মহাকাশে পরিভ্রমণ করছে কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু কমিউনিকেশনস স্যাটেলাইট-১। এর মধ্য দিয়ে মহাকাশ বিজ্ঞানের যুগে ৫৭তম দেশ হিসেবে যুক্ত হলো বাংলাদেশ। গত ১১ মে মধ্যরাতে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টারের লঞ্চ প্যাড থেকে সাত হাজার ৭০০ পাউন্ডের এ ভূ-উপগ্রহটিকে নিয়ে রওনা হয় ফ্যালকন-৯ (ব্লক ফাইভ) নামের রকেটটি। নানা দিক দিয়ে সম্ভাবনাময় বাংলাদেশের জন্য এটি বড় মাপের অর্জন। সাফল্যের সুখানুভূতির সঙ্গেই এ অর্জন নতুন দায়বদ্ধতার মুখে দাঁড় করিয়েছে বাংলাদেশকে। পাঠকের জন্য বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন হামিদুর রহমান
মহাকাশে প্রায় ৫০টি দেশের দুই হাজারের বেশি স্যাটেলাইট আছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে আবহাওয়া স্যাটেলাইট, পর্যবেক্ষক স্যাটেলাইট, ন্যাভিগেশন স্যাটেলাইট প্রভৃতি। এর মধ্যে বিএস-ওয়ান হলো যোগাযোগ ও সম্প্রচার স্যাটেলাইট। এর কাজ হলো টিভি চ্যানেলগুলোর স্যাটেলাইট সেবা নিশ্চিত করা, যার সাহায্যে চালু করা যাবে ডিটিএইচ বা ডিরেক্ট টু হোম ডিশ সার্ভিস। এছাড়া যেসব জায়াগায় অপটিক কেব্ল বা সাবমেরিন কেব্ল পৌঁছায়নি সেসব জায়গায় এ স্যাটেলাইটের সাহায্যে ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করা। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের অবস্থান ১১৯.১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমার কক্ষপথে। এর ফুটপ্রিন্ট বা কভারেজ হবে ইন্দোনেশিয়া থেকে তাজিকিস্তান পর্যন্ত বিস্তৃত। শক্তিশালী কেইউ ও সি ব্যান্ডের মাধ্যমে এটি সবচেয়ে ভালো কাভার করবে পুরো বাংলাদেশ, সার্কভুক্ত দেশ, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়াকে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ৪০টির মধ্যে ১২টি ট্রান্সপন্ডার বরাদ্দ রয়েছে ডিটিএইচ (ডাইরেক্ট টু হোম) কোম্পানিগুলোর জন্য। জানা গেছে, দুটি কোম্পানি এই ১২টি ট্রান্সপন্ডারের বরাদ্দ পেয়েছে। তবে দুটি কোম্পানি যদি এ স্যাটেলাইট ভাড়া না নেয়, তাহলে এটির অর্ধেক অব্যবহƒত থেকে যাবে। একই সঙ্গে ডিটিএইচ কোম্পানিগুলোর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ভাড়া নেওয়ার সম্ভাবনা আপাতত দেখা যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে এ সালের জানুয়ারিতে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছিলেন, কাউকে দেওয়া হয়নি। মন্ত্রী হিসেবে আমি জানি না। বিসিএসবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলামও বিষয়টি অবগত নন বলে জানিয়েছেন। অবশ্য এ প্রসঙ্গে বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, অন্যান্য টেলিভিশনগুলো বিভিন্ন স্যাটেলাইট থেকে সার্ভিস নেয়। সব টেলিভিশন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে চলে আসবে। এটির জন্য তাদের বেক্সিমকো বা বায়ার মিডিয়ার পারমিশন নিতে হবে না। শুধু ডিটিএইচ সেবা দেবে এই দুই প্রতিষ্ঠান। তিনি আরও বলেন, দুই বছর আগে তথ্য মন্ত্রণালয়ে বসে এই দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এ-সংক্রান্ত চুক্তি হয়েছে।
স্যাটেলাইটের চারটি বিশেষ ধরনের সেবার একটি এই (ডিটিএইচ) সেবা দুটি প্রতিষ্ঠানের কাছে দেওয়া হয়েছে। এজন্য বরাদ্দ রয়েছে দেশের জন্য বরাদ্দকৃত ২০টির মধ্যে ১২টি ট্রান্সপন্ডার। এই ডিটিএইচ সেবা কী? কোন প্রক্রিয়ায়, কেনইবা এ সেবার দায়িত্ব ওই দুটি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হলো তা স্পষ্ট করা এখন সরকারের দায়িত্ব। প্রসঙ্গত, এরই মধ্যে বিভিন্ন ফোরামে এমন আলোচনা উঠেছে যে স্যাটেলাইটে বিনিয়োগের চেয়েও বেশি কোনো জনগুরুত্বপূর্ণ খাতে এই তিন হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা যেত কিনা। সমালোচকদের এমন প্রশ্নের কার্যকর জবাব দিতে হলে অবশ্যই সরকারকে স্বচ্ছভাবেই বঙ্গবন্ধু-১ উপগ্রহের তথ্যাবলি স্পষ্ট করতে হবে।