Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 4:41 pm

মাতৃভাষায় বই পেল পাহাড়ের ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা

প্রতিনিধি, বান্দরবান: বান্দরবানে বছরের প্রথম দিনেই পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি নিজ মাতৃভাষায় ছাপানো বই পেল পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃজনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা। মারমা, চাকমা, ত্রিপুরা তিনটি সম্প্রদায়ের ৩২ হাজার ৬৪৯ জন শিক্ষার্থীকে দেয়া হয়েছে নিজ মাতৃভাষার বই। বছরের প্রথম দিন নিজ মাতৃভাষার বই পেয়ে ভীষণ খুশি শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা।

শিক্ষা অফিসের তথ্যমতে, পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ১১টি ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। ‘মারমা, চাকমা, ত্রিপুরা, ম্রো, তঞ্চঙ্গ্যা, বম, খুমি, খেয়াং লুসাই, পাঙ্খোয়া’ জনগোষ্ঠীর প্রত্যেকের নিজস্ব ভাষা, বর্ণমালা এবং ঐতিহ্য সংস্কৃতি কৃষ্টি কালচার রয়েছে। কিন্তু সংরক্ষণ এবং চর্চার অভাবে ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর বেশ কয়েকটি সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংস্কৃতি ও ভাষা বিলুপ্তির পথে।

পার্বত্যাঞ্চলে বসবাসরত ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীগুলোর ভাষা, বর্ণমালা এবং সংস্কৃতি সংরক্ষণের লক্ষ্যে ২০১৭ সালে সরকার ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নিজস্ব মাতৃভাষায় বই পাঠ্যপুস্তকে লিপিবদ্ধ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্যবই হিসেবে বিতরণ করে আসছে।

এরই ধারাবাহিকতায় বছরের প্রথম দিনেই বান্দরবান জেলার সাতটি উপজেলায় পাঠ্যবই বিতরণের পাশাপাশি পাহাড়ের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী মারমা, চাকমা এবং ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের নিজ মাতৃভাষার বই বিতরণ করা হয়েছে।

পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি নিজ মাতৃভাষার বর্ণমালা চিনতে ও জানতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ মাতৃভাষার বইও পড়ানো হচ্ছে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে। আর বছরের প্রথম দিন পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি নিজ মাতৃভাষার বই পেয়ে ভীষণ খুশি শিক্ষার্থীরা।

এবার জেলার সাতটি উপজেলায় ২৩ হাজার ২৬৮টি মারমা মাতৃভাষার বই, সাত হাজার ৯৫টি ত্রিপুরা মাতৃভাষার বই এবং দুই হাজার ২৬৬টি চাকমা ভাষার বই বিতরণ করা হয়েছে। আর শিক্ষার্থীদের নিজ মাতৃভাষার বর্ণমালা শিখাতে সপ্তাহে একদিন পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি বিদ্যালয়ে নিজ মাতৃভাষার এসব বই পড়ানো হয় বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা।

শিক্ষার্থী মেথুই মারমা, উসাইনু মারমা বলেন, নতুন বছরের প্রথম দিনে নতুন বই পেয়ে আমরা ভীষণ খুশি। পাঠ্য বইয়ের সঙ্গে নিজেদের মারমা ভাষায় ছাপানো বইও দেয়া হয়েছে।

স্থানীয় শিক্ষার্থীদের অভিভাবক সাথোয়াই মারমা, অংচ মং মারমা অভিযোগ করে বলেন, পাহাড়ে জনগোষ্ঠীদের নিজেদের মাতৃভাষা বর্ণমালা শিখতে ও সংরক্ষণে সরকারের এ উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তবে পর্যাপ্ত দক্ষ শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীরা এসব বই সঠিকভাবে পড়তে পারছে না। বিদ্যালয়গুলোতে মাতৃভাষায় পাঠদানের জন্য প্রশিক্ষিত শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।

বান্দরবান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সফিউল আলম জানান, বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সংকট এবং দক্ষ ও প্রশিক্ষিত শিক্ষক না থাকায় সব বিদ্যালয়ে মাতৃভাষায় পাঠদান করানো সম্ভব হচ্ছে না। তবে আমরা শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি। ভবিষ্যতে এ সমস্যার সমাধান হবে।