মাওলানা সাদকে ছাড়াই শেষ হলো ইজতেমা

 

নিজস্ব প্রতিবেদক: এবারও গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরের বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে অংশ নিতে পারেননি ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভী। তাকে ছাড়াই গতকাল রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো এবারের বিশ্ব ইজতেমা। তবে ইজতেমায় এসেছেন মাওলানা সাদের তিন ছেলে। এর মধ্যে মোনাজাত পরিচালনা করেন বড় ছেলে ইউসুফ বিন সাদ কান্ধলভী। মোনাজাতকে ঘিরে সকাল থেকেই মানুষের ঢল নামে টঙ্গীর তুরাগ তীরে। ইজতেমা মাঠ ছাড়িয়ে মানুষের ভিড় চলে যায় আশপাশের সড়ক-মহাসড়কে। ‘আমিন আমিন’ ধ্বনিতে মুখর হয়ে ওঠে চারপাশ।

২০১৮ সালে তাবলিগের বর্তমান আমির ভারতের দিল্লির মাওলানা সাদ কান্ধলভীকে আমির মানা না-মানাকে কেন্দ্র করে বিভক্ত হয়ে পড়ে তাবলিগ জামাত। ওই বছর ইজতেমায় অংশ নিতে বাংলাদেশে এসে বিরোধের মুখে ফিরে যান সাদ কান্ধলভী। দুই পক্ষের বিরোধে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে তুরাগ ময়দানে সংঘর্ষে নিহত হন এক মুসল্লি। এরপর ২০১৯ সাল থেকে দুই পক্ষ আলাদাভাবে ইজতেমা শুরু করে।

সেই বিরোধের জেরে এবারও বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হলো আলাদাভাবে। ৪ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয় তাবলিগের প্রথম পক্ষ বা বাংলাদেশি মাওলানা জুবায়ের অনুসারীদের ইজতেমা। এর মধ্যে গত শুক্রবার থেকে শুরু হয় দ্বিতীয় পক্ষ বা মাওলানা সাদ কান্ধলভী অনুসারীদের ইজতেমা। তবে ২০১৮ সালে বিরোধের মুখে ফিরে যাওয়ার পর আর ইজতেমায় অংশ নেননি সাদ কান্ধলভী। এবারের ইজতেমায় তার আসার কথা থাকলেও বা অনুসারীরা তাকে আনার চেষ্টা করলেও, সরকারি বাধ্যবাধকতা থাকায় ইজতেমায় অংশ নিতে পারেননি সাদ কান্ধলভী।

পূর্বঘোষণা অনুযায়ী আখেরি মোনাজাত শুরু হওয়ার কথা ছিল সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ১১টার মধ্যে যেকোনো সময়। তবে মোনাজাত শুরু হয় বেলা ১১টা ১৭ মিনিটে। মোনাজাত চলে ১১টা ৪৩ মিনিট পর্যন্ত।

আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে গত শনিবার রাতের মধ্যেই ভরে যায় পুরো ইজতেমা মাঠ। এর মধ্যেই গতকাল সকাল ৬টা থেকে ঢাকা ও আশপাশের এলাকার মুসল্লিরা দলে দলে জড়ো হতে থাকেন ইজতেমা মাঠের দিকে। একপর্যায়ে মাঠে জায়গা না পেয়ে লোকজন বসে পড়েন সড়কে।

সরেজমিন দেখা যায়, আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে তুরাগতীর, ইজতেমা মাঠসংলগ্ন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, কামারপাড়া-মন্নুগেট সড়ক ও আবদুল্লাহপুর-আশুলিয়া সড়কে মানুষের প্রচুর ভিড় ছিল। এ ছাড়া মাঠসংলগ্ন খোলা জায়গা, ঘরবাড়ির ছাদ, তুরাগপাড়ে ভিড়িয়ে রাখা নৌকা বা থেমে থাকা যানবাহনে প্রচুর মানুষ ছিল। কেউ বসে ছিলেন, কেউ দাঁড়িয়ে কান পেতে ছিলেন মাইকের শব্দে। সবার অপেক্ষা ছিল আখেরি মোনাজাতের জন্য। এর মধ্যেই বেলা ১১টা ১৭ মিনিটে শুরু হয় মোনাজাত। হাজারো মুসল্লির সমবেত ধ্বনিতে মুখর হয়ে ওঠে চারপাশ। মোনাজাতে দেশ, জাতি ও মানবতার শান্তি কামনা করা হয়।

এর আগে আজ ফজরের নামাজের পর আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় তৃতীয় দিন বা শেষ দিনের কার্যক্রম। বয়ান করেন ভারতের মাওলানা মুফতি মাকসুদ। মূল বয়ান হিন্দিতে হলেও তা বাংলায় অনুবাদ করেন মাওলানা আবদুল্লাহ। এরপর কিছু সময় ‘হেদায়েতি বয়ান’ করেন মাওলানা সাদের বড় ছেলে ইউসুফ বিন সাদ কান্ধলভী। পরে তিনিই মোনাজাত পরিচালনা করেন।

মোনাজাতে অংশ নিতে আসা মুসল্লিদের চলাচলের সুবিধার্থে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের আবদুল্লাহপুর থেকে ভোগড়া বাইপাস, টঙ্গী ঘোড়াশাল আঞ্চলিক সড়কের মিরের বাজার থেকে স্টেশন রোড, কামারপাড়া-মন্নুগেট সড়ক ও আবদুল্লাহপুর থেকে কামারপাড়া সড়কে যান চলাচল সীমিত করা হয়। এর মধ্যে মন্নুগেট-কামারপাড়া সড়কে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয়।

ইজতেমা আয়োজকদের গণমাধ্যম সমন্বয়ক মো. সায়েম বলেন, ‘মাওলানা সাদ সাহেবকে ছাড়া আমাদের মজমা পরিপূর্ণ নয়। আমরা তাকে আনার জন্য কয়েক বছর ধরে আপ্রাণ চেষ্টা করছি। কিন্তু প্রতিবারই সরকারি বাধ্যবাধকতা বা বিরোধীপক্ষের কারণে ব্যর্থ হয়েছি। তাই এবারের ইজতেমায়ও তিনি অংশ নিতে পারেননি। আমরা আজ তাকে না পাওয়ার ব্যথা নিয়েই ইজতেমা শেষ করলাম।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০