মর্যাদা রক্ষায় শিক্ষকদেরই এগিয়ে আসা উচিত

অনেক পেশার মধ্যে শিক্ষকতা পেশা অনন্য। শিক্ষকরা ‘মানুষ গড়ার কারিগর’ হিসেবে সম্মান পেয়ে আসছেন। এখন তা অনেকটা তলানিতে। গতকাল একটি সহযোগী দৈনিকের প্রধান প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘মানুষ গড়ার কারিগররা কোন পথে: রাজনীতি ও অর্থের পেছনে ছুটছেন অনেক শিক্ষক’। প্রতিবেদনটিতে মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকদের ভূমিকা নিয়ে একপ্রকার হতাশাই প্রকাশ পেয়েছে। যারা জাতি গঠনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, দিচ্ছেন এবং ভবিষ্যতেও দেবেন, তাদের প্রত্যেকের পেছনে সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে শিক্ষকদের। কিন্তু মহান এ পেশা আজ মহাসংকটে ঘুরপাক খাচ্ছে। বেশিরভাগ শিক্ষক রাজনীতির দুষ্টচক্রে আবদ্ধ হয়ে পড়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান বলেছেন, শিক্ষকদের মধ্যে বৃহত্তর সমাজেরই ঢেউ লেগেছে।

শিক্ষকদের মধ্যে বৃহত্তর সমাজের ‘ঢেউ’ লাগতেই পারে। কিন্তু তারা তাতে নিমজ্জিত হবেন, এটি কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। ন্যূনতম নৈতিকতা ধারণ না করলে তারা কীভাবে অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব হবেন? শিক্ষার্থীদের কাছে অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব হলেন শিক্ষক; তা তিনি প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয়, যে পর্যায়েরই হোন না কেন।

আগে শিক্ষকরা সর্বজনশ্রদ্ধেয় ব্যক্তি ছিলেন, এখন এটি আর ১০টি পেশার মতো নিছক চাকরি বৈকি। অভিযোগ উঠলেই তারা দোষী সাব্যস্ত হচ্ছেন, সেটি নয়; কিন্তু শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার বিষয়টি আমাদের নৈতিক দীনতাকেই তুলে ধরে। সবচেয়ে বড় কথাÑআখের গোছানোর প্রতিযোগিতায় তারাও অবতীর্ণ হচ্ছেন সমানতালে। এখন শিক্ষকদের দুর্নীতি শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের বাইরে কোচিং ও প্রাইভেট পড়ানো, নির্বাচনী পরীক্ষায় ফেল করলে আবার পরীক্ষা নিয়ে পাস দেখানো, পরীক্ষার ফরম পূরণে বোর্ড-নির্ধারিত ফি থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় এসব এখন ছোটখাটো অপরাধে পরিণত হয়েছে। শিক্ষকদের চাওয়া-পাওয়ার যেন শেষ নেই। ইচ্ছাপূরণে তারা নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন দিয়েছেন।

আরও বেশি পেতে তারা রাত-দিন ছুটছেন রাজনীতি ও অর্থের পেছনে। টেন্ডারবাজিসহ ভাগবাটোয়ারা নিয়ে নানা দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ছেন শিক্ষকরাও। এ থেকে উত্তরণে কোনোরূপ স্বজনপ্রীতি বা দুর্নীতির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগে শূন্য সহনশীলতায় ব্যবস্থা নিতে হবে। যোগ্যতম প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে অন্য পরিচয় সামনে আনা কোনোভাবেই ঠিক নয়। শিক্ষকদের মর্যাদা রক্ষায় শিক্ষকদেরই এহিয়ে আসতে হবে। শিক্ষকেরা দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়লে তা তাদের এবং জাতির জন্য লজ্জার। তাই সহকর্মীদের কর্মকাণ্ডে বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষক লজ্জিত, তাদেরও উচিত শিক্ষকদের মানমর্যাদা রক্ষায় ভূমিকা রাখা। শিক্ষক নিয়োগে সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ না করা, দলীয়করণ এবং অতিমাত্রায় রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় সংকট বাড়ছে। তাই এ থেকে রক্ষায় সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকারও প্রয়োজন।

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০