Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 10:00 pm

মাইক ব্যবহারে নীতিমালার বাস্তবায়ন প্রয়োজন

নাগরিক জীবনে শব্দদূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। রাজধানী ঢাকায় ইমারত তৈরি ও যানবাহনের হর্নের শব্দে পথচারী ও সড়ক-সংলগ্ন বাসিন্দারা যারপরনাই বিরক্ত। এ সমস্যা তাদের জন্য শুধু বিরক্তিকর হয়েই দেখা দিচ্ছে তা নয়, স্বাস্থ্যঝুঁকিও তৈরি করছে। নবজাতক ও কমবয়সী শিশুদের জন্য উচ্চশব্দ এক ধরনের সমস্যা তৈরি করছে, তেমনি বয়স্করাও শব্দের কারণে বিভিন্ন পীড়ায় ভুগছেন। শব্দদূষণে কানের সমস্যা হয়, যা পরবর্তী সময়ে মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়তে পারে। হৃৎপিণ্ডের সমস্যা তো রয়েছেই। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন, বিদ্যালয়, হাসপাতাল প্রভৃতির সামনে কম শব্দে হর্ন বাজানোর কথা লেখা থাকলেও চালকরা তা থোড়াই কেয়ার করেন। আমরা যেন শব্দদূষণের প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছি!

রাজধানী ঢাকার মতোই শব্দদূষণ এখন দেখা যাচ্ছে দেশের অন্য শহরগুলোতেও। গতকালের শেয়ার বিজে তেমনই একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। ‘সৈয়দপুরে মাত্রাতিরিক্ত শব্দদূষণে অতিষ্ঠ জনজীবন’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উচ্চ আওয়াজে মাইক ব্যবহারের কারণে সেখানে মারাত্মক শব্দদূষণ ঘটছে, অথচ এটি দেখার যেন কেউ নেই! খবর থেকে আরও জানা যায়, গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষে মাইক বাজানো হচ্ছে দিনের পর দিন। কোথাও বা বিপুলসংখ্যক মাইক অনুষ্ঠানস্থলের বাইরেও টানানো হচ্ছে। বিভিন্ন কাজে মাইকের ব্যবহার চলছে যথেচ্ছাভাবে। কারণে-অকারণে এসব মাইক বাজানো হলেও এর প্রতিকারে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। সৈয়দপুর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার বলেছেন, ‘পৌরসভা কর্তৃপক্ষ শব্দদূষণ রোধে পুলিশের সহযোগিতা চাইলে অবশ্যই তা দেওয়া হবে।’ এ কেমন কথা! পুলিশের সামনে কোনো অপরাধ ঘটলে কেউ না জানানো পর্যন্ত পুলিশ কি বসে থাকবে? মাইক ব্যবহারে নীতিমালা রয়েছে। কেউ তা না মানলে পুলিশ আইনানুসারেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। শুধু সৈয়দপুরে নয়, মাইক ব্যবহারে অরাজকতা চলছে দেশজুড়ে। অনেক সময় রাতের পর রাত মাইক বাজানো হয়। এতে ওই এলাকার বাসিন্দাদের ঘুমে যেমন ব্যাঘাত ঘটে, তেমনি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ারও ক্ষতি হয়। তাছাড়া হৃদরোগীরা যেমন সমস্যায় পড়েন, তেমনি ব্রেইন হ্যামারেজের ঘটনাও ঘটে উচ্চশব্দের কারণে। এসব নিয়ে যাদের সবচেয়ে বেশি সোচ্চার হওয়ার কথা, সেই জনপ্রতিনিধিরাও যেন বিষয়টিকে দিনের পর দিন উপেক্ষা করছেন। এমনও দেখা যায়, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কর্মকাণ্ড বা তাদের প্রতিষ্ঠানের খবর মাইকে প্রচার করা হচ্ছে নিয়মবহির্র্ভূতভাবে। আমরা মাইক বন্ধ নয়, তবে এটি ব্যবহারের আইন মেনে চলার ওপর জোর দিতে চাই। পাশাপাশি মাইক ব্যবহার ও শব্দদূষণ বিষয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠুক, সেটিও প্রত্যাশা করি। স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নিয়ে এ-বিষয়ে উদ্যোগ নেবে বলে আশা করছি।