জেলা প্রতিনিধি, গাজীপুর: গাজীপুর মহানগরীর সদর থানাধীন দক্ষিণ ছায়াবীথি এলাকার একটি পরিত্যক্ত জমির মাটি খননের সময় ১৬টি আর্জেস গ্রেনেড পাওয়া গেছে। গত সোমবার সকালে পরিত্যক্ত অবস্থায় গ্রেনেডগুলো উদ্ধার করা হয়। পরে বিকালে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে গ্রেনেডগুলো নিষ্ক্রিয় করেন। এ সময় বিস্ফোরণের শব্দে আশপাশের এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে এবং ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলের আশপাশের লোকজনকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে দেয়া হয়।
স্থানীয়রা জানান, গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার বাসিন্দা ও সৌদি প্রবাসী আবুল কাশেম বাড়ি নির্মাণ করার জন্য মহানগরীর সদর থানাধীন দক্ষিণ ছায়াবীথি (জোড়পুকুরপাড়) এলাকায় সাড়ে তিন-চার বছর আগে তিন কাঠা জমি ক্রয় করে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করে ফেলে রাখেন। দুমাস আগে তিনি দেশে ফিরে ওই জমিতে বাড়ি নির্মাণের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। সোমবার সকালে এখানে স্থানীয় শ্রমিকরা মাটি খনন কাজ শুরু করে। সকাল ৯টায় মাটি খনন করার পর গর্তের মধ্যে একটি মাটির কলস বেরিয়ে আসে। এ সময় কলসটি আঘাত লেগে ভেঙে গেলে কলসের ভেতর গ্রেনেডসদৃশ কয়েকটি বস্তু দেখা যায়। পরে বিষয়টি পুলিশকে জানালে পুলিশ এসে পরীক্ষা করে।
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়, এগুলো পরিত্যক্ত গ্রেনেড। পরে নিরাপত্তার জন্য এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে দেয়া হয় এবং সীমানাঘেরা জমির গেটে তালা দিয়ে রাখা হয়। এ বিষয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ রাফিউল করিম জানান, গ্রেনেডসদৃশ কিছু বস্তু পাওয়ার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরীক্ষা করে এগুলো বিস্ফোরকজাতীয় বস্তু বলে ধারণা করে। পরে নিরাপত্তার স্বার্থে আশপাশের লোকজনকে সরিয়ে দেয়া হয় এবং জায়গাটির গেটে তালা দেয়া হয়। পাওয়া যাওয়া বস্তুগুলো পরীক্ষা করার জন্য ঢাকার বোম্ব ডিসপোসাল ইউনিটকে খবর দেয়া হয়।
খবর পেয়ে ঢাকা থেকে দুপুর ১২টায় ঢাকা মহানগর পুলিশের অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের টিম লিডার ও সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহমুদুজ্জামানের নেতৃত্বে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের ১৯ সদস্যের একটি দল ঘটনাস্থলে আসে। তারা দুটি অত্যাধুনিক রোবট, বিভিন্ন যন্ত্রপাতিসহ এসে ঘটনাস্থলের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এ সময় আশপাশের বিভিন্ন বাসাবাড়ির লোকজন ও উৎসুক জনতাকে সরিয়ে দেয়া হয়। পরে কলসির ভেতর থেকে ১৬টি তাজা গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়। বিকাল ৪টায় এগুলো নিষ্ক্রিয়করণ শুরু হয়। এ সময় হ্যান্ডমাইকে ঘোষণা দিয়ে নিরাপদ স্থানে গ্রেনেডগুলোর পরপর বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। বিস্ফোরণের শব্দে আশপাশের এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে।
এ সময় আশপাশের এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। পাশেই ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট প্রস্তুত রাখা হয়। গ্রেনেড নিষ্ক্রিয় করার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের টিম লিডার ও সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহমুদুজ্জামান। তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে আমরা এসে দেখতে পেলাম একটি মটকার (মাটির কলসি) ভেতরে প্রচুর শক্তিশালী গ্রেনেড, যাকে আর্জেস গ্রেনেড বলা হয়, এ ধরনের গ্রেনেড রয়েছে। এ কারণে এ জায়গাটা আমাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ছিল, যে কারণে আমরা আমাদের আরওভি রোবটের (রিমোটলি অপারেটর ভেহিকেল) মাধ্যমে প্রত্যেকটি গ্রেনেড দেখার চেষ্টা করি। আমরা দেখার চেষ্টা করি গ্রেনেডের পিনগুলো অক্ষত আছে কি না। কারণ গ্রেনেডের পিন খুলে গেলে এটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকে।
মাহমুদুজ্জামান আরও বলেন, পরে আমরা সফলতার সঙ্গে সব গ্রেনেড আলাদা করতে সক্ষম হই। পরে আমাদের টিমের দুই সদস্য বোম্ব স্যুট পরে ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর প্রত্যেকটি গ্রেনেড আমরা আলাদা আলাদাভাবে ডিসপোজ করতে সক্ষম হই। তিনি বলেন, আপনারা জানেন, আর্জেস গ্রেনেড আমাদের দেশে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার সময় ব্যবহার করা হয়েছিল। এটা আসলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার দরকার আছে। এগুলো আমরা নিয়ে যাব, এটা আমরা ফরেনসিক চেক করব। এটা আমরা বিস্ফোরক অধিদপ্তরে পাঠাব। তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যাবতীয় বিষয় জানাতে পারবেন।