দীর্ঘমেয়াদে মাড়ির সমস্যা থেকে হতে পারে অ্যালজাইমারসের মতো জটিল রোগ। গবেষকরা বলেছেন, মাড়ির রোগের সঙ্গে যোগসূত্র আছে এমন ব্যাকটেরিয়া অ্যালজাইমারস রোগ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে পারে।
ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা নিশ্চিত করেছে, পরফাইরোমোনাস জিনজাইভালিস নামক ব্যাকটেরিয়া মুখ থেকে ব্রেনে মাইগ্রেট বা চলে যেতে পারে। এ ব্যাকটেরিয়া জিনজাইপেইন নামে একটি বিষাক্ত প্রোটিন নিঃসরণ করে থাকে, যা ব্রেনের নিউরনকে ধ্বংস করে থাকে।
যেহেতু মাড়ির রোগের সঙ্গে অ্যালজাইমারস রোগের যোগসূত্র রয়েছে, তাই মাড়ির রোগের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অবহেলা করা যাবে না। মুখের মধ্যে উপকারী ও অপকারী দুই ধরনের ব্যাকটেরিয়া বিদ্যমান থাকে। মুখে ব্যাকটেরিয়ার একটি ভারসাম্য সব সময় বজায় থাকে। যদি কোনো কারণে ব্যাকটেরিয়ার এ ভারসাম্য নষ্ট হয়, তাহলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, জনসাধারণের মাঝে যাদের স্বাস্থ্যকর ও উপকারী ব্যাকটেরিয়ার চেয়ে অধিক ক্ষতিকর বা অপকারী ব্যাকটেরিয়া রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে অ্যালজাইমারস রোগের জন্য প্রোটিন মার্কার বা নির্দেশক পাওয়া যায়। অ্যালজাইমারস রোগে প্রোটিন মার্কার হিসেবে সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইডে যে প্রোটিন পাওয়া যায়, তা অ্যামাইলয়েড বেটা নামে পরিচিত।
গবেষকরা বলেছেন, ব্রেইন অ্যামাইলয়েড অতিরিক্ত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া ও উপকারী ব্যাকটেরিয়া কমে যাওয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত। অ্যালজাইমারস রোগ নির্দেশিত হয় ব্রেনের দুটি প্রোটিনের মাধ্যমে। একটি হলো অ্যামাইলয়েড বেটা এবং অন্যটি হলো টাউ। অ্যামাইলয়েড বেটা একত্রিত হয়ে প্ল্যাক তৈরি করে এবং ধারণা করা হয়, এটি ব্রেনে জমা হয়ে অ্যালজাইমারস বা ভুলে যাওয়ার রোগ সৃষ্টি করে।
অন্যদিকে টাউ নামক প্রোটিন তৈরি হয়ে স্নায়ু কোষে জট সৃষ্টি করে। অ্যামাইলয়েড পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে যুগ যুগ ধরে টাউ প্যাথলজির আগে অথবা অ্যালজাইমারস রোগের লক্ষণগুলো চিহ্নিত হওয়ার আগেই। টাউ মাইক্রোটিবিউল সম্পৃক্ত প্রোটিন অদ্রবণীয় ফিলামেন্ট গঠন করে, যা জমা হয়ে নিউরোফিব্রিলিয়ারি ট্যাঙ্গেল বা জটলা সৃষ্টি করে অ্যালজাইমারস বা ভুলে যাওয়া রোগের ক্ষেত্রে। এ কারণেই মাড়ির যথাযথ যত্ন নিতে হবে এবং মাড়ি রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে অবহেলা করা যাবে না। মাড়ির স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য ফল, ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ খাবার, দুধ, ডিম ও দই খাওয়া যেতে পারে। সকালে নাশতার পর এবং রাতে ঘুমানোর আগে দাঁত ব্রাশ করতে হবে।
ডা. মো. ফারুক হোসেন
মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ