মহেশখালী-কক্সবাজার নৌপথে বেড়েছে জনদুর্ভোগ

এস এম রুবেল, কক্সবাজার : রবিউল ইসলাম তার বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে কক্সবাজার জেলা সদরে ডাক্তার দেখাতে যাচ্ছেন। মহেশখালী ঘাটে এসে বসে আছেন প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিকাল ৩টা থেকে অপেক্ষা করছি। খালের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় বাবাকে বোটে তুলতে পারছি না। তাই জোয়ার আসার অপেক্ষায় বসে আছি।”

ঘাটের এক কোনায় বসে আছেন ফাতেমা বেগম। তার অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে যাচ্ছেন। ভাটার সময় খালে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় তিনিও জোয়ারের অপেক্ষায় বসে আছেন। রবিউল ইসলাম ও ফাতেমার মতো প্রায় চারশ যাত্রী কক্সবাজার যাওয়ার অপেক্ষায় ঘাটে বসে থাকতে দেখা যায়।

কক্সবাজার জেলার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত পাহাড়ি দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী। কক্সবাজার জেলা সদরের সঙ্গে নৌপথেই মহেশখালীর মানুষ যাতায়াত করেন। প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত স্পিডবোট ও রাত ৮টা পর্যন্ত গাম বোট চালু থাকে। আর রোগীদের জন্য ২৪ ঘণ্টা বিশেষ স্পিডবোট চালু রাখা হয়। এ নৌপথে যাত্রী সুরক্ষা নিশ্চিত না করায় ইতঃপূর্বে যাত্রীদের নানা অভিযোগ শোনা যায়। তবে শীত মৌসুমকে সামনে রেখে মহেশখালী নৌঘাটে নতুন করে বড় আকারের সমস্যা দেখা দিয়েছে। জোয়ারের সময় অনায়াসে বোটে ওঠা গেলেও ভাটার সময় খালের সম্পূর্ণ পানি শুকিয়ে গিয়ে বোট চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আর দীর্ঘমেয়াদি ভোগান্তিতে পড়ে হাজারো মানুষ।

সরেজমিনে গত বুধবার বিকাল ৩টায় মহেশখালী পুরোনো জেটিঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, জেটিঘাট-সংলগ্ন খালের পানি ভাটায় সময় দ্রুত কমতে শুরু করেছে। আধাঘণ্টার মধ্যেই পানি শুকিয়ে গিয়ে বোট চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। গাম বোটগুলো মোহনায় নোঙ্গর করে রাখা হয়েছে। আর কক্সবাজার থেকে আগত যাত্রীদের নৌকায় করে ঘাটে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু ঘাটে থাকা স্পিডবোট ও গাম বোটগুলো খালে পানি না থাকায় কক্সবাজারের উদ্দেশে ছেড়ে যেতে পারছে না।

এদিকে ধীরে ধীরে যাত্রীদের ভিড় বাড়তে থাকে। বিকাল ৫টা পর্যন্ত প্রায় চার শতাধিক যাত্রী পারাপারের জন্য ঘাটে আসেন। তাদের মধ্যে স্থানীয় যাত্রীরা ছাড়াও পর্যটকদের সংখ্যাও রয়েছে।

ঘাটে কথা হয় ঢাকা থেকে আসা মোশাররফ হোসেন নামের এক পর্যটকের সঙ্গে। তিনি বলেন, পরিবার নিয়ে মহেশখালী ঘুরতে এসেছি। কিন্তু এখানকার সৌন্দর্য দেখে ফেরার পথে খালে পানি না থাকায় ঘাটে আটকে আছি। ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে কক্সবাজার ফিরতে পারব কিনা সেই শঙ্কা কাটছে না আমাদের।”

চৌফলদণ্ডী ঘাট থেকে মহেশখালী ঘাটে আসা জমির, আহসান, মোনাফসহ কয়েকজন যাত্রী জানান, খালে পানি না থাকায় মোহনায় বোট নোঙ্গর করে যাত্রীদের নৌকায় তুলে দেয়া হয়েছে। এতে করে নৌকায় আরও জনপ্রতি ২০ টাকা ভাড়া বেশি নিয়েছে। বাড়তি ভাড়া আদায়ের পাশাপাশি সময়ও লেগেছে বেশি। আর ছোট শিশু নিয়ে নৌকা পারাপার ঝুঁকিও ছিল।

মহেশখালী নদীতে নৌকায় মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত কয়েকজন জেলে বলেন, শীতের সময় ভাটা হলে নদীতে পানি কমে যায়। ফলে জেটিঘাট-সংলগ্ন খালটি ভরাট হয়ে যাওয়ায় সেখানে পানি থাকে না। সামনের দিনগুলোতে খাল খনন করা না হলে জনদুর্ভোগ আরও চরম আকার ধারণ করবে।”

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহেশখালী কক্সবাজার নৌপথে ফেরি সার্ভিস চালুর জন্য ২০১৭ সালের ১৭ নভেম্বর বাঁকখালী নদীর জেটিঘাট-সংলগ্ন গোরকঘাটা অংশের খাল খননকাজ উদ্বোধন করেন কক্সবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক। কিন্তু দীর্ঘ পাঁচ বছরেও ফেরির দেখা পায়নি মহেশখালীর মানুষ। আর অপরিকল্পিতভাবে খাল খনন করায় অল্পদিনের ব্যবধানে খালটিও ভরাট হয়ে যায়।

জানা গেছে, মহেশখালী ও কক্সবাজার নৌপথটি বিগত ২০১১ সাল থেকে খাস কালেকশনের মাধ্যমে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের তত্ত্ব¡াবধানে পরিচালিত হয়ে আসছে। জেলা প্রশাসক কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারীরা ঘাটের যাত্রী সেবার যাবতীয় বিষয়াদি দেখাশোনা করেন।

খাল খননের বিষয়ে জেলা প্রশাসক মামুনুর রশিদ জানিয়েছেন, তিনি এ বিষয়ে অবগত ছিলেন না। তিনি যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেবেন।

এ বিষয়ে কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, ইতোমধ্যে খালে পানি শুকানোর বিষয়ে মন্ত্রী মহোদয়কে জানানো হয়েছে। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে এ সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ শুরু করা হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০