শেয়ার বিজ ডেস্ক: বগুড়ার শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীকে তাড়িয়ে দেওয়া, পথে তার সন্তান প্রসব ও মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ১৪ ডিসেম্বর আদালতে এই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে আদালত শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বরত চিকিৎসক ও নার্সকে তলব করেছেন। তাদেরও ১৪ ডিসেম্বর আদালতে হাজির হয়ে অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ এই আদেশ দেন। একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনা হলে তা বিবেচনায় নিয়ে আদেশ দেন হাইকোর্ট। খবর প্রথম আলো ও কালের কণ্ঠ।
জাতীয় দৈনিক দুটিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রসব বেদনায় ছটফট করা অন্তঃসত্ত্বা নারীকে মধ্যরাতে বগুড়ার শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়েছিল। ভর্তিও করা হয়। কিন্তু প্রসব কক্ষে না নিয়ে পাশের ক্লিনিকে নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয় তাকে। সেখানে নেওয়ার পথে হাসপাতালের মাঠে গাছতলায় প্রচণ্ড ঠাণ্ডার মধ্যে মাটিতেই সন্তান প্রসব করেন ওই নারী। যতক্ষণে চিকিৎসক আসেন, ততক্ষণে নবজাতক চলে গেছে না ফেরার দেশে। মঙ্গলবার রাতের এ ঘটনায় সিভিল সার্জনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন সেই নবজাতকের বাবা শেরপুরের গাড়িদহ ইউনিয়নের স্কুলপাড়া গ্রামের ইলিয়াছ উদ্দিন। চেয়েছেন দোষীদের বিচার।
ইলিয়াছ উদ্দিন জানান, প্রসব বেদনা উঠলে স্ত্রী মাজেদা বেগমকে রাত ১১টার দিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। দায়িত্বরত চিকিৎসক মোস্তফা আলম আল্লামা তালুকদার পিয়াল তাকে ভর্তি করেন। এক ঘণ্টা পর তাকে ডেলিভারি কক্ষে নেওয়ার কথা। কিন্তু সিনিয়র স্টাফ নার্স সুষমা রানী মাজেদাকে পাশের মডার্ন ক্লিনিকে নিয়ে ডা. রাফসান জাহান রিম্মীর কাছে সিজার করার পরামর্শ দেন। মাজেদাকে কয়েকটি ট্যাবলেট খাইয়ে দিয়ে দরজা বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়েন। ইলিয়াছ আরও জানান, নগদ টাকা না থাকায় নার্সকে ডেকে তোলেন স্বজনরা। মাজেদাকে হাসপাতালে রেখেই চিকিৎসা করানোর অনুরোধ জানান। এ সময় ইনডোর বিভাগের আয়া পারভীন বিবি যন্ত্রণাকাতর মাজেদাকে রাত পৌনে ১টায় জোর করে হাসপাতাল থেকে বের করে দেন। কোনো যানবাহনও ছিল না। রোগীকে বাইরে নিতে গেলে গেটের কাছে চিৎকার দিয়ে পড়ে যান মাজেদা। অন্ধকার খোলা মাঠে নারকেল গাছের তলায় বালু মাটির ওপর বাচ্চা প্রসব করেন তিনি। ইলিয়াছ জানান, চিৎকার শুনে হাসপাতাল রোডের নৈশপ্রহরী ফজলু মিয়া ও পথচারী রিন্টু এসে দরজা ধাক্কাধাক্কি করে ঘুম থেকে ডেকে তোলেন নার্স সুষমা ও হাসপাতালের নৈশপ্রহরী কাজলকে। পরে ডাক্তার পিয়াল ও নার্স সুষমা এসে বালু মাটিতে পড়ে থাকা শিশুকে মৃত ঘোষণা করেন। অথচ জšে§র সময় শিশুটি বেঁচে ছিল। পরে সেখানে পুলিশ আসে।
ডাক্তার পিয়াল জানান, নির্ধারিত সময়ের আগেই তার প্রসব বেদনা ওঠে। পিভিসহ কিছু সমস্যা থাকায় অপেক্ষা করা হয়েছিল। প্রসব বেদনায় ছটফটরত রোগীকে কেন হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়া হলো? জবাবে নার্স সুষমা রানী জানান, তাড়িয়ে দেওয়া নয়, বাইর থেকে ওষুধ কিনে আনার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। বগুড়া সিভিল সার্জন ডা. অর্ধেন্দু দেব জানান, শেরপুর উপজেলা পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোখলেছুর রহমান ফোনে বিষয়টি তাকে জানিয়েছেন। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।
Add Comment