মহেশখালীতে নিন্মমানের সামগ্রী দিয়ে সেতু নির্মাণের অভিযোগ

এস এম রুবেল, কক্সবাজার: অপর্যাপ্ত সিমেন্ট ও ঢালাই না দেয়া, নিন্মমানের বালি ব্যবহার ও রড ছাড়াই নির্মাণ করা হচ্ছে কক্সবাজারের মহেশখালীর একটি ব্রিজ। বিষয়টি এলাকাবাসীর নজরে এলেও এর দায় এড়াতে মরিয়া উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার অফিস ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আসাদ এন্টারপ্রাইজ।

জানা যায়, উপজেলার ছোট মহেশখালী ইউনিয়নের সিপাহীর পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন প্রধান সড়কের ওপর নির্মাণাধীন ব্রিজের কাজ চলছে। কিন্তু ব্রিজটিতে নিন্ম মানের সামগ্রী ব্যবহারের বিষয়টি পরপর দুইবার এলাকাবাসীর হাতে ধরা পড়ে। অথচ এর দায় নিতে নারাজ উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার সবুজ কুমার ও আসাদ এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদার মো. আসাদ। দুইজনই দায়সারা বক্তব্য দিচ্ছেন। এদিকে এলাকাবাসীর প্রশ্ন নিন্মমানের সামগ্রী দিয়ে নির্মিত ব্রিজের দুর্নীতির দায় নেবে কে?

এর আগেও গত মাসের ১৩ আগস্ট একই ব্রিজের নির্মাণকাজ চলার সময় লোহা ও সিমেন্ট কম দেয়ার বিষয়টি এলাকাবাসী কর্তৃপক্ষকে জানায়। একই সঙ্গে উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারের সামনে ব্রিজে লাগানো র‌্যালিংগুলো ভাঙা হলে সেখানেও লোহা ও সিমেন্ট কম দেয়ার বিষয়টির সত্যতা মিলে। সে সময় ইঞ্জিনিয়ার সবুজ কুমার জানিয়েছিলেন, এর জন্য দায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তাদের এ বিষয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হবে।

এলাকাবাসী জানান, চুরি ধরা পড়ার পর কাজ কয়েকদিন বন্ধ রাখা হয়। এরপর আবারও একই শ্রমিক দিয়ে ব্রিজের অবশিষ্ট কাজ শুরু করে। তবে উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার অফিসের কেউ ব্রিজের কাজ তদারকি করতে আসেননি। এ ফাঁকে দ্বিতীয় বারেও চারটি লোহার স্থলে দুটি কিংবা তিনটি লোহা দিয়ে কাজ চালানো হয়েছে। নিন্মমানের বালি ও পর্যাপ্ত সিমেন্ট না দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে স্থাপনা। এ ব্রিজে রীতিমতো পুকুর চুরির ঘটনা ঘটেছে বলে মন্তব্য এলাকাবাসীর।

এ সময় তারা আরও জানান, বাজারে যাওয়ার সময় পথচারীদের চোখে নিন্মমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করার বিষয়টি ধরা পড়ে। বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকার উত্তেজিত লোকজন একসঙ্গে জমায়েত হন। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ার অফিস ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।

গত শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ব্রিজের পাশের রেলিংয়ের জন্য নির্মিত বেশ কয়েকটি ভাঙা খুঁটি পড়ে রয়েছে। ওই সব খুঁটির কয়েকটিতে ২টি এবং কয়েকটিতে ৩টি রডের দেখা মেলে। পাশে আধা ইঞ্চির ঢালাইয়ের কাজে পরিমাণ মতো সিমেন্ট দেয়া হয়নি। এছাড়া ইটের গাঁথুনিতেও ছিল না পর্যাপ্ত সিমেন্টের ব্যবহার।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেতুটির নির্মাণ ব্যয় ১ কোটি ৩১ লাখ ৩৯ হাজার টাকা নির্ধারণ করে ২০২০ সালের ২০ নভেম্বর কক্সবাজারের আসাদ এন্টারপ্রাইজকে ঠিকাদার নিয়োগ দেয় এলজিইডি। যার টেন্ডার আইডি নম্বর ৪৮৫৮২৪। চুক্তি মতে, গত বছরের ২০ নভেম্বর কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু সময় পেরিয়ে গেলেও ব্রিজটির কাজ এখনও শেষ হয়নি।

ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নতুন নির্মাণের কথা বলে প্রায় ৭-৮ বছর আগেই জরাজীর্ণ সিপাহির পাড়া ব্রিজটি ভাঙা হয়। বহু বছর কাজ না হলেও কিছুদিন আগে ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ব্রিজ নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ব্রিজে নিন্মমানের কাজ হচ্ছে বলে স্থানীয় মানুষকে অহরহ অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তখন আমলে নেয়নি কর্তৃপক্ষ।

কর্তৃপক্ষের লোকজন ঠিকাদারের সঙ্গে আঁতাত করে ব্রিজ নির্মাণের সময় তদারকি করেননি এমন অভিযোগ তুলে স্থানীয়রা আরও জানান, ব্রিজের ঢালাই থেকে শুরু করে সবখানে পর্যাপ্ত লোহা, সিমেন্ট, কংকর, বালু ব্যবহার করা হয়নি। ব্রিজের কাজের জন্য আনা লোহা, সিমেন্ট বাইরে বিক্রিও করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানিয়েছেন, ব্রিজের ঢালাই কাজের সময় লোহার বদলে বাঁশও ব্যবহার করে থাকতে পারে।

এদিকে নি¤œমানের সামগ্রী ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আসাদ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. আসাদ বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত নই। মিস্ত্রির সঙ্গে কথা বলে জেনে নিতে হবে। তবে ব্রিজের কাজ শতভাগ স্বচ্ছ হচ্ছে।

অপরদিকে দায় এড়ানোর চেষ্টা করছেন উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার সবুজ কুমার। তিনি জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি ধরা পড়েছে; সমস্যা নেই। তারা ভেঙে এসব কাজ আবার করে দেবে। এটা কোনো বড় বিষয় নয়। ব্রিজের বাকি কাজগুলোতে দুর্নীতি হয়েছে কি না; সেই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, ওইগুলোতে দুর্নীতি বা নি¤œমানের সামগ্রী ব্যবহার হয়নি। শেষের দিকের ছোটখাটো কাজে এসে এমনটি করেছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০