ঘুম থেকে উঠে মোবাইল ফোনে চোখ বুলান? নাশতার সময় চোখের সামনে থাকে ফোন? বাসে কিংবা ট্রেনে? কর্মস্থলে? এমনকি বাথরুমেও ফোন নিয়ে ঢোকেন? প্রশ্নগুলোর উত্তর ‘হ্যাঁ’ ধরে নিচ্ছি।
কেননা আপনি আধুনিক যুগে বাস করছেন। একটু সতর্ক না হলে কি চলে? যুগের হাওয়ায় ভেসে বেড়াতে কে না চায়? লগ ইন, সাইন আউট, স্ট্যাটাস চেকÑএখন এ নিয়ে ব্যস্ত সবাই। এসবের মধ্য দিয়েই আমরা এখন সময় কাটিয়ে থাকি, মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করি, তাই না?
আসলে কি তা-ই? গবেষণা বলছে ভিন্ন কথা। কিছুদিন আগে মানুষের সঙ্গে প্রযুক্তির সম্পর্ক নিয়ে একটি জরিপ করেছে আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন বা এপিএ। অনেক মানুষ ই-মেইল, ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামসহ ঘন ঘন নিউজ পোর্টালে চোখ বুলিয়ে থাকে। গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এর মধ্য দিয়ে আমরা আসলে এক অস্বস্তিকর সময় পার করি। এক ধরনের মানসিক অস্থিরতা অনুভব করি।
জরিপে অংশ নেন তিন হাজার ৫১১ জন। ‘কতক্ষণ পরপর ফোন চেক করেন?’ জরিপে এই একটিমাত্র প্রশ্ন রাখা হয়। মানসিক চাপ মাপার জন্য ০ থেকে ১০ পর্যন্ত মানদণ্ড রাখা হয়। কোনো অংশগ্রহণকারী ০ টিক দিলে বুঝে নিতে হবে তিনি কথা বলার বাইরে ফোন ব্যবহার করেন না। এভাবে ১, ২, ৩ করে বাড়তে থাকে ফোন ব্যবহারের মাত্রা। শেষে ১০-এ গিয়ে ঠেকে তা।
যেসব ব্যক্তি নিয়মমাফিক তাদের ফোন চেক করেন, তাদের স্কোর ৪ দশমিক ৪। যারা অবিরত ফোন চেক করে থাকেন, তাদের স্কোর ৫ দশমিক ৩। যদি কারও চোখ মোবাইলে আঠার মতো লেগে থাকে, তাহলে তার স্কোর ৬। অংশ নেওয়া মানুষ তাদের পছন্দমাফিক নম্বরে টিক চিহ্ন দেন। উত্তর শেষে তারা ফল নির্ধারণ করেন। দেখা যায়, নিয়মিত ফোন ব্যবহারকারীরাও মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছেন।
জরিপে আরও কয়েকটি নেতিবাচক দিক উঠে এসেছে। যেমন ৪৫ শতাংশ মা-বাবা মনে করেন, তারা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। এমনকি একই রুমে থেকেও যেন তারা একে অপরের অচেনা। টেকনোলজির কারণে এমন ঘটছে বলে মনে করেন সবাই। ৪২ শতাংশ মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী মনে করেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাজনীতি ও সংস্কৃতি নিয়ে আলাপ-আলোচনায় তারা অস্বস্তিবোধ করেন।
এ অবস্থা থেকে মুক্তির উপায় কী? কিছু সমাধান উত্তরদাতারাই বাতলে দিয়েছেন। ৬৫ শতাংশ উত্তরদাতা মাঝে মাঝে গেজেট থেকে দূরে থাকেন। এ অভ্যাসের ফলে উদ্বিগ্নতা কমে যায়, মনে করেন তারা। অর্থাৎ মনের ভাব পরিবর্তনে প্রযুক্তিতে আসক্ত না হওয়াই ভালো।