জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন ইস্যুতে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়ে থাকে শেয়ার বিজে। তেমন এক প্রতিবেদনের শেষ পর্ব ছাপা হয়েছে গতকাল, যার বিষয় ছিল ‘পদ্মা সেতু’। অস্বীকার করা যাবে না, এক পর্যায়ে সরকারের জন্য মূল চ্যালেঞ্জ ছিল পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করতে পারা। এমন গুজবও ছড়িয়েছিল যে, এ সেতুর নির্মাণসামগ্রী পরিবহন ও তা গণমাধ্যমে প্রকাশ আদতে আইওয়াশ; প্রকৃতপক্ষে কাজটি সরকারের পক্ষে অসম্ভব। যাহোক, নিন্দুকদের হতাশ করে বেশ খানিকটা এগিয়েছে সেতুর নির্মাণকাজ। সেজন্য সংশ্লিষ্টরা প্রশংসার দাবিদার। তবে আজকের এ সম্পাদকীয়র উদ্দেশ্য এর বন্দনা নয়, বরং পদ্মা সেতুর চলমান নির্মাণ প্রক্রিয়ার একটি বিশেষ দুর্বলতার প্রতি নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ যাতে করে যথাযথভাবে সেতুর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়।
যে খবরটির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, তার শিরোনাম‘ছয় মাসে পদ্মা সেতুর নকশায় দুই দফা পরিবর্তন’। আমাদের প্রতিবেদক জানিয়েছেন, পদ্মা সেতুর নকশা ২০১৪ সালে নির্মাণকাজ শুরুর আগে প্রণীত হওয়া সত্তে¡ও এখনও চলছে এ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা। প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত বছরের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত দু’দফায় পাইলের নকশা পরিবর্তন হওয়ায় এখনও অনুমোদন পায়নি চুড়ান্ত নকশা। নকশা পরিবর্তনের যুক্তি হিসেবে পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক এ দৈনিকের কাছে মন্তব্য জানিয়েছেন‘নকশা পরিবর্তন একটি চলমান প্রক্রিয়া। মাটির গুণাগুণ, নদীর তলদেশের মাটিক্ষয়, স্রোতধারা প্রভৃতি বিবেচনায় নকশা প্রণয়ন করা হয়েছিল। তবে এ নির্মাণ প্রক্রিয়ায় কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর ভিত্তিতেই কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে।’ তার এ যুক্তি অস্বীকারের সুযোগ নেই। বড় নদীর ওপর সেতু নির্মাণ এমনিতেই চ্যালেঞ্জিং। ফলে সেতুর নকশা প্রণয়নের সময় কেবল বর্তমান প্রেক্ষাপট নয়, ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি অনুমান করে নকশা প্রণয়ন করতে হয়। এ অবস্থায় মাস্টারপ্ল্যানের সঙ্গে সংশোধিত পরিকল্পনায়ও কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। এক্ষেত্রে কারও কারও আপত্তি নকশা পরিবর্তনের ধরন নিয়ে। আমাদের প্রতিবেদক জানিয়েছেন, প্রধানত পাইলের কারণে ১৪টি পিলারের নকশায় পরিবর্তন এসেছে। এমন যদি হতো, নদীস্রোতে ক্ষয়ের কারণে পাইল কয়েক ফুট কম-বেশি করতে হচ্ছে, তাহলে কথা ছিল। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে গভীরতায় পাইল বসানোর কথা হচ্ছে, সে গভীরতায় পাইলগুলো প্রাক্কলিত ভার বহনে সক্ষম নয়। তার মানে, ওইসব স্থানে আগে থেকে উপযুক্ত সয়েল টেস্ট করা হয়নি। এর কারণ হিসেবে প্রকল্পসংশ্লিষ্ট অনেকে বলছেন সময়স্বল্পতার কথা। তবে কারও কারও মতে, এসব খোঁড়া যুক্তি। কেননা পদ্মা সেতুর জন্য অভ‚তপূর্ব গভীরতায় পাইল বসাতে হচ্ছে এটা পুরোনো কথা। এ কাজটি মুখে মুখে হিসাব করে করা দায়িত্বশীল আচরণ নয়। লক্ষণীয়, বঙ্গবন্ধু সেতুর নকশায়ও কিছু সংশোধন এসেছিল; কিন্তু সেগুলো এরূপ নয়। অবশ্য দুটি নদীর প্রকৃতি ভিন্ন; সেজন্য উভয় সেতুর তুলনা করা যাবে না সেভাবে। তবু এ ভাবনা অনেকের মনে না এসে পারে না যে, বঙ্গবন্ধু সেতুর নকশা প্রণয়ন থেকে চালু পর্যন্ত বৃহৎ উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলো সক্রিয়ভাবে পাশে ছিল আমাদের। পদ্মা সেতুর বেলায়ও তারা আছে বটে; যদিও দূরত্ব দৃশ্যমান। কথা হলো, পদ্মা সেতু নির্মাণ কেবল সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ নয়, খোদ নির্মাণশিল্পের জন্যও চ্যালেঞ্জ। এমন পরিস্থিতিতে নানা বাধাবিপত্তি সামাল দিতে যত বেশি ‘বন্ধু’ হাতের কাছে থাকে, ততই ভালো। আর সেসব বন্ধুর যদি থাকে বৃহৎ নির্মাণের বিশেষজ্ঞ জ্ঞান, তবে তো সোনায় সোহাগা।
Add Comment