নিজস্ব প্রতিবেদক: বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) প্রতিবছর সমাপ্ত হয় শতাধিক প্রকল্প। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক থাকে শিক্ষা খাতের প্রকল্প। আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অধীনে ৩১টি প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে। এজন্য প্রয়োজন অনুযায়ী শতভাগ বরাদ্দ নিশ্চিত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, আগামী অর্থবছরের এডিপি প্রণয়নের কাজ এরই মধ্যে শুরু করেছে পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগ। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কাছে প্রস্তাব চাওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ তাদের প্রস্তাব পাঠিয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এ প্রসঙ্গে আগামী বাজেটের প্রাক্কলন এবং ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রক্ষেপণের ওপর ত্রিপক্ষীয় সভাও এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। আগামী অর্থবছরে সমাপ্য ৩১টি প্রকল্পের জন্য তিন হাজার ১৩৯ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে দুই হাজার ৭৬৩ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে আর ৩৭৬ কোটি টাকা প্রকল্প সাহায্য থেকে বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে প্রস্তাবনায়।
সূত্রমতে, এসব প্রকল্পের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে মাধ্যমিক শিক্ষা খাতের জন্য। মাধ্যমিক শিক্ষা খাতের বিনিয়োগ প্রকল্পের (সেসিপ) জন্য সরকারি খাত থেকে এক হাজার ২২৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া সেকেন্ডারি এডুকেশন কোয়ালিটি অ্যান্ড অ্যাকসেস এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট বা সেকেপ নামের মাধ্যমিক শিক্ষা-সংক্রান্ত অপর একটি প্রকল্পে ৩৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দের পরামর্শ দেওয়া হয়, যার ৩১৭ কোটি টাকা বিদেশি প্রকল্প সহায়তা থেকে আসবে বলে জানানো হয়েছে। মাধ্যমিক শিক্ষা উপবৃত্তির দ্বিতীয় পর্যায়ের জন্যও ২৫২ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়।
বিদেশি প্রকল্প সহায়তা থেকে প্রস্তাবিত ৩৭৬ কোটি টাকার মধ্যে ৩১৭ কোটি টাকা মাধ্যমিক শিক্ষা উন্নয়নের ওই প্রকল্পের জন্যই খরচ করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া কয়েকটি বাছাইকৃত মাদ্রাসার শিক্ষা পরিবেশ উন্নয়নের জন্য ২০১৩ সালের একটি প্রকল্প এ বছরের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা। ওই প্রকল্পের জন্য ১৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা প্রকল্প সহায়তা চাওয়া হয়েছে। শিক্ষকতার মান বৃদ্ধির জন্য (টিওটি-২) প্রকল্পের জন্য প্রকল্প সহায়তা চাওয়া হয়েছে ৪১ কোটি টাকার মতো। এছাড়া অন্যান্য বড় প্রকল্পের জন্য মূলত সরকারি খাত থেকেই বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
সরকারি খাত থেকে বরাদ্দের জন্য প্রস্তাবিত প্রধান প্রকল্পগুলোর মধ্যে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ ১২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যলয়ের উন্নয়ন প্রকল্প রয়েছে। এর মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য ৪৭ কোটি ২৮ লাখ টাকা, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের প্রথম পর্যায় বাবদ ১৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি একাডেমিক ভবন ও একটি মিলনায়তন নির্মাণসংক্রান্ত অপর একটি প্রকল্পে ১৬ কোটি ৩৬ লাখ টাকা, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য পাঁচ কোটি, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নে প্রায় ২১ কোটি টাকা, বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে ২০ কোটি টাকা, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ২২ কোটি ২১ লাখ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সাড়ে ৫৮ কোটি টাকা, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিপ মডেলিং টেস্টিং সেন্টার স্থাপনের জন্য প্রায় ১৩ কোটি টাকা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের জন্য ২০ তলা আবাসিক শহীদ শেখ রাসেল টাওয়ার ভবন নির্মাণের জন্য ২৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ উন্নয়ন অনুষদের বাহ্যিক অবকাঠামো সৃষ্টির জন্য সাত কোটি ৭৪ লাখ টাকা বরাদ্দ প্রস্তাবিত হয়েছে।
শিক্ষা-সংক্রান্ত অন্যান্য প্রকল্পের মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে ১১টি স্কুল ও ছয়টি সরকারি কলেজ নির্মাণ প্রকল্পে ৪৫ কোটি, মাদারীপুরের কালকিনি সৈয়দ আতাহার আলী একাডেমির উন্নয়নে সাড়ে আট কোটি, টাঙ্গাইলের সখিপুর আবাসিক মহিলা কলেজে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা ছাত্রীনিবাস নির্মাণ প্রকল্পে চার কোটি ৭৭ লাখ টাকা শেখ হাসিনা একাডেমি ও উইমেন্স কলেজের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে সাত কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এছাড়া বাছাইকৃত কিছু বেসরকারি মাদ্রাসায় শিক্ষা ভবন নির্মাণে ৪১ কোটি এবং মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজ, লালমাটিয়া মহিলা কলেজ ও আগারগাঁও তালতলা সরকারি কলোনি হাইস্কুল ও কলেজ নির্মাণ প্রকল্পে দুই কোটি ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়। এদিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের জন্য ১০ কোটি টাকা সরকারি তহবিল বরাদ্দ চাওয়া হয়।
Add Comment