Print Date & Time : 23 June 2025 Monday 9:45 am

মহানন্দায় রাবারড্যাম ও ড্রেজিংয়ের উদ্যোগ ব্যয় হবে ১৮৭ কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক: চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহানন্দা নদীর নাব্য ঠিক রাখতে ড্রেজিং ও ভাঙন রোধে রাবারড্যাম নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এজন্য ১৮৭ কোটি ৩১ লাখ ৬৩ হাজার টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করে প্রকল্প প্রক্রিয়াকরণ করেছে পরিকল্পনা কমিশন। পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লি প্রতিষ্ঠান বিভাগের সেচ উইংয়ের সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত অনুসারে ২০২০ সালের মধ্যে এ প্রকল্প শেষ করার কথা।

সূত্রমতে, প্রকল্পটির প্রক্রিয়াকরণ চলতি বছরের জানুয়ারিতে শুরু হয়েছে। তবে চলতি অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) এ প্রকল্পের জন্য কোনো অর্থ অনুমোদন নেই। পরিকল্পনামন্ত্রীর সম্মতিতে এর প্রক্রিয়াকরণের কাজ শুরু করে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। এ নিয়ে ওই বিভাগের সেচ উইংয়ে সম্প্রতি অ্যাপ্রেইজাল সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সভায় এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য, প্রকল্প এলাকার বাস্তব অবস্থা ও আয়-ব্যয় সম্পর্কে প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়।

প্রস্তাবনায় বলা হয়, এ প্রকল্পের ফলে মহানন্দা নদীর প্রবাহ ও নিষ্কাশন সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি কৃষি কাজে আট হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা বৃদ্ধি পাবে। এতে ৫৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকার কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও এতে দুই কোটি ৩৭ লাখ টাকার মৎস্য উৎপাদনের মাধ্যমে এলাকার জনগণের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়, মহানন্দা নদীটি ভারত থেকে উৎপন্ন হয়ে বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহর হতে প্রায় ৫০ কিলোমিটার উত্তরে ভোলাহাট দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে গোমস্তাপুর, শিবগঞ্জ, নাচোল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ হয়ে রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ীতে পদ্মা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়। নদীটির বাংলাদেশ অংশের দৈর্ঘ্য প্রায় ৯৫ কিলোমিটার। বর্তমানে নদীতে পলি জমে এর নাব্য হ্রাস, নদীর প্রশস্ততা ও প্রবাহ কমে গেছে। ফলে নৌ-চলাচল, মৎস্য চলাচল ও মৎস্য চাষে অসুবিধা হচ্ছে। এছাড়া শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানি হ্রাস পাওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তরও নেমে যায়। ফলে গভীর-অগভীর নলকূপ দ্বারা সেচ কাজ ব্যয়বহুল হয়ে পড়ে।

এজন্য ২০১১ সালের এপ্রিলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নদীটির খননকাজ বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেন। সে অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এজন্য গঠিত কারিগরি কমিটির সুপারিশ অনুসারে প্রকল্পের মধ্যে নদী খননের পাশাপাশি বাঁধ নির্মাণের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

পরে ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে পরিকল্পনা কমিশনে এ-সংক্রান্ত পিইসি সভা হয়। এজন্য প্রয়োজনীয় সমীক্ষা চালানোর জন্য আইডব্লিউএমকে নিয়োগ দেওয়া হয়। সম্প্রতি আইডব্লিউএম এ-সংক্রান্ত চূড়ান্ত ফিজিবিলিটি স্টাডি ও ইআইএ প্রতিবেদন দাখিল করে। তার ভিত্তিতেই প্রকল্পটির পরিকল্পনা সম্পন্ন করা হয়েছে।

প্রকল্পের পরিকল্পনায় বলা হয়, ৩৬ কিলোমিটার নদী খনন, প্রায় সাত হেক্টর জমি অধিগ্রহণ, রাবারড্যাম নির্মাণ, ওয়াকওয়ে নির্মাণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম থাকবে এ প্রকল্পের অধীনে। প্রকল্পটিকে লাভজনক হিসেবে উল্লেখ করে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১০ কোটি ৭৫ লাখ, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪৯ কোটি ১৬ লাখ, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সাড়ে ৬০ কোটি এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৬৬ কোটি ৮৯ লাভ টাকা অর্থায়নের জন্য চাহিদা চাওয়া হয়েছে। সব মিলে এতে ১৮৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা অর্থায়ন করতে হবে প্রকল্পটির জন্য।