মরিচের গুঁড়া, স্টান গ্রেনেড ছুড়ে রোহিঙ্গা ঠেকাচ্ছে ভারত

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গা মুসলিমরা যাতে ভারতে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য দেশটির সীমান্ত বাহিনী তাদের ওপর মরিচের গুঁড়া ও স্টান গ্রেনেড ব্যবহার করছে।

ভারতে প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গা রয়েছে। তার মধ্যে ১৬ হাজার নিবন্ধিত শরণার্থী। তাঁরা দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, কাশ্মীরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে আছে। সম্প্রতি সরকার তাদেরকে ফের মিয়ানমারে পাঠানোর জন্য তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকারগুলোকে।

এর মধ্যে যাতে জোর করে দেশ থেকে বের করে না দেওয়া হয়, সেই আর্জি জানিয়ে ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন দুই মুসলিম নাগরিক। পাশাপাশি ভারত সরকার আদালতকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, এসব রোহিঙ্গা দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ, তাই তাদের দেশে রাখা ঠিক হবে না।

এর মধ্যে বাংলাদেশ সংলগ্ন পূর্বাঞ্চলের সীমান্তে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। ভারতের সঙ্গে মিয়ানমারের এক হাজার ৬০০ কিলোমিটারের বেশি সীমান্ত রয়েছে।

গতকাল শুক্রবার ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) নয়াদিল্লির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, ‘আমরা রোহিঙ্গাদের গুরুতর জখম কিংবা গ্রেপ্তার করতে চাই না। কিন্তু ভারতের মাটিতে আমরা তাদের দেখতেও চাই না।’

‘১০০ জনেরও বেশি রোহিঙ্গা যখন ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করছিল, তখন আমরা তাদের লক্ষ্য করে মরিচের গুঁড়া ও স্টান গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছি’, যোগ করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তের একটি বড় অংশের দায়িত্বে থাকা বিএসএফের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল আর পি এস যশওয়াল জানিয়েছেন, তাঁর বাহিনীর সদস্যদের মরিচের গুঁড়া ও স্টান গ্রেনেড ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।

মরিচের গুঁড়া সাধারণত চোখে অসম্ভব জ্বালা ধরায় এবং স্টান গ্রেনেড বিকট শব্দ ও ঝলকানি দিয়ে বিস্ফোরিত হয়। এতে কখনো কখনো মানুষ ভয়ে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।

ভারতে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রতি নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকার খুবই বিরাগ। গত বৃহস্পতিবারও দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং রোহিঙ্গাদের ‘অবৈধ অভিবাসী’ বলে উল্লেখ করেছেন। এমনকি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গোয়েন্দা তথ্যের বরাত দিয়ে সুপ্রিম কোর্টকে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো এসব রোহিঙ্গাদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে।

রোহিঙ্গা নাগরিকদের ওপর নজদারি বাড়াতে এর আগে দেশটির মুসলিম ধর্মীয় নেতাদের সহযোগিতা চেয়েছিল ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা।

কিছুদিন আগে নিরাপত্তা বাহিনী সদস্যরা আল-কায়েদার সদস্য সন্দেহে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশের দাবি, ওই যুবক মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য রোহিঙ্গাদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করছিলেন। বিভিন্ন অপরাধে বর্তমানে ভারতের কারাগারে ২৭০ জন রোহিঙ্গা আটক রয়েছেন।

নয়াদিল্লি পুলিশের কর্মকর্তা প্রমোদ সিং খোসাল রয়টার্সকে বলেন, ‘আমাদের কাছে রিপোর্ট আছে যে, আল-কায়েদা ভারত ও বাংলাদেশকে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করতে চাচ্ছে।’

‘আর এ কারণেই এটা পরিষ্কার যে, রোহিঙ্গারা ভারতের জন্য হুমকিস্বরূপ’ যোগ করেন দিল্লি পুলিশের ওই কর্মকর্তা।

গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন ও গণহত্যা শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। এর পর থেকে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে চার লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা।

এদিকে মিয়ানমারের এ ধরনের আচরণে নড়েচড়ে বসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা। তাদের পক্ষ থেকে এর নিন্দা জানানোসহ রোহিঙ্গা হত্যাকাণ্ড বন্ধের আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু এ সেনা অভিযান বন্ধে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি মিয়ানমার সরকার।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০