Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 8:36 pm

মাংসের মান এবং যৌক্তিক দাম নিশ্চিতে ব্যবস্থা নিন

 

গত কয়েক দশকে দেশে অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণ জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। এটি এত ব্যাপক যে, ব্যক্তি উদ্যোগে এ তৎপরতা রোধ করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাই নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার মূল দায়িত্ব রাষ্ট্রেরই। বিভিন্ন সময়ে সরকারি-বেসরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে খাদ্যে ভেজাল দেয়ার প্রবণতা ক্রমেই বেড়েছে। এতে প্রতীয়মান হয়, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতের দায়িত্বে থাকা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যথানিয়মে সক্রিয় নয়।

মানুষ কেবল উদরপূর্তির জন্য খাদ্য গ্রহণ করে না। মানবদেহের সব ধরনের কাজের জন্যই শক্তি দরকার হয়, আর এ শক্তির জোগান দেয় খাদ্য। তবে সে খাদ্য সুষম কিংবা পুষ্টিকর হওয়ার পাশাপাশি হতে হয় মানসম্পন্ন। মানসম্পন্ন না হলে খাদ্য পুষ্টিকর নয়, বরং ক্ষেত্রবিশেষ হয়ে উঠতে পারে বড় ক্ষতি এমনকি প্রাণহানির কারণ! কোনো কারণে প্রকৃত বৈশিষ্ট্য হারালে খাদ্য হয়ে ওঠে অনিরাপদ। বহু রোগ সৃষ্টির জন্য খাদ্য উপাদান দায়ী। আমাদের অধিকাংশ খাদ্যসামগ্রী অনিরাপদ বা বিভিন্ন মাত্রায় ভেজালযুক্ত। খাদ্য প্রস্তুত, সংরক্ষণ প্রক্রিয়া ও বাজারজাতকরণÑবিভিন্ন পর্যায়ে খাদ্য ভেজালসম্পৃক্ত হয়ে থাকে।  কিন্তু অনেক সময় ভেজাল চাপিয়ে মুখ্য হয়ে ওঠে খাদ্যের দাম। তখন তা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায় এমনকি আয় বেড়ে যাওয়া সত্ত্বেও। তাই বলা যায়, খাদ্য পণ্য বিক্রিতে দুটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণÑএর মান ও দাম।

নিরাপদ খাদ্যদ্রব্য নিশ্চিত করার দায়িত্বে থাকা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিএসটিআই, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের জাতীয় নিরাপদ খাদ্য গবেষণাগার। খাদ্যপণ্যের দামে কারসাজি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব প্রশাসনের। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর (ডিএনসিআরপি) ভোক্তার অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেবে কিংবা নিজেরাই বাজার তদারকি করে জনস্বার্থে প্রতিকারে ব্যবস্থা নেবে। একটি বিষয় সর্বদা লক্ষ রাখা উচিত তাদের দায়িত্বহীনতায় সাধারণ মানুষের বড় ক্ষতি হতে পারে।

রোববার ডিএনসিআরপি আয়োজিত ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ বিষয়ক সেমিনারে সংস্থার পরিচালক বলেছেন যতবার মাংস কিনেছেন, ততবারই ঠকেছেন তিনি। তার ভাষায়: মাংস ব্যবসায়ী, সুপার শপÑসর্বত্রই একই অবস্থা। মাংস বাড়িতে নিয়ে ভোক্তা দেখেন মাপে কম। এমন দুর্গন্ধ, পচে গেছে। ঠিকমতো ফ্রিজিং করেনি।

আমরা এমন একসময়ে বাস করছি, যখন বলার সুযোগ নেই যে, অমুক সেরা প্রতিষ্ঠান বারবার রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত; তাই তাদের উৎপাদিত পণ্য নির্ভরযোগ্য। বরং এটিই বাস্তবতা, ফাঁকফোকর পেলে নিম্নমানের পণ্যকে উৎকৃষ্ট হিসেবে চালিয়ে দেয়ার মানসিকতা প্রবল। খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানগুলো মানহীন পণ্য বাজারজাত করে ভোক্তাদের আস্থা হারিয়েছে। কিন্তু পণ্যের মান যাচাই করা ব্যক্তিগতভাবে সম্ভব নয়। আবার পণ্যের মানসম্পন্ন হলেও দাম অতিরিক্ত বেশি হলে সাধারণ মানুষের পক্ষে তা ভোগ করা সম্ভব নয়। নিম্নমানের পণ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, মজুত, সরবরাহ, আমদানি ও বিপণনে জড়িতদের নিরুৎসাহিত করতে লাইসেন্স বাতিল যথেষ্ট নয়। তাদের বিরুদ্ধে বড় অঙ্কের জরিমানাসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।