Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 5:37 am

মন্দা থেকে বের হতে পারছে না জার্মানি

শেয়ার বিজ ডেস্ক: রপ্তানি ও কারখানার আদেশ কমে যাওয়ায় মন্দা থেকে বের হতে পারছে না জার্মানি। দেশটির অন্যতম দৈনিক স্যুড ডয়চে সাইটুং জানিয়েছে, ২০২৪ সালে টানা দ্বিতীয় বছরের মতো মন্দার আশঙ্কা করছে জার্মান সরকার৷ দেশটির অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় পূর্বাভাস কমানোর ঘোষণা দেবে বলেও জানিয়েছে পত্রিকাটি৷ খবর: ডয়চে ভেলে।

২০২৪ সালে শুন্য দশমিক ৩ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির আশা করেছিল জার্মানি৷ তবে এর পরিবর্তে অর্থনীতি শুন্য দশমিক ২ শতাংশ সংকুচিত হবে বলে এখন মনে করছে সরকার৷ আজ বুধবার এই তথ্য প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছে স্যুড ডয়চে সাইটুং৷ রপ্তানি ও কারখানা আদেশ কমে যাওয়া এবং জ্বালানির উচ্চমূল্য এর কারণ বলে মনে করা হচ্ছে৷ জার্মানির পরিসংখ্যান অফিস ডেস্টাটিস জানিয়েছে, গত আগস্টে ফ্যাক্টরি অর্ডার বা কারখানা আদেশ কমেছে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ৷

তবে জার্মান সরকার ২০২৫ সালে ১ দশমিক ১ শতাংশ ও ২০২৬ সালে ১ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আশা করছে বলে জানিয়েছে পত্রিকাটি৷ সরকারের প্রস্তাব করা ‘প্রবৃদ্ধি উদ্যোগ’ কর্মসূচি এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে বলে স্যুড ডয়চে সাইটুংকে জানিয়েছেন অর্থনৈতিক বিষয়ক মন্ত্রী রব্যার্ট হাবেক৷ এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে কর ছাড়, শিল্পখাতের জন্য জ্বালানি মূল্যে ছাড়, লাল ফিতার দৌরাত্ম কমানো, বয়স্ক ব্যক্তিদের কাজ চালিয়ে যেতে প্রণোদনা দেওয়া, বিদেশি কর্মী আকর্ষণ করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ প্রভৃতি৷
২০২৩ সালে বিশ্বের বড় অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র জার্মানির অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছিল৷ কারখানা ও রপ্তানি আদেশ কমে যাওয়া এবং ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি এর কারণ ছিল সেই সময় মন্তব্য করেছিলেন বিশ্লেষকেরা৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি জার্মানির এই দশার জন্য আইএমএফ দায়ী করেছে দেশটির মূল্যস্ফীতি ও উৎপাদনশীল খাতে স্থবিরতাকে। এই খাত অতিমাত্রায় গ্যাসনির্ভর এবং রাশিয়ার কাছ থেকে গ্যাস না পাওয়ায় খাতটি ভুগছে। এছাড়া জার্মানির জনসংখ্যার একটা বড় অংশ বার্ধক্যে উপনীত হওয়ায় দক্ষ জনবলের অভাবে ভুগছে দেশটি। তবে মূল্যস্ফীতি কমায় এবং ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার কমানোয় চলতি বছর অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে পারে বলে আশা করা হয়েছিল৷

অর্থনৈতিক দুরবস্থা ছাড়াও জার্মানি আরও কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে৷ যেমন চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা, দক্ষ কর্মীর অভাব এবং জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানোর পথের নানান সমস্যা প্রভৃতি৷ চীন কভিডকালে অনেক নিয়ম জারি করেছিল। ফলে চীনের সঙ্গে জার্মানির বাণিজ্য সম্পর্কেও সমস্যা হয়েছিল। পরে চীন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। সেটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে মনে করা হচ্ছে। এসব কারণে ২০২৪ সালে জার্মান অর্থনীতি আরও চাঙ্গা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। চলতি বছর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এক দশমিক পাঁচ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারবে।

২০১০-এর দশক ছিল জার্মানির সোনালি সময়। ২০০০-এর দশকে শুরু হওয়া কর্মসংস্থানের ধারা পরের দশক অর্থাৎ ২০১০-এর দশকে এসে পূর্ণতা পায়। সাবেক চ্যান্সেলর গেরহার্ড শ্রোয়েডারের আমলে যে সংস্কার কর্মসূচি পরিচালনা করা হয়, তার বদৌলতে ২০০৭-০৯ সালের আর্থিক সংকট থেকেও বেঁচে যায় জার্মানি। সেই সঙ্গে চীনের মতো দেশে উন্নত ও তৈরি পণ্য এবং উদীয়মান বাজারে জার্মানির পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। ফলে দেশটিতে বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান হয়। ২০০০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে ২০১০-এর দশকের শেষাবধি পর্যন্ত জার্মানির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে মোট ২৪ শতাংশ, যেখানে ব্রিটেনের হয়েছে ২২ শতাংশ, ফ্রান্সের হয়েছে ১৮ শতাংশ। এমনকি ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ব্রেক্সিটের মতো জনতুষ্টিবাদী ধারাও দেশটিতে ছুঁতে পারেনি। কিন্তু ২০২০-এর দশকে এসে সব যেন ওলটপালট হয়ে যায়। জার্মানি যে অর্থনৈতিক মডেল নিয়ে গর্ব করত, সেই মডেল এখন জনগণের প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধি ও সেবার নাগাল দিতে পারছে না।