পরিচালক রকিবুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, ভালো কোম্পানির শেয়ারদর কমে গেলেও এতে চিন্তার কিছু নেই। কারণ এসব প্রতিষ্ঠানে মন্দা পরিস্থিতি বেশি দিন থাকে না। অন্যদিকে দর কমলেও লভ্যাংশ নিয়ে এসব কোম্পানি থেকে লোকসান পোষানো যায়। যে কারণে এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে ভালোবাসেন বিনিয়োগকারীরা।

অন্যদিকে পতনের কারণে বহুজাতিক কোম্পানির মতো মৌলভিত্তি সম্পন্ন দেশি কোম্পানির শেয়ারদরেও মন্দাদশা চলছে। এই ধরনের বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারদর বর্তমানে তলানিতে রয়েছে।

বর্তমানে তালিকাভুক্ত স্কয়ার ফার্মার শেয়ারদর নেমে এসেছে ১৯০ টাকায়। কোম্পানির লেনদেন চিত্রে দেখা যায়, গত দুই বছর ধরে এ শেয়ারদর নিম্নমুখী রয়েছে। তবে চলতি বছরে এটি আরও করুণ হয়। দুই বছর আগে এই প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর ছিল ৩৩৩ টাকার বেশি। চলতি বছরেও তা ২৭৭ টাকায় লেনদেন হতে দেখা যায়। কিন্তু পতনের মাত্রা বাড়তে থাকায় অন্যান্য কোম্পানির মতো এ শেয়ারের প্রতিও বিনিয়োগকারীদের আগ্রহে ভাটা পড়ছে।

কমে গেছে ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টের শেয়ারদরও। বাজারে এই কোম্পানির সুনাম থাকলেও অন্যসব দুর্বল কোম্পানির মতো এ কোম্পানির শেয়ারদরও বর্তমানে নিম্নমুখী রয়েছে। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর নেমে এসেছে ৯৬৩ টাকায়। গত এপ্রিল মাসেও এ শেয়ার এক হাজার ৭০৭ টাকায় লেনদেন হতে দেখা যায়। একই অবস্থা পদ্মা অয়েল, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, ফার্মা এইড, এসিআই, যমুনা অয়েলসহ আরও কিছু কোম্পানির।

এ বিষয়ে কথা হয় পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদের সঙ্গে। তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, আমাদের বাজারে ভালোমানের কোম্পানির সংখ্যা কম। দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য খুব বেশি কোম্পানি নেই। তাই ভালো কোম্পানির শেয়ারদর কমলেও তা বেশিদিন থাকে না। বিনিয়োগকারীরা ঘুরেফিরে আবার এ কোম্পানিতে আসেন।