Print Date & Time : 23 June 2025 Monday 3:27 am

মাত্রাতিরিক্ত মুনাফায় বিক্রি হচ্ছে পাম তেল!

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: বর্তমানে দেশের বাজারের যেসব মালয়েশিয়ান পাম অয়েল পাওয়া যাচ্ছে তার আমদানিমূল্য ছিল ৭৮০ ডলার। এর সঙ্গে অন্যান্য আমদানি খরচসহ মুনাফা টনপ্রতি ১১০ ডলার যুক্ত করলে দেশের প্রতি লিটার পাম অয়েলের মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৯৮ টাকা। অথচ চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ পাইকারিতে বিক্রয় হচ্ছে লিটারপ্রতি ১২৯ টাকা। মূলত গুটি কয়েক আমদানিকারক হওয়ায় ডলার সংকটকে পুঁজি করে মাত্রাতিরিক্ত মুনাফা করছে।

গতকাল দুপুরের সরেজমিনে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজার ঘুরে জানা যায়, সিটি গ্রুপের সয়াবিন তেল প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার ৯১০ টাকা, টিকে গ্রুপের তেল বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার ৮৮০ টাকা, এস আলম গ্রুপের তেল ৫ হাজার ৭৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে সিটি গ্রুপের পাম অয়েল প্রতি মণ বিক্রয় হচ্ছে ৪ হাজার ৮৩০ টাকা, টিকে গ্রুপের ৪ হাজার ৮২০ টাকা এবং এস আলম গ্রুপের ৪ হাজার ৮০০ টাকা।

বুরসা মালয়েশিয়া ডেরিভেটিভস এক্সচেঞ্জে গতকাল এপ্রিলে সরবরাহ চুক্তিতে মালয়েশিয়ান বাজার আদর্শ পাম অয়েলের দাম ৪৪ রিঙ্গিত বা ১ দশমিক ১১ শতাংশ বেড়েছে। প্রতি টনের মূল্য স্থির হয়েছে ৩ হাজার ৯৯২ রিঙ্গিতে বা ৮৪৪ ডলার ১৫ সেন্ট, যা গত বছরের ১৬ নভেম্বরের পর সর্বোচ্চ। অপরদিকে বুরসা মালয়েশিয়া ডেরিভেটিভস এক্সচেঞ্জে গত ১৬ নভেম্বর মাসে জানুয়ারিতে সরবরাহ চুক্তিতে পাম অয়েল প্রতি টনের মূল্য লেনদেন হয়েছিল ৩ হাজার ৬৭২ রিঙ্গিতে বা ৭৮০ ডলার ৬১ সেন্ট। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে টনপ্রতি দাম বেড়েছে ৬৪ ডলার।

খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীরা বলেন, দেশের ভোজ্যতেলের বাজারের চাহিদা ২০ থেকে ২২  লাখ টন। এর বিপরীতে বছরে আমদানি হয় ৩০ থেকে ৩৩ লাখ টন। এর মধ্যে পাম অয়েল ১৮ টন এবং সয়াবিন ১২ লাখ টন। এসব চাহিদার সিংহভাগ তেল সরবরাহ করে তেলের বাজারের সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, টিকে গ্রুপ, বাংলাদেশ এডিবয়েল এবং এস আলম গ্রুপ। তারা আরও বলেন, রোজায় ভোজ্যতেলের চাহিদা থাকে বেশি। তাদের হিসাবে এই চাহিদা অন্তত সাড়ে তিন লাখ টন। ভোজ্যতেলের মধ্যে সয়াবিন আমদানি কমলেও পাম তেল আমদানি বেড়েছে। তবে সয়াবিন ও পাম দুই ধরনের তেল আমদানিতেই ঋণপত্র বেড়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ১ নভেম্বর থেকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত হিসাবে দেশে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় অপরিশোধিত সয়াবিন তেল আমদানি কমেছে ৪৪ শতাংশ। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, ১ নভেম্বর থেকে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় সয়াবিন বীজ আমদানির ঋণপত্র ৯৪ শতাংশ এবং অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের ঋণপত্র ২৯ শতাংশ বেড়েছে।

খাতুনগঞ্জ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী আরএম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী রাশেদুল আলম শেয়ার বিজকে বলেন, আমরা পাম অয়েল প্রতি মণ ৪ হাজার ৮২০ টাকা থেকে ৪ হাজার ৮৫০ টাকায় বিক্রয় করছি; যা গত মাসের তুলনায় মণে ৫০ থেকে ৬০ টাকা বেড়েছে। অপরদিকে সয়াবিন প্রতি মণ ৫ হাজার ৯০০ টাকায় বিক্রয় করছি; যা গত এক মাসে মণে ১৫০ টাকা কমেছে। এ দাম থেকে রমজানে তেমন একটা বাড়বে বলে মনে হচ্ছে। কারণ বাজারের সরবরাহ ঠিক আছে।

এ বিষয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় দুই ভোজ্যতেল আমদানিকারক ও পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীলদের কথা বলতে চাইলে, তারা সরাসরি বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তবে তারা ঘুরিয়ে বলেন, রোজার আগে আরও তেল আসবে। তবে বাজারে চাহিদাও কিছুটা কম। ফলে সমস্যা হবে না। কিন্তু ব্যাংক রেটে ডলার পাচ্ছি না। এখন তা কাগজে-কলমে ১১০ টাকা। কিন্তু আমদানির ক্ষেত্রে ডলার কিনতে ১২৪ টাকার মতো দাম দিতে হচ্ছে। আমাদের বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে। আমরা ডলার কেনার জন্য যে অতিরিক্ত দাম ব্যয় করছি তা হিসাব কেউ রাখে না। তাই তেলের দাম একটু বেশি পড়ছে।

উল্লেখ, ২০২৩ সালের হিসাব অনুযায়ী, এই বছর সয়াবিন ও পামতেল আমদানি হয়েছে ২২ লাখ টন। এতে ব্যয় হয়েছিল ২১৫ কোটি মার্কিন ডলার। এগুলোর শুল্কায়নমূল্য ও রাজস্ব হিসাবে আমদানি ব্যয় দাঁড়ায় ২৬ হাজার ১৮০ কোটি টাকা।