Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 10:12 pm

মহেশখালীর মিষ্টি পানের দামে চাষিদের মুখে হাসি

এসএম রুবেল, কক্সবাজার:দেশ-বিদেশে মিষ্টি পানের কদর দিন দিন বাড়ছে। সেই সঙ্গে পানের উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছেন চাষিরা। তবে বেশিরভাগ সময় চাহিদার সঙ্গে সমন্বয় করে পানের কাক্সিক্ষত দাম পাওয়া যায় না। তবে এই মৌসুমে তার ব্যতিক্রম ঘটেছে। আগের তুলনায় বেড়েছে মিষ্টি পানের দাম। আর তাতেই কৃষকদের মুখে ফুটেছে আত্মতৃপ্তির হাসি।

কক্সবাজার জেলার মহেশখালীতেই চাষাবাদ হয় মিষ্টি পানের। সমতল ভূমি ও পাহাড়ি ঢালুতে মিষ্টি পানের বরজ তৈরি করা হয়। তবে পাহাড়ি জমিতেই পানের ফলন ও বরজের স্থায়িত্ব সমতল ভূমির চেয়ে অনেক গুণ বেশি। তাই পাহাড়ের পাদদেশে দেখা মেলে অসংখ্য পানের বরজের।

উপজেলার নতুনবাজার, গোরকঘাটা বাজার, টাইমবাজার, কেরুনতলী বাজার, শাপলাপুর বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে বসা পানের বাজার পরিদর্শনে দেখা যায়, চাষিরা ঝুড়িতে করে পান সাজিয়ে রেখেছেন। আর ব্যবসায়ীরা সেই পান কেনার জন্য চাষিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছেন। সারাদিন চলা এই বাজারগুলো চাষি ও ব্যবসায়ীদের মাঝে এক মিলনমেলায় পরিণত হয়।

মোহাম্মদ হোসেন, আলী মিয়া, শাকের আলমসহ একাধিক পানচাষির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান বাজারে বড় আকারের পানের দাম বিরাপ্রতি ৩৫০ টাকা, মাঝারি আকার ২৫০ টাকা এবং ছোট আকারের পান বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়, যা গত মৌসুমের তুলনায় দ্বিগুণ বেশি।

পানচাষি হাছান আলী ও শফিউল আলম বলেন, ‘পানের বরজ তৈরিতে আগের চেয়ে খরচ বেশি হচ্ছে। বেড়েছে সার, কীটনাশকসহ মজুরি খরচের দাম। বরজ নির্মাণে ব্যবহƒত বাঁশের দামও আকাশছোঁয়া এখন। খরচ বেশি হলেও চলতি বর্ষা মৌসুমে মুষলধারে বৃষ্টি না হওয়ায় পানের বরজ নষ্ট হয়নি। এজন্যই পান বিক্রি করে লাভের মুখ দেখছেন।’

চাষিদের কাছ থেকে চাহিদামতো পানের সরবরাহ পাওয়ায় ব্যবসায়ীরাও সন্তুষ্ট। মহেশখালীর মিষ্টি পানের আলাদা কদর থাকায় তারাও লাভবান হচ্ছেন। বাজারে পানের দাম থাকলে কৃষকদের ভালো দাম দিতে পারেন তারা। কৃষকদের কাছ থেকে কেনা পানগুলো টাঙ্গাইল, ঢাকা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, সন্দীপসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হয়। এখন বিদেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে এই মিষ্টি পান।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, মহেশখালীতে মোট পানচাষির সংখ্যা ২৭ হাজার ২০০ জন। বিগত পাঁচ বছরে এই সংখ্যাই স্থিত রয়েছে। পানচাষসহ বিভিন্ন ফসলে কৃষি পরামর্শ দেয়ার জন্য বর্তমানে ১৮ উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাঠপর্যায়ে কৃষকদের নিয়ে কাজ করছেন। আবার অনেক কৃষক পরামর্শের জন্য সরাসরি অফিসে যোগাযোগ করেন।

জানা গেছে, উপজেলার শাপলাপুর, ছোট মহেশখালী, কালারমারছড়া ও বড়মহেশখালী ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকাগুলোয় পানের চাষ সবচেয়ে বেশি হয়। এছাড়া অন্যান্য এলাকায় সমতল ভূমিতেও পানের চাষ হয়। শত বছরের অধিক সময় ধরে চাষিরা গতানুগতিক ধারায় পানের চাষ করে এলেও সরকারিভাবে কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ পান না তারা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার পদটি বদলিজনিত কারণে শূন্য রয়েছে। কথা হয় উপসহকারী কর্মকর্তা সৌরভ হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, পান চাষ ও অন্যান্য ফসল ফলানোর ক্ষেত্রে কৃষকদের সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করা হয়। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা ফসলের রোগ প্রতিরোধ, পোকামাড়ক থেকে ফসল রক্ষাসহ সহজ পন্থায় ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখেন।