Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 6:38 pm

মরক্কোয় শক্তিশালী ভূমিকম্পে প্রাণহানি ৮০০ ছাড়িয়েছে

শেয়ার বিজ ডেস্ক: ছয় দশকের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী এক ভূমিকম্পে মরক্কোয় নিহতের সংখ্যা ৮০০ ছাড়িয়ে গেছে। স্মরণকালের ভয়াবহ এই ভূমিকম্পে আহত হয়েছেন আরও শত শত মানুষ। ধ্বংস হয়েছে অসংখ্য বাড়িঘর। খবর: বিবিসি।

গত শুক্রবার গভীর রাতে উত্তর আফ্রিকার দেশ মরক্কোর হাই এটলাস পর্বতমালায় রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ২ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভূমিকম্পের হালনাগাদ তথ্যে বলেছে, ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা গতকাল শনিবার পর্যন্ত ৮২০ জনে পৌঁছেছে। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৬৭২ জন।

স্থানীয় এক কর্মকর্তা বলেছেন, ভূমিকম্পে পার্বত্য অঞ্চলে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে। এসব এলাকায় পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের সবচেয়ে কাছের শহর মারাক্কেশের আতঙ্কিত বাসিন্দারা বাড়িতে না গিয়ে খোলা জায়গায় রাত কাটিয়েছেন।

ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ স্থাপনার অন্তর্ভুক্ত দেশটির পুরোনো ও ঐতিহ্যবাহী মারাক্কেশের ভবনগুলো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শহরের প্রাণকেন্দ্র জেমা আল-ফনা স্কয়ারের একটি মসজিদের মিনার ধসে গেছে। দেশটির উদ্ধারকারী কর্মীরা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে জীবিতদের উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করছেন।

স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেলে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট, কয়েকটি গাড়ির ওপরে ভেঙে পড়া ভবনের অংশ ও মসজিদ ভবন ভেঙে পড়ার কয়েকটি ছবি দেখা গেছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে এখনও কিছু জানায়নি দেশটির সরকার।

শহরটির এক বাসিন্দা মিলোদ স্ক্রউত বলেছেন, সবকিছুই সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা। তবে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। ভূমিকম্পে আহতদের শতাধিক স্বজন মারাক্কেশের স্থানীয় একটি হাসপাতালের বাইরে অপেক্ষা করছেন। শহরটির হাসপাতালে ভর্তি আহতদের বেশিরভাগ শহরের বাইরের পার্বত্য অঞ্চল থেকে এসেছেন। স্থানীয় হাসপাতালে গুরুতর আহতদের চিকিৎসা দেয়ার সক্ষমতা না থাকায় তাদের সেখানে নেয়া হয়েছে।

দেশটির ঐতিহ্যবাহী এই শহরের আরেক বাসিন্দা জাওহারি মোহাম্মদ লোকজন ভূমিকম্পের সময় নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য কীভাবে মরিয়া হয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, সেই দৃশ্য বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ভূমিকম্পের কারণে আমি এখনও বাড়িতে ঘুমাতে পারছি না। পুরোনো শহরটির বাড়িঘরগুলো অনেক পুরোনো। এখানে যদি একটি ঘর পড়ে যায়, তাহলে তার কারণে আরেকটি ধসে পড়বে। মরক্কোর পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর তারৌদন্তের কাছের একটি এলাকার বাসিন্দা শিক্ষক হামিদ আফকার। তিনি জানান, ভূমিকম্পের সময় তিনি বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছেন। কয়েকবার আফটারশকও অনুভূত হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। প্রায় ২০ সেকেন্ড ধরে ভূমিকম্পটি স্থায়ী ছিল। আমি দ্বিতীয় তলা থেকে নিচে নেমে আসার সঙ্গে সঙ্গে দরজা নিজে খুলে যায় এবং বন্ধ হয়ে যায়।

মরক্কোর রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বলছে, প্রথম কম্পনের ১৯ মিনিট পর ৪ দশমিক ৯ মাত্রার আরেকটি কম্পন অনুভূত হয়। ভূমিকম্পে অনেক ভবন বিধ্বস্ত হয়েছে।

মরক্কোর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। টেলিভিশন বিবৃতিতে তারা বলেছে, ভূমিকম্পটি আল হাউজ, ওয়ারজাজেট, মারাক্কেশ, আজিলাল, চিচাউয়া এবং তারউদান্ত প্রদেশে আঘাত হেনেছে। জাতিসংঘ মরক্কোর সরকারকে সাহায্য করতে প্রস্তুত বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন সংস্থাটির মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক।

দেশটির ভূমিকম্প কেন্দ্র বলেছে, শুক্রবার স্থানীয় সময় রাত ১১টার পর হাই এটলাসের ইঘিল এলাকায় ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। এর আগে মরক্কোয় ২০০৪ সালে শক্তিশালী ভূমিকম্পে ছয় শতাধিক মানুষ প্রাণ হারান।

মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস বলছে, ১৯৬০ সালের পর শুক্রবার এই ভূমিকম্প দেশটিতে সবচেয়ে প্রাণঘাতী। ওই বছর দেশটিতে শক্তিশালী এক ভূকম্পনে কমপক্ষে ১২ হাজার মানুষের প্রাণহানি হয়।