Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 3:55 am

মহামারির ধকল কাটিয়ে উঠতে কলম্বিয়ার সামনে দুই বাধা

শেয়ার বিজ ডেস্ক: সহিংস অস্থিরতা সত্ত্বেও ২০২১ সালে তীব্র মন্দা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয় ল্যাটিন আমেরিকার দেশ কলম্বিয়া। তবে এখনও দেশটির সামনে বেশ চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করেছেন। বিশেষ করে মহামারির ধকল কাটিয়ে উঠতে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক দুরবস্থাকে দায়ী করছেন তারা। খবর: ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।

শ্রমবাজারের দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার পাশাপাশি কর ও পেনশনজনিত পদ্ধতির সমস্যা এখনও কাটাতে পারেনি কলম্বিয়া। উপরন্তু আসন্ন নির্বাচনে (মে মাসে অনুষ্ঠিত হবে) চিলি ও পেরুর মতো বামপন্থি নেতৃত্ব বেছে নিতে

পারে দেশটির নাগরিকরা, যা নিয়ে বেশ চিন্তিত বিনিয়োগকারী ও বিশ্লেষকরা। কেননা এতে দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়বে।

এরই মধ্যে সাবেক গেরিলা নেতা ও বোগোটার সাবেক মেয়র গুস্তাভো পেট্রো তেল অনুসন্ধানে বিদেশি কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার ঘোষণা দিয়েছেন। এর পরিবর্তে উৎপাদন বৃদ্ধি ও কৃষিক্ষেত্রে বিনিয়োগের কথা বলেছেন তিনি। আসন্ন নির্বাচনে গুস্তাভো প্রেসিডেন্ট পদে লড়াই করবেন। বোগোটার কন্ট্রোল রিস্কস কনসালটেন্সির জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক সিলভানা আমায়া জানান, জরিপ বলছে, জনপ্রিয়তার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন গুস্তাভো। তিনি জয়ী হলে কলম্বিয়ার অর্থনৈতিক নীতিতে বিশাল পরিবর্তন আসবে, যা দেশটিকে অনিশ্চয়তার পথে ঠেলে দেবে। তাই এখন বড় বিনিয়োগ করতে সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা এবং নির্বাচনের আগে এ অচলাবস্থা কাটবে না বলে মনে করেন আমায়া। প্রসঙ্গত, নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য গুস্তাভোকে বর্তমান দক্ষিণপন্থি প্রেসিডেন্ট ইভান ডুকে ও স্বতন্ত্র প্রার্থী রোডোলফো হার্নান্দেজকে পরাজিত করতে হবে।

গত বছর কলম্বিয়ার জিডিপি বেড়ে দাঁড়ায় ১০ দশমিক ছয় শতাংশে, ১৯০৬ সালের পর যা সর্বোচ্চ বলে জানায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দেশটির স্ট্যাটিসটিকস এজেন্সি জানায়, এর আগের বছর ২০২০ সালে কভিড-১৯ মহামারির কারণে প্রবৃদ্ধি কম হয়Ñছয় দশমিক আট শতাংশ। গত বছর ডিসেম্বরে এর আগের বছরের তুলনায় খুচরা বিক্রির হার বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ দশমিক ৯ শতাংশে এবং একই সময় উৎপাদন বেড়েছে ১৩ দশমিক এক শতাংশ। এ পরিসংখ্যান বিশ্লেষকদের আশাহত করেছে।

মে মাসের নির্বাচনে যিনি জয়ী হোন না কেন তাকে কর, পেনশন ও শ্রমবাজারের কাঠামোগত সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার (ওইসিডি) এক প্রতিবেদনেও এসব সমস্যা সমাধানে বিদ্যমান বৈষম্য, দারিদ্র্য ও সামাজিক অস্থিরতা দূর করার কথা বলা হয়েছে। এসব সমস্যার কারণে দেশটিতে মাঝেমধ্যে সহিংস বিক্ষোভ দেখা দেয়, যা চূড়ান্ত রূপ নেয় গত বছর। তাছাড়া অর্থনৈতিক সংস্কারের ফলে বিনিয়োগের পরিবর্তে বিদেশি ঋণে জর্জর হয় দেশটি। মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। রপ্তানির তুলনায় বেড়ে যায় আমদানির পরিমাণ। রপ্তানি খাত থেকে রাজস্ব আয় কমে আসে, পক্ষান্তরে আমদানির পরিমাণ বাড়ে ৯ দশমিক পাঁচ শতাংশ। ২০১৬ সালের পর সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য ঘাটতি দেখা যায় তখন। তবে লন্ডনের অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ফেলিপে কমারগো মনে করেন, ২০২২ সালটি কলম্বিয়ার জন্য অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের বছর হতে পারে।

জানুয়ারিতে কলম্বিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, মূল্যস্ফীতি তিন শতাংশ থেকে বেড়ে চার শতাংশ হতে পারে, ১৯ বছরের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। বিএনপি পারিবাস এক বিবৃতিতে জানায়, ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোর সব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তুলনায় ভিন্ন অবস্থানে রয়েছে কলম্বিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাদের মতে, আগামী মাসে আরও এক দশমিক পাঁচ শতাংশ বাড়তে পারে মূল্যস্ফীতি। এরপর রয়েছে নির্বাচনের উত্তাপÑকোনো কারণে ২৯ মে নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হলে তা পিছিয়ে ১৯ জুন নেয়া হবে। গুস্তাভোর বক্তব্য তরুণ ভোটারদের আকর্ষণ করলেও ওই বক্তব্য বাস্তবে কতটা রূপ নেবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।