Print Date & Time : 24 June 2025 Tuesday 6:53 pm

অনুমোদনের আগেই ব্যয় বাড়ছে ১ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা

 

ইসমাইল আলী: কক্সবাজারের মহেশখালী হবে আগামীদিনের পাওয়ার হাব। সেখানে সাড়ে ১৩ হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতার ২০টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এজন্য অবকাঠামো উন্নয়নে গত মে মাসে ব্যয় ধরা হয় ১২ হাজার ৫৫৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। তবে দুই মাসের ব্যবধানেই তা প্রস্তাব করা হয়েছে ১৩ হাজার ৯৩২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। যদিও এ-সংক্রান্ত প্রকল্পটি এখনও অনুমোদন হয়নি। এর আগেই এক হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে।

সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) মূল্যায়ন কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এতে জানায়, কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলায় পাঁচ হাজার ৮৮০ একর জমিতে নয়টি ব্লকে মোট ১৩ হাজার ৫৬০ মেগাওয়াট কয়লা ও এলএনজিভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করার জন্য ভূমি উন্নয়ন, চ্যালেন ড্রেজিং এবং বন্দর নির্মাণ করতে হবে। আগামী বছর শুরু হওয়া প্রকল্পটির কাজ শেষ হবে ২০২১ সালে।

পূর্বের পরিকল্পনা অনুযায়ী আট দশমিক ৬০ মিটার মাটি ভরাটের কথা ছিল। নতুন হিসেবে তা ১০ মিটার করা হবে। এজন্য ১৬ কোটি ২২ লাখ ৫১ হাজার ঘনমিটার বালি বা মাটি লাগবে। এক্ষেত্রে যুক্তি দেখানো হয়েছে ১৯৯১ সালে এলাকাটি সাত মিটার উঁচু সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছিল। এ ছাড়া সমুদ্র তীরবর্তী বিদ্যুৎকেন্দ্র বরাবর স্থানে গাইড ব্যাংকের উচ্চতা বাড়াতে হবে। দুটি জেটি নির্মাণের সংস্থান রাখা হয়েছে। আর জেটিতে লাইটারেজ আসা-যাওয়ার জন্য চ্যানেলটি ১০ কোটি ঘনমিটার বালি বা মাটি ড্রেজিং ও সাড়ে ছয় কিলোমিটারের স্থলে নয় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সুরক্ষা নির্মাণ করতে হবে। আর পাঁচটি যানবাহন ক্রয় ও মেরামতও যুক্ত হয়েছে।

সব মিলিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ৯৩২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে পিডিবি সরবরাহ করবে এক হাজার ৪২ কোটি টাকা। বাকি অর্থের মধ্যে সরকারের তহবিল থেকে এক হাজার ৭৫৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। আর ১১ হাজার ১৩২ কোটি ১৫ লাখ টাকা বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ চাওয়া হয়েছে। তবে এখনও ঋণের কোনো উৎস নির্ধারণ হয়নি। তবে এখনও ঋণের কোনো উৎস নির্ধারণ হয়নি।

যদিও আগের প্রস্তাবে পিডিবি ৩২৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা সরবরাহ করতে চেয়েছিল। বাকি অর্থের মধ্যে সরকারের তহবিল থেকে চাওয়া হয়েছিল সাত হাজার ৩৩৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। আর চার হাজার ৮৯১ কোটি ৯২ লাখ টাকা বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল।

জানতে চাইলে পিডিবির চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ শেয়ার বিজকে বলেন, প্রকল্পটির অনুকূলে বৈদেশিক সহায়তা সংগ্রহের লক্ষ্যে প্রাথমিক ডিপিপি গত বছর সেপ্টেম্বরে পরিকল্পনা কমিশন ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) প্রেরণ করা হয়েছে। ভূমি উন্নয়ন বা ড্রেজিংয়ে না হলেও বন্দর নির্মাণে বৈদেশিক সহায়তা পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায়। এজন্য মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে ঋণের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। বিভিন্ন দেশ ও দাতা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, প্রকল্প যাচাই কমিটির সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের বাইরে কতিপয় নতুন অংশ সংযুক্ত করায় পুনর্গঠিত ডিপিপিতে প্রকল্প বৃদ্ধি পেয়েছে। পুনর্গঠিত ডিপিপি বিদ্যুৎ বিভাগে জমা দেওয়া হয়েছে। সেখানে অনুমোদনের পর তা যাবে পরিকল্পনা কমিশনে।

সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ উৎপাদন ছাড়াও মহেশখালীতে পরিকল্পিত নগরায়ন হবে। এজন্য সড়ক ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। সব মিলিয়ে মহেশখালী উন্নয়নে বিনিয়োগ লাগবে দুই লাখ কোটি টাকার বেশি। তবে এর বড় অংশই যাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনে। মহেশখালী উন্নয়ন মাস্টারপ্ল্যানে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সম্প্রতি এটি চূড়ান্ত করে পিডিবিতে জমা দিয়েছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান জার্মানভিত্তিক স্টেগ জিএমবিএইচ।

এতে বলা হয়, মহেশখালীর পরিকল্পিত উন্নয়নে পাঁচ হাজার ৬৬৮ একর জমি প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে আটটি কয়লাভিত্তিক ব্লক গড়ে তুলতে জমি লাগবে এক হাজার ৬০০ একর। এ ছাড়া কয়লা মজুতাগার গড়ে তুলতে আরও ১৮২ একর জমি লাগবে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লার উচ্ছিষ্ট রাখতে জমি লাগবে ৬০৪, ছাই পরিবহনে পাইপলাইন নির্মাণে ১০৮ ও ছাই মজুদ এলাকা গড়ে তুলতে লাগবে আরও ৮০০ একর। এর বাইরে এলএনজি ব্লক গড়ে তুলতে জমি লাগবে ১৫৫ একর। বন্দর এলাকার জন্য লাগবে আরও ২৫৩ একর জমি। সড়ক ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণে আরও প্রয়োজন হবে ৩০৩ একর এবং সমুদ্রের ভাঙন রোধে প্রতিরক্ষা এলাকায় লাগবে ২০০ একর জমি। এ ছাড়া সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে ২১০, নগরায়নে ৬০০ ও বনায়নে ৩০ একর জমি প্রয়োজন হবে।

আটটি ব্লকে ভাগ করা হবে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে। প্রতিটি ব্লকে ৬৬০ মেগাওয়াটের দুটি করে মোট ১৬টি আলট্রা সুপারক্রিটিক্যাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থাকবে। এজন্য কয়লা খালাসে তিনটি জেটি নির্মাণ করা হবে। প্রতিটির দৈর্ঘ্য হবে ৩০০ মিটার ও প্রশস্ততা ৬০ মিটার। আটটি ব্লকে ১৫ দিনের কয়লা মজুত রাখতে হবে। এতে ১৩ লাখ টন কয়লা মজুত থাকবে।

এলএনজি ব্লকে ৭৫০ মেগাওয়াটের কম্বাইন্ড সাইকেল চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। এ জন্য বছরে ২৪ লাখ ৩৪ হাজার টন গ্যাস লাগবে। এ জন্য এলএনজি টার্মিনালে বছরে ২৫টি জাহাজ ভিড়বে। আর বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য বছরে ৮০ হাজার জাহাজ ভিড়বে বন্দরে। কয়লাবাহী এসব জাহাজের জন্য সাত কিলোমিটার চ্যানেল নিয়মিত ড্রেজিং করতে হবে। এ চ্যানেলটির গভীরতা ২-৩মিটার। অথচ কয়লাবাহী জাহাজের জন্য ১২-১৩ মিটার গভীরতা দরকার। এজন্য প্রায় চার কোটি ঘনফুট মাটি কেটে ফেলতে হবে।