ব্র্যাক অন্বেষা। বাংলাদেশের প্রথম ক্ষুদ্রাকৃতির কৃত্রিম উপগ্রহ বা ন্যানো স্যাটেলাইট। গত ৭ জুলাই শুক্রবার বেলা ৩টা ১০ মিনিট থেকে মহাকাশে পৃথিবী প্রদক্ষিণ শুরু করেছে। সেই সময় আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (আইএসএস) থেকে বেরিয়ে আসে স্যাটেলাইটটি।
৪ জুন যুক্তরাষ্ট্রের কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে বাংলাদেশ সময় রাত ৩টা ৭ মিনিটে অন্বেষা উৎক্ষেপণ করা হয়। এটি স্পেসএক্স ফ্যালকন-৯ রকেটে চড়ে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছে। অন্বেষার যাত্রা শুরুর মুহূর্তটি সম্প্রচার করা হয় আইএসএস থেকে। জাপানের মহাকাশ সংস্থা ‘জাপান অ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সি’ থেকে স্কাইপির মাধ্যমে এটি দেখানো হয়। জাপানের কিউশু ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (কিউটেক) একটি প্রকল্পের আওতায় সেদিন বাংলাদেশসহ ঘানা, মঙ্গোলিয়া, নাইজেরিয়া ও জাপানের ন্যানো স্যাটেলাইট পৃথিবী প্রদক্ষিণ শুরু করে।
১০ সেন্টিমিটার ব্যাসার্ধের চৌকোনা স্যাটেলাইটটি বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে জাপানের ইনস্টিটিউটে তৈরি হয়। অন্বেষার নকশা, উপকরণ সংগ্রহ ও নির্মাণের পুরো কৃতিত্ব ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থীর। তারা হলেনÑরায়হানা শামস ইসলাম অন্তরা, আবদুল্লা হিল কাফি ও মাইসুন ইবনে মনোয়ার। তারা ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল (ইইই) বিষয়ে স্নাতক শেষের পর জাপানের কিউটেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করছেন।
পৃথিবী থেকে ৪০০ কিলোমিটার ওপরে অবস্থান করবে অন্বেষা। পৃথিবীর চারপাশ প্রদক্ষিণ করে আসতে সময় লাগবে ৯০ মিনিটের মতো। এটি প্রতিদিন ১৬ বার পৃথিবী প্রদক্ষিণ করবে। বাংলাদেশের ওপর দিয়ে দিনে চার থেকে ছয়বার উড়ে যাবে এটি। স্যাটেলাইটটি তৈরি করা হয়েছে গবেষণার উদ্দেশ্যে। এটা খুব নিচে থাকবে বলে অনেক হাইকোয়ালিটির ছবি পাওয়া যাবে। ছবি অ্যানালাইসিসের মাধ্যমে ভালো সুবিধা পাওয়া যাবে। মহাশূন্যের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ, কৃষি, দুর্যোগকালীন জরুরি অবস্থা, সমুদ্রসীমা ও দুর্যোগ মোকাবিলাসহ মহাকাশ সংক্রান্ত নানা বিষয়ে গবেষণার জন্য উচ্চমানের ছবি তুলে পাঠাবে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও ভারতের কাছ থেকে কৃত্রিম উপগ্রহের নেওয়া ছবি কিনতো বাংলাদেশ। এজন্য অনেক ব্যয় হতো। তা ছাড়া বাংলাদেশের ভূমিরূপ ও প্রকৃতি বোঝার উপযোগী হতো না সেসব ছবি। দেশি কৃত্রিম উপগ্রহের ফলে এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
ন্যানো স্যাটেলাইট সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এটি বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে নতুনভাবে পরিচিত করবে। তাদের বিশ্বাস, এর মাধ্যমে বিশ্বের নানা দেশের বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সক্ষম হবে বাংলাদেশ।
ন্যানো স্যাটেলাইট তৈরি বা উৎক্ষেপণের কাজ জাপানে হলেও বাংলাদেশ থেকে তা নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এজন্য গত ২৫ মে রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের চার নম্বর ক্যাম্পাস ভবনের ছাদে গ্রাউন্ড স্টেশন উদ্বোধন করা হয়।
Add Comment