Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 5:44 pm

মাছ চাষে ভাগ্য বদল আবু তালেবের

যে কোনো উদ্যোগের শুরুতে আসে অনেক বাধা-বিপত্তি। এসব গায়ে না মেখে লেগে থাকলে সফল হওয়া যায়। যারা সফল হন, তাদের অনুসরণ করলে আরও নতুন উদ্যোগ শুরু হয়। নানা খাতের সেসব সফল উদ্যোক্তাকে নিয়ে ধারাবাহিক আয়োজন

‘ছোটবেলা থেকে ইচ্ছা ছিল ভালো ফুটবলার হবো। নিজ এলাকা ও পার্শ্ববর্তী জেলায় খেললেও প্রশিক্ষণ ও সুযোগের অভাবে খেলা ছেড়ে দিতে হয়। হয়তো জাতীয় দলে সুযোগ পেতাম। বাধ্য হয়ে ফুটবল খেলার গতি পাল্টে অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হতে বেছে নিই মাছ চাষ। এতেই ঘুরে যায় জীবনের গতি।’ কথাগুলো পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার ফুটবলার আবু তালেব জোয়াদ্দারের।

উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে কোনো চাকরির আশা না করে এক লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে তিনি শুরু করেন মাছের ব্যবসা। প্রথমে মাছ বিক্রি করে ভালো আয়ের মুখ দেখেন। এরপর পথ খুঁজতে থাকেন ব্যবসা সম্প্রসারণের।

আবু তালেব এখন সফল মৎস্যচাষি হিসেবে পরিচিত। ঈশ্বরদীর মৎস্যচাষিদের আইডল হিসেবে ইতোমধ্যে নাম কুড়িয়েছেন। মাছ চাষ করেই তিনি প্রায় বিশ লাখ টাকার মালিক এখন। খামারের উপার্জিত অর্থ থেকে দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার জন্য আর্থিকভাবে সহযোগিতাও করে থাকেন তিনি। একজন ভালো ফুটবলার হিসেবেও তার সুখ্যাতি রয়েছে এলাকায়।

ঈশ্বরদী উপজেলার মুলাডুলি ইউনিয়নের ফরিদপুর গ্রামের মরহুম আবুল হোসেনের ছেলে আবু তালেব জোয়াদ্দার। বাবার জমিতে দুটি পুকুরে ২০১০ সালে শুরু করেন মাছ চাষ। আর্থিক অবস্থা ভালো হওয়ার পর এলাকার বিভিন্ন পরিত্যক্ত ও অনাবাদি জমি ইজারা নিয়ে খামার প্রসারিত করতে থাকেন। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। বর্তমানে জোয়াদ্দার মৎস্য খামারে ৪৬ বিঘা জমিতে পুকুরের সংখ্যা ১১টি।

তালেব এ এলাকায় একজন আদর্শ ও প্রতিষ্ঠিত মডেল মাছচাষি। গড়ে তুলেছেন পোলট্রি, ছাগল ও ভেড়ার খামার। তার একটি ডেইরি ফার্মও রয়েছে। করছে ধান ও সবজি চাষও। খামারের নাম দিয়েছেন জোয়াদ্দার মৎস্য খামার। বর্তমানে তার খামারে প্রতিদিন ৩৫ শ্রমিক নিয়মিত কাজ করে থাকেন।

তার পরামর্শে স্থানীয় বেকার যুবকেরা মৎস্য চাষ শুরু করেছেন। অনেকে সফলও হয়েছেন। সাফল্যের বিষয়ে তালেব বলেন, বেকারত্ব দূর করার পাশাপাশি বিদেশি মাছের আধিপত্য দূর করতে এ পেশা বেছে নিয়েছি। দেশ ও জনসাধারণের কথা চিন্তা করে মাছের সম্প্রসারণ ঘটানোর জন্য বেকার যুবকদের উৎসাহিত করে চলেছি। তিনি আরও বলেন, মাছ শিকার করা আমার শখ ছিল। অন্যের পুকুরে টিকিট কেটে হুইল দিয়ে মাছ শিকার করতে গিয়ে এর প্রতি আগ্রহ জাগে। তাই ফুটবল খেলার পাশাপাশি মাছ চাষে মনোনিবেশ করি। এখন মাঝেমধ্যে আমার পুকুরেও মাছ ধরার জন্য টিকিট বিক্রি করে থাকি। আমি বিশ্বাস করি, এদেশের শিক্ষিত বেকার যুবকেরা সততার সঙ্গে শ্রম দিয়ে মাছ চাষ করলে ভালো অবস্থানে যেতে পারবেন।

পাবনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম রহমান বলেন, জোয়াদ্দার মৎস্য খামারটি পরিপাটিভাবে সাজানো। বেকার যুবকদের মাছ চাষে আগ্রহী করে তুলেছেন তালেব। আমাদের দফতর থেকে তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। মৎস্য দফতরের পক্ষ থেকে তার খামারে মাছের মড়ক নিরাময়, স্বল্প সময়ে মাছ বড় করার পদ্ধতিসহ সার্বিক পরামর্শ ও সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।

 

শাহীন রহমান, পাবনা