মহানগরীর হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানোর সিদ্ধান্তে সংসদে ক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানোর সিদ্ধান্তে সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। গতকাল ক্ষমতাসীন দলের সিনিয়র সংসদ সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদসহ ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের সদস্যরা হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানোর সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, হঠাৎ করে ৯ গুণ হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ালে তা মানুষ গ্রহণ করবে না। নির্বাচনের আগে এ ধরনের সিদ্ধান্তের কারণে ভোটের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে।

ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে জাতীয় পার্টির সদস্য আবু হোসেন বাবলা সিটি করপোরেশন থেকে রাজধানীর হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানোর প্রসঙ্গটি তোলেন।

বাবলা বলেন, ‘মেয়র ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী কর বাড়ান, কিন্তু জনগণকে জবাবদিহি করতে হয় সংসদ সদস্যদের। আরও দু-এক বছর আগে গৃহকর বাড়ানো হলে সমস্যা হতো না। নির্বাচনের এক বছর আগে গৃহকর বাড়ানোর সিদ্ধান্তে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে।’

বর্তমান সরকারকে জনবান্ধব সরকার আখ্যা দিয়ে বিরোধী দলের এই সদস্য বলেন, ‘অনতিবিলম্বে গৃহকর সহনীয় পর্যায়ে আনা দরকার।’

বাবলার বক্তব্যের পর স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, ‘গৃহকর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এটি চ‚ড়ান্ত হলে নোটিস দিয়ে বা পয়েন্ট অব অর্ডারে এ বিষয়ে আলোচনা করা যাবে।’

এরপর পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর নেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। বাবলার সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করে সিনিয়র সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আবু হোসেন বাবলা যে কথাটি বলেছেন, তা ঠিক। এর আগে কাজী ফিরোজ রশীদও বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। আমি নিজেও টেলিভিশনে দেখেছি, বেশকিছু লোক হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানোর সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। ট্যাক্স বাড়বে এটা অস্বাভাবিক নয়। দিনে দিনে সবই বেড়ে থাকে। এখানে তারা কয়েক বছর ধরে ট্যাক্স বাড়ায়নি। কিন্তু সেটা যদি একসঙ্গে ৯ গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়, তাহলে তা মানুষ গ্রহণ করবে না।’

নিজের বনানীতে ছোটখাটো একটি বাড়ি রয়েছে বলে উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জনপ্রতিনিধি, জনগণের সুখ-দুঃখের ভাগী। আকস্মিকভাবে আট হাজার টাকার ট্যাক্স যদি ৭২ হাজার টাকা হয়, তাহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এটার পুনর্বিবেচনা প্রয়োজন।’

যে কোনো সিদ্ধান্তের সঙ্গে সময়ের গুরুত্বের কথা জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমরা রাজনীতি করি, রাজনীতির কিছু সময় থাকে। যে বিষয়টি তিন-চার বছর আগে করা যেত, সেটি যদি সরকারের শেষ সময় এসে করা হয়, তাহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে বাধ্য। মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে আমার পক্ষে সবকিছু বলা সম্ভব নয়। তবে সংসদে যে প্রশ্নটি উত্থাপিত হয়েছে, তা ঠিক। ঢাকা শহরের মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছে, এটার একটা সুন্দর নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন। কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বলব।’

এরপর তোফায়েল আহমেদের উদ্দেশে ডেপুটি স্পিকার বলেন, ‘আপনারা ইচ্ছা করলে মন্ত্রিসভায় বিষয়টি আলোচনা করে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন। তাহলে হোল্ডিং ট্যাক্স এত বেশি বাড়বে না।’

বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্য জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রামেও একই হারে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানো হয়েছে। প্রতিটি বাড়িতে ট্যাক্স বাড়ানোর নোটিস যাচ্ছে। মহল্লায় মহল্লায় বিষয়টি নিয়ে অনেক রকম আন্দোলন হচ্ছে। এর আগে সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে, গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে। এটা একটি রাজনৈতিক সরকার, কিন্তু রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটটা কী? আগামী বছর আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি। বিদ্যুৎ, গ্যাস ও হোল্ডিং ট্যাক্স বেশি নিয়ে ভোটারদের কাছে গিয়ে কি ভোট চাওয়া যাবে? প্রতিটি লোককে ক্ষেপিয়ে তুলছে। আমরা রাজনৈতিক সরকারের কাছ থেকে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত চাই। অর্থনৈতিক বেনিফিট নয়, রাজনৈতিক সরকারের কাছ থেকে আগে রাজনৈতিক বেনিফিট চাই। পলিটিক্স ঠিক থাকলে অর্থনীতিও ঠিক হয়ে যাবে। সঠিক রাজনৈতিক বিবেচনায় বাস্তব সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নাহলে ২০১৮ সালের নির্বাচনে জনগণের সামনে গেলে হোল্ডিং ট্যাক্স, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে জনগণের মুখাপেক্ষী হতে হবে।’

জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলুর বক্তব্যের পর ডেপুটি স্পিকার বলেন, ‘নির্বাচনের আগে বা পরে, সেটা বিষয় নয়, দশ বছর পর একবারে দশগুণ কর বাড়ানো গ্রহণযোগ্য নয়। শেখ হাসিনার সরকার জনবান্ধব সরকার। অবশ্যই সরকার এই বিষয়টি বিবেচনা করবে।’

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০