মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থী অনুপাতে কমছে শিক্ষক

আবদুল হাকিম আবির: ২০১০ সালে প্রণীত জাতীয় শিক্ষানীতিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত নির্ধারণ করা হয় ১:৩০। ২০১৮ সালের মধ্যে তা বাস্তবায়নের কথা বলা ছিল। তবে মাধ্যমিক স্তরে তা উল্টোপথে চলছে। বর্তমানে এ স্তরে শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষকসংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমছে। শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও শিক্ষক না বাড়ায় এ অবস্থা হচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১১ সালে মাধ্যমিক স্তরে প্রতি ৩০ শিক্ষার্থীর জন্য ছিলেন একজন শিক্ষক। ২০১২ সালে এসে এ হার অনেকটা বেড়েছে। এ বছর প্রতি ৩৬ শিক্ষার্থীর জন্য ছিলেন একজন শিক্ষক। ২০১৩ সালে ৩৭ শিক্ষার্থীর বিপরীতে ছিলেন একজন শিক্ষক। আর ২০১৪ ও ২০১৫ সালে যথাক্রমে ৩৯ এবং ৪১ শিক্ষার্থীর বিপরীতে ছিলেন একজন শিক্ষক।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীর এ আনুপাতিক হারকে শিক্ষাব্যবস্থার আধুনিকায়নের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ। শেয়ার বিজকে তিনি বলেন, ছাত্র-শিক্ষকের অনুপাতের কাক্সিক্ষত অবস্থা থেকে আমরা এখনও অনেক দূরে। শিক্ষকের চেয়ে আমাদের শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি। এজন্য শিক্ষক বাড়াতে হবে, তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করতে হবে, ক্লাসরুম বাড়াতে হবে। রাষ্ট্রীয় অনেক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও এ বিষয়ে যদি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করে, তাহলে শিক্ষাব্যবস্থায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করা যাবে না।

ব্যানবেইসের তথ্যমতে, জেলাভিত্তিক হিসাবে মাধ্যমিকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত বিবেচনায় সবচেয়ে পিছিয়ে হবিগঞ্জ। এখানে প্রতি ৭১ শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছেন একজন শিক্ষক। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রতি ৬৮ শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছেন একজন শিক্ষক। এরপর ৬৭ ছাত্রের জন্য একজন শিক্ষক নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সুনামগঞ্জ। শরীয়তপুরে রয়েছে প্রতি ৬২ শিক্ষার্থীর জন্য একজন করে শিক্ষক। ৬১ শিক্ষার্থীর জন্য একজন করে শিক্ষক রয়েছেন চাঁদপুর ও কিশোরগঞ্জে।

জেলাভিত্তিক বিবেচনায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে ঢাকা, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও। এ তিন জেলায় প্রতি ২৭ শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন করে শিক্ষক রয়েছেন। ২৮ শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন শিক্ষক নিয়ে এরপর রয়েছে কুড়িগ্রাম। প্রতি ২৯ শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন করে শিক্ষক নিয়ে তারপরই আছে ফিরোজপুর, যশোর, রাজশাহী ও দিনাজপুর।

শিক্ষাবিদরা মনে করেন, শিক্ষার বিভিন্ন সূচকে দ্রুত এগিয়ে গেলেও গুণগত শিক্ষার মান নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। এর নেপথ্যের কারণ প্রশিক্ষিত শিক্ষকের সংখ্যা কমছে। আর প্রশিক্ষিত শিক্ষকের অভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে শ্রেণিকক্ষের পাঠদানেও। বিষয়টি উঠে এসেছে ব্যানবেইসের প্রতিবেদনেও।

এতে বলা হয়েছে, ২০১১ সালে মাধ্যমিক স্তরে প্রশিক্ষিত শিক্ষকের হার ৭৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ থাকলেও ২০১৫ সালে তা ৬৫ দশমিক ১৬ শতাংশে নেমে আসে। অবশ্য ২০১৪ সালে এ হার ছিল ৬২ দশমিক ৩২ শতাংশ। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষিত শিক্ষক ২০১০ সালে ৬৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ, ২০১২ সালে ৭২ দশমিক ৭০ শতাংশ ও ২০১৩ সালে ৭৩ দশমিক ৮০ শতাংশ ছিল।

প্রশিক্ষিত শিক্ষক সংকটের কারণে মানসম্পন্ন মাধ্যমিক শিক্ষাদান ব্যাহত হচ্ছে বলে মনে করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী। তিনি বলেন, গুণগত শিক্ষা অর্জনের জন্য ল্যাবরেটরি, লাইব্রেরি, মালটিমিডিয়া ক্লাসরুম, অবকাঠামোসহ অনেক বিষয়ের সঙ্গে প্রয়োজনীয়সংখ্যক প্রশিক্ষিত শিক্ষকেরও দরকার রয়েছে। প্রশিক্ষিত শিক্ষক না থাকলে শিক্ষার গুণগত মান অর্জনে ঝুঁকি থেকে যায়। এজন্য বাজেটে শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়িয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতো মাধ্যমিকেও সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা দরকার।

 

 

 

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০