প্রতিনিধি, মাদারীপুর: মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে বাস খাদে পড়ে নিহত হয়েছে ১৯ জন। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে কুতুবপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নিহতদের ১৭ জনের পরিচয় জানা গেছে।
নিহতরা হলেন ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার হিতোডাঙ্গা গ্রামের সৈয়দ মুরাদ আলীর ছেলে মো. ইসমাইল (৩৮), গোপালগঞ্জের গপিনাথপুর গ্রামের হেদায়েত মিয়া বাহার (৪২), নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কালনা গ্রামের বকু সিকদারের ছেলে ফরহাদ সিকদার (৩০), গোপালগঞ্জের পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপপরিচালক অনাদী রঞ্জন মণ্ডল (৫০), গোপালগঞ্জ সদরের বনগাঁও এলাকার সামছুল শেখের ছেলে মোস্তাক শেখ (৩০), গোপালগঞ্জ সদরের ছুটকা গ্রামের নশর আলী শেখের ছেলে সজিব শেখ (২৬), গোপালগঞ্জ সদরের পাঁচুরিয়া গ্রামের মাসুদ মিয়ার মেয়ে সুইটি আক্তার (২২), গোপালগঞ্জর টুঙ্গিপাড়ার নিলফা গ্রামের কাঞ্চন শেখের ছেলে কবির শেখ, গোপালগঞ্জ সদরের আবু হেনা মস্তফার মেয়ে আফসানা মিমি (২০), গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের আদমপুরের আমজাদ আলী খানের ছেলে মাসুদ খান (৩২), খুলনার সোনাডাঙার শেখ আহমেদ আলী খানের ছেলে শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন (৪২), খুলনার চিত্তরঞ্জন মন্ডলের ছেলে চিš§য় প্রসন্ন মণ্ডল, খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার পরিমল সাধুর ছেলে মহাদেব কুমার সাধু, খুলনার টুটপাড়ার শাজাহান মোল্লার ছেলে আশরাফুল আলম লিংকন, সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার সখীপুর গ্রামের আমজেদ আলী সরদারের ছেলে রাশেদ সরদার, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার অনন্তপুর গ্রামের আলী আকবরের ছেলে জাহিদ ও গোপালগঞ্জ সদরের পুরান মানিকদি গ্রামের ইমাদ বাসের সুপারভাইজার মিনহাজ বিশ্বাস (২২)।
খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ইমাদ পরিবহনের একটি বাস সকালে শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রেলিং ভেঙে খাদে পড়ে যায়। এ সময় বাসটি দুমড়েমুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই ১৪ জন নিহত হন। শিবচর হাসপাতালে নেয়ার পথে আরও তিনজনের মৃত্যু হয়। এছাড়া ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর আরও দুইজনের মৃত্যু হয়।
শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিবুল ইসলাম জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় শিবচরে ১৭ জন এবং ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। পরিচয় নিশ্চিত করে স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মিনহাজের চাচাতো ভাই সাব্বির বিশ্বাস এসে লাশ শনাক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘মিনহাজ ইমাদ পরিবহনের সুপারভাইজার ছিলেন।’
গতকাল সন্ধ্যায় দুর্ঘটনার বিষয়ে মাদারীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মাসুদ আলম বলেছেন, ‘অতিরিক্ত গতির কারণেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। বেপরোয়া গতিতে চালানোর কারণেই বাসটি এক্সপ্রেসওয়ে থেকে ছিটকে নিচে পড়ে যায়।’
এসপি জানান, দুর্ঘটনাকবলিত বাসটি সরাতে ঘটনাস্থলে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ। এ ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ওই বাসের যাত্রী গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী থেকে আসা যুবক উজ্জ্বল বলেন, ‘শুরু থেকেই বাসটি দ্রুতগতিতে চলছিল। এক্সপ্রেসওয়েতে যাত্রীদের অনেকেই নিশ্চিন্তে ঘুমিয়েছিলেন। কেউ কেউ চোখ বন্ধ করে ঝিমাচ্ছিলেন। দুর্ঘটনার সময় কিছুই টের পাইনি। জ্ঞান ফিরলে দেখি, চারপাশে রক্ত এবং লাশ। উঠে বসতে গেলে মাথা ঘুরে পড়ে যাই। পরে কিছুটা সুস্থ বোধ করলে চারপাশে বোঝার চেষ্টা করি। তখন টের পাই, ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে গেছে! সড়ক থেকে গাড়ি উল্টে নিচে পড়ে দুমড়ে-মুচড়ে গেছে।’
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন হাইওয়ে পুলিশের অ্যাডিশনাল আইজি সাহাবুদ্দিন খান, হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি হাবিবা বিনতে সালমা, ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলামসহ স্থানীয় জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।