মন্দায় মুনাফা কমেছে হাইডেলবার্গ সিমেন্টের

পলাশ শরিফ: প্রতিবছর জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত দেশে সিমেন্টের ব্যবসায় এক ধরনের ধীরগতি থাকে। এ বছর ধীরগতির সঙ্গে যোগ হয়েছে বন্যা ও জলাবদ্ধতা। এতে বড় উন্নয়ন প্রকল্পসহ নির্মাণকাজ থমকে গেছে। ফলে মন্দা লেগেছে সিমেন্টের ব্যবসায়। এর প্রভাবে চলতি আর্থিক বছরের প্রথম ছয় মাসে পিছিয়েছে হাইডেলবার্গ সিমেন্ট। এ সময় কোম্পানিটির আয় প্রায় ১১ দশমিক ৮৬ শতাংশ কমেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে উৎপাদন খরচ কমিয়েছে কোম্পানিটি। তারপরও ব্যবস্থাপনা ও বিক্রয়-বিপণন ব্যয় মেটাতে গিয়ে কর-পরবর্তী মুনাফা কমেছে।

কোম্পানির অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, চলতি আর্থিক বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে ঢাকা ও চট্টগ্রামের দুটি প্লান্টে উৎপাদিত সিমেন্ট বিক্রি করে প্রায় ৫৮৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা আয় করেছে হাইডেলবার্গ। এর আগের আর্থিক বছরের একই সময়ে এ আয়ের পরিমাণ প্রায় ৬৭৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। সেই হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির আয় কমেছে প্রায় ৭৯ কোটি ২৬ লাখ টাকা বা ১১ দশমিক ৮৬ শতাংশ। সর্বশেষ শেয়ারপ্রতি আয় ছয় টাকা ৫৮ পয়সা বা প্রায় ৩৪ শতাংশ কমেছে।

আয় কমার জন্য বর্ষা মৌসুম, প্রাকৃতিক দুর্যোগ-জলাবদ্ধতার কারণে সৃষ্ট মন্দাকেই দায়ী করছেন হাইডেলবার্গের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। আলাপকালে কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়কে মন্দার সময় বলে গণ্য করা হয়। বিশেষ করে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত। কারণ এটা বৃষ্টি-বন্যা ও ঝড়-জলোচ্ছ্বাসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়। তাই বছরের এই সময়ে সিমেন্টের চাহিদা কম থাকে। তবে এবার মন্দাটা একটু বেশি। বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম কয়েক মাস ধরে জলাবদ্ধতার মধ্যে রয়েছে। তাই সেখানে অবকাঠামো উন্নয়ন-নির্মাণকাজে ভাটা পড়েছে। একইভাবে রাজধানীতেও নির্মাণকাজে গতি নেই। এসব কারণেই এ বছর আয়-মুনাফা বেশি মাত্রায় কমেছে।’

তবে আয় কমলেও ব্যয় বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এ সময়ে বিক্রয়-বিপণন ব্যয় প্রায় দুই কোটি ৯৪ লাখ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। একইভাবে বিনিয়োগকারীদের পছন্দের তালিকায় থাকা কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা ব্যয় প্রায় এক কোটি বেড়ে প্রায় ২৭ কোটি ২৭ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। আয় কমলেও অব্যাহত ব্যয় বৃদ্ধিতে এ সময়ে হাইডেলবার্গ সিমেন্টের কর-পরবর্তী মুনাফা প্রায় ৭১ কোটি ৮৩ লাখ টাকায় নেমেছে; যা এর আগের বছরের একই সময়ে প্রায় ১০৯ কোটি টাকা ছিল। সেই হিসাবে এক বছরে কর-পরবর্তী মুনাফা প্রায় ৩৭ কোটি ১৮ লাখ টাকা বা ৩৪ দশমিক ১০ শতাংশ কমেছে।

সংকট কাটিয়ে উঠতে নেওয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে কোম্পানিটির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, চলমান পরিস্থিতিতে ব্যয় কমাতে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে বেশকিছু প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও উৎপাদন খরচ কমছে। গত ছয় মাসে উৎপাদন খরচ প্রায় ৪০ কোটি ৫৩ লাখ টাকা কমেছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে মুনাফা কমার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে বেশি সময় লাগবে না। বাকি ছয় মাসে সংকট কাটিয়ে আয়-মুনাফায় বার্ষিক প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করছেন তারা।

এদিকে গত ছয় মাসের মধ্যে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত তিন মাসে প্রায় ২৭৯ কোটি ১২ লাখ টাকা আয় করেছে হাইডেলবার্গ সিমেন্ট। এ সময়ে উৎপাদন খরচ দাঁড়িয়েছে ২১১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এতে গ্রোস প্রফিট আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা কমে প্রায় সাড়ে ৬৭ কোটি টাকায় নেমেছে। দ্বিতীয় প্রান্তিকে ব্যবস্থাপনা, বিক্রয়-বিপণন ও আয়করসহ সব ব্যয় মেটানোর পর কোম্পানিটি ৩৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা কর-পরবর্তী মুনাফা করেছে; যা এর আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা কম।

উল্লেখ্য, ১৯৮৯ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানি হাইডেলবার্গ সিমেন্ট। বর্তমানে দেশের মোট সিমেন্টের চাহিদার ১৩ শতাংশ জোগান দিচ্ছে কোম্পানিটি। প্রায় ৫৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটির বর্তমান শেয়ার সংখ্যা প্রায় পাঁচ কোটি ৬৫ লাখ। হাইডেলবার্গ সিমেন্টের মোট শেয়ারের ৬০ দশমিক ৬৭ শতাংশই উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে রয়েছে। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ২৬ দশমিক ৭২ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে এক দশমিক ৪৬ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ১১ দশমিক ১৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। সর্বশেষ সমাপ্ত আর্থিক বছরে বিনিয়োগকারীদের ৩০০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। আয়-মুনাফায় নি¤œমুখী ধারার কারণে গত ছয় মাসে ১০৪ টাকা ১০ পয়সা দর হারিয়েছে কোম্পানিটি। গত সপ্তাহের সর্বশেষ কার্যদিবসে ডিএসইতে হাইডেলবার্গ সিমেন্টের প্রতিটি শেয়ার ৪৫২ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে।

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০